দেলওয়ার এলাহী
প্রখ্যাত সুরকার আলী হোসেন ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা ১৬ মিনিটে বোস্টনের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। [ ইন্নাল ইল্লা হি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন। ] আগামী মার্চ মাসের ২৩ তারিখ হলে তিনি একাশি বছর পূর্ণ করতেন। স্বাধীনতা পূর্ব ও স্বাধীন বাংলাদেশের শিল্পীরা আলী হোসেন ও তাঁর সতীর্থদের সুরেই সংগীত জগতে প্রতিষ্টা লাভ করেন। কে না গান গেয়েছেন আলী হোসেনের সুরে! আব্দুল আলীম, শাহজাদি আঞ্জুমান আরা বেগম, ফেরদৌসী বেগম [ পরবর্তীতে রহমান ] আব্দুল জব্বার, খোন্দকার ফারুক আহমেদ, রথীন্দ্রনাথ নাথ রায়, মাহমুদুন্নবী, শাহনাজ বেগম [ পরবর্তীতে রহমতুল্লাহ ] রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, সৈয়দ আব্দুল হাদী, খুরশীদ আলম, সুবীর নন্দী, এণ্ড্রু কিশোর প্রমুখ প্রখ্যাত শিল্পীরা আলী হোসেনের সুরে চলচ্চিত্র, রেডিও ও টেলিভিশনে গান গেয়েছেন। শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছেন।
আলী হোসেনের বাবা মোহাম্মদ ইয়াকুব। মোহাম্মদ ইয়াকুব সংগীত শিল্পী ছিলেন৷ সঙ্গীত ছিল তাঁর শখের সাধনা। তিনি ছিলেন সরকারি চাকুরীজীবি। গান ভালবাসেন বলে শিল্প সাহিত্য সঙ্গীত জগতের অনেক দিকপাল মোহাম্মদ ইয়াকুবের বন্ধু ছিলেন৷ শেখ লুৎফর রহমান, এস এম সুলতান, দেবু ভট্টাচার্য, খান আতাউর রহমান মোহাম্মদ ইয়াকুবের খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। এস এম সুলতান ও মোহাম্মদ ইয়াকুব ছিলেন হরিহর আত্মার বন্ধু। মোহাম্মদ ইয়াকুবকে ওস্তাদজী বলে সম্বোধন করতেন সবাই। এরকম শিল্প সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের পরিবেশেই আলী হোসেন ও তাঁর ভাইবোনেরা বড় হয়ে উঠেছেন। সংগীতের চর্চা করেছেন। সংগীতের বিভিন্ন যন্ত্রের বাদনে দক্ষতা অর্জন করেছেন। এবং সুর সৃষ্টির জগতে প্রবেশ করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অতএব, পারিবারিক সূত্রেই আলী হোসেন সুরের জগতের মানুষ। করাচীতে থাকাকালীন প্রতি শনিবার আলী হোসেনের বাবা মোহাম্মদ ইয়াকুবের বাড়িতে সাংস্কৃতিক আড্ডার আয়োজন হতো। সেই বাড়িতে এসে গান গেয়েছেন আমানত আলী, ফতেহ আলী, রাজাকাত আলী, আহমেদ রুশদী, মেহেদী হাসান, মাসুদ রানা, মালা প্রমুখ শিল্পীবৃন্দ। এদের অনেকেই আলী হোসেনের সুরে গান গেয়েছেন।
সঙ্গীতের জগতে আলী হোসেন পরিবারের পাঁচ ভাই প্রতিষ্ঠিত। যেমন : আলী হোসেন, গোলাম হোসেন লাডু, তারিক হোসেন, জাহিদ হোসেন ও আবিদ হোসেন। বাংলা উর্দু অসংখ্য চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি। অসামান্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও বাংলা সঙ্গীতে অনন্য অবদান রাখা আলী হোসেন মৃত্যুর আগে কোন রাষ্ট্রীয় সম্মান পাননি। এই লজ্জা আমাদেরকে বহন করতেই হবে। এবারই স্বাধীনতা পদক দিয়ে রাষ্ট্র এই লজ্জা থেকে আমাদেরকে পরিত্রাণ দিতে পারেন। সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে এই আমার দাবী।
আলী হোসেনের এক সন্তান। আসিফ হোসেন। আসিফ তার পরিবার নিয়ে বোস্টনে বসবাস করেন। আলী হোসেন একমাত্র সন্তানের সেবাযত্ন পেয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন। বোস্টন স্থানীয় সময় ১৭ ফেব্রুয়ারী বাদ যোহর আলী হোসেনের নামাজে জানাযার আয়োজন করা হয়েছে। জানাযা শেষে তাঁকে বোস্টনেই দাফন করা হবে। বাংলা সংগীত জগতে অসামান্য অবদানের জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে সম্মান জানিয়ে সুরকার আলী হোসেনের প্রতি দূর থেকে আমি বিদায়ী অভিবাদন জানাই। শ্রদ্ধা জানাই।