এম. হাবিব উললা (দুলাল)
আমরা যদি সচেতন থাকি তাহলে যে কোন অসুখ বা মহামারী আর দূর্যোগের সম্মুখীন হলেও তা’ সামাল দেয়া খুবই সহজ একটি বিষয়। কিন্ত এই সচেতনতার দারুণ অভাব দৃশ্যমান এখানে। আমার বক্তব্য বর্তমান কোরোনা (Corona Virus Disease – সংক্ষেপে: COVID-19) সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে। অর্থাৎ কোরোনা গতো এক মাস যাবত সমগ্র বিশ্বময় বযে “Pandemic”-এর তান্ডব ছড়িয়ে এক আতংকের সৃষ্টি করেছে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এখন।
এই ভয়াবহ অবস্থাটি যে কী বাংলাদেশ নামক জনপদের সাধারণ জনগণ তা’ হৃদয়ঙ্গম করেছে? এই দেশে বসে বিগত এক মাসের অধিককাল যাবত পর্যবেক্ষণ করে মনে হয়েছে অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক জনগণের মাঝে তা সঞ্চার হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০ দিনের সরকারি ছুটি এবং “লক ডাউন” ঘোষণা করা হয়। (March 26-April 4th) নিচের ছবিটি সাম্প্রদায়িক কালের ফেরী ঘাটের দৃশ্য। এতে দেখা যায় জনতা যেন ঈদের ছুটি পেয়েছে এবং তা উপভোগের জন্য বাস, ট্রেন, ট্রাক, লঞ্চে নৌকায় ঢল। এমনকি পাঁয়ে হেঁটেও। এক একটি যানবাহনে উপচে পড়া ভীড়। ঠিক ঈদের ছুটিতে যেমনটি হয়ে থাকে। অথচ সভা সমাবেশ এবং জনসমাগম নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
ওদিকে সরকারি মন্ত্রীরা এবং রাজনৈতিক নেতারা নির্ভিগ্নে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আর প্রচারণা চালাচ্ছেন বিরতিহীন। ধর্মীয় মতবাদের সম্পূর্ণ সন্মান রেখে বলছি, মসজিদে প্রতি বেলা এবং জুমা নামাজে সমাবেশও চলছে পূর্বের রীতিতে। কিন্তু বোধোদয় হচ্ছে না কারোরই। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সীমিত আকারে করা উচিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যা নিজের এবং সমগ্র মানব জাতির কল্যাণের জন্য। ভাইরাস কি? এটি (Virus) হল একপ্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা বা অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভিতরেই মাত্র বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এরা অতি-আণুবীক্ষণিক এবং অকোষীয়।
সংবাদমাধ্যমে জানা যায় পাকিস্তানে গত কিছুদিন আগে এক মসজিদের ইমাম সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জুমার নামাজের আয়োজন করায় তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। শুক্রবারে এখানে মসজিদে,মসজিদে হাজার মানুষ একসঙ্গে জামা’তে নামাজ পড়ে অদৃশ্য কোরোনার বিরুদ্ধে মিছিলের আয়োজন পর্যন্ত করছেন! কারণ তাদের ঈমানের জোর সৌদি (ধারণা পবিত্র) আরব, পাকিস্তান, ইরাক ইরান এমন কি বিশ্বের তাবৎ মুসলিমদের ঈমান আকিদার জোরের চেয়েও টপ লাইনে আছে এরা।
সৌদি আরবে কাবা শরীফ বন্ধ করা হয়েছে এবং মসজিদ আল হারামেও নামাজ অনেক আগে, কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সেখানে জুমার নামাজের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আছে, এমন কি আজানের বাণীতে পরিবর্তন এনে বলা হচ্ছে নামাজের জন্য মসজিদের জামাতে নয়, মুসল্লিরা ঘরে বসেই নামাজ পড়ুন। এ নিয়ে সেখানকার জনগন সৌদি বাদশার বিরুদ্ধে মিছিল ও সমাবেশ করেন নি, নিজেদের জীবন বাঁচানোর তাগিদে তারা সব মেনে নিয়েছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, গতো ৩১শে মার্চ নিউইয়র্কে স্বাভাবিকভাবে না ফেরার দেশে চলে গেছেন আমার বড় ভাই। কিন্তু সমাবেশে সরকারি নিষিদ্ধতার কারণে এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কারণে আজ (April 4, 2020) অবধি ধর্মীয় শেষকৃত্ত সমাপন সম্ভব হয় নি। অথচ কোরোনার জন্যে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত।
আমরা বিশ্বের এমন একটি ঘন বসতির দেশ, দেখুন (বাংলাদেশের জনসংখ্যা 164,278,025 as of April 1, 2020, based on Worldometer and density is 1165 people per sq km.)(আমি চাই না এমন হোক) যদি এই ভূখন্ডে মহামারী লেগে যায় তখন শুধু মৃত্যুর মিছিল শুরু হবে। কারও পক্ষে এটা ঠেকানো সম্ভব হবে না। কারণ এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। ছোঁয়াচুয়ি থেকেই এই রোগের সংক্রমণ হয়। কাজেই উপরোক্ত বিভিন্ন সমাবেশ থেকে এর বিস্তার অবশ্যম্ভাবী। সেজন্যে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (WHO) থেকে বাংলাদেশের সমাবেশগুলো নিষিদ্ধ করার জন্যে বারবার করে সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এপ্রিল ৪ তারিখ পর্যন্ত সরকারি লক ডাউন ছিলো এখন সেটি বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই লক ডাউন উঠে গেলেই যে আমরা নিরাপদ তা’ ভাবার কোন অবকাশ নেই।
আরও একটি আশংকাজনক বিষয় হলো সরকারি লক ডাউন উঠে গেলেই পূর্বের ন্যায় আবারও শুরু হবে ছুটি কাটিয়ে ফিরে আসা জনস্রোতের ঢল। তখন আর একবার শুরু হবে এই কোরোনা সংক্রমণ। কাজেই আগে থেকেই এই ভাইরাস যাতে না ছড়াতে পারে এই দিকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তা’ সরকারি এবং ব্যক্তিগত উভয় পর্যায়েই। বিশ্ব জুড়েই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ হাজারের বেশি আক্রান্তের। এর মধ্যে শুধুমাত্র ইটালিতেই মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষের। বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যাও ছাড়িয়ে গিয়েছে ৭ লক্ষের গণ্ডি। সংক্রমণ বন্ধ করতে কার্যত হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা আশা প্রকাশ করেছেন এপ্রিলের শেষ নাগাদ কোরোনা সংক্রমণ রোধের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরাও আশাকরি এমন একটি নতুন ভোরের।
এই অমানিষা অচিরেই কেটে যাবে।