প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, মেগা প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে এবং তা থেকে কী ধরনের উপার্জন হবে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়।
শনিবার (১৩ মে) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) ৬০তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে পরিকল্পনা গ্রহণ করি, সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই—ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষের কতটুকু উপকার হবে এবং তা থেকে আমরা কতটা উপার্জন করতে পারব।’
‘অহেতুক বড় বড় প্রকল্প আমরা নিই না। অনেকেই মেগা প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু, আজকে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং এর সুফল মানুষ ভোগ করছে। তখন যারা টকশোতে সমালোচনা করেছিলেন, তারা এখন কী জবাব দেবেন, সেটা আমার জানতে ইচ্ছে করে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো দেশ বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে কোনো প্রকল্প প্রস্তাব দিলে আমি কিন্তু সে প্রকল্প গ্রহণ করি না। সেটা আপনাদের আমি জানিয়ে দিচ্ছি। সেটা আমি করবও না। আমার দেশের জন্য প্রযোজ্য যেটা, আমরা সেটাই করব।’
সামরিক শাসকদের সময়ে প্রকল্পের নামে টাকা লুট হতো, অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামরিক শাসকদের সময় কী ছিল—অনেক টাকা দিয়ে প্রজেক্ট বানিয়ে, ওই টাকা পরের কাছে তুলে দেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে কমিশন খাওয়া! আমার দেশের টাকা আমি তুলে দেব আরেকজনের হাতে? আর তার কাছ থেকে আবার কমিশন খাব? ঘুষ নেব? এ ধরনের মানসিকতা কেন থাকবে! এটা তো আত্মহননের শামিল। বরং একটা টাকা বাঁচাতে পারি কি না, সেই চেষ্টাটাই করতে হবে।’
অনেক দেশ পদ্মা সেতুর মতো সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায়, দাবি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে শুধু সক্ষমতা দেখাইনি, আমাদের যারা সেখানে কাজ করেছে, প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সবারই অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয়েছে।’
‘এখন অনেক দেশ আমাদের কাছে আসছে। ব্রাজিল আমাজনে ব্রিজ বানাতে চায়। আমরা বলেছি, আমাদের লোকজন রেডি আছে, যখনই দরকার আমরা সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটা সিদ্ধান্ত আমি নিতে বলেছি। এখন আবার ওই স্যাংশন দেওয়ার একটা প্রবণতা, যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করি, তাদের ওপর স্যাংশন। আমি বলে দিয়েছি, যে দেশ স্যাংশন দেবে, তাদের কাছ থেকে আমি কিচ্ছু কিনব না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমার কী করবে? বাবা-মা, ভাই-বোন সব মেরে ফেলে দিয়েছে। আমার তো হারাবার কিছু নেই। কিন্তু, আমি আমার দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রকৌশলীসহ সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা (আওয়ামী লীগ সরকার) ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করব, আগামীতে এ উন্নয়নের ধারা যেন চলমান রাখতে পারি, সেই বিষয়ে সবাই আন্তরিক থাকবেন। সেভাবে আপনারা কাজ করবেন।’
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। যেখানে থাকবে স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট উৎপাদন ব্যবস্থা। চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে দেশের মানুষ স্মার্ট হবে, সেটাই আমরা চাই। দক্ষ জনগোষ্ঠী আমরা গড়ে তুলতে চাই। কোনো জায়গা থেকে আমরা পিছিয়ে থাকব না।’
প্রকৌশলীদের দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যেখানে কাজ করবেন, নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আত্মমর্যাদা নিয়ে, দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কাজ করতে হবে।
আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন—আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন (শিবলু), আইইবি ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোল্লা মোহাম্মদ আবুল হোসেন, সম্মানীয় সম্পাদক প্রকৌশলী কাজী খায়রুল বাশার।