‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের পুরো অর্থ পেতে বেশ কিছু সংস্কারের শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক শর্ত পরিপালন করা সম্ভব হলেও কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। কিছু লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য জুন পর্যন্ত সময় পাওয়া যাবে। আবার কিছু পূরণের সময় দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত। আমরা আশাবাদী এসময়ের মধ্যে সবগুলো শর্তই পূরণ করতে পারব’।
রোববার (০৭ মে) আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, আইএমএফ’র ঋণের প্রথম কিস্তি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পেয়েছে। এরই মধ্যে আবারও বাংলাদেশ সফর করছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল, কয়েক দফায় আলোচনাও হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে। আইএমএফ ঘোষিত ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির বিষয়ে এবার আলোচনা হয়নি। আইএমএফ প্রতিনিধি দল তাদের শিডিউল সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্কারের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই ঋণের একক সুদ হার উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীতে সুদের হার গণনা করা হবে স্মার্ট পদ্ধতিতে, যা মুদ্রানীতিতে ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংস্থাটি আমাদের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে দ্বিমত করেনি। তবে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়টা আরও পরে। আইএমএফ মিশন দল আগামী অক্টোবরে আবারও বাংলাদেশ সফরে আসবে, তখন এ বিষয়ে জানা যেতে পারে। কারণ সেটিই হবে মূল মিটিং।
মেজবাউল হক বলেন, ডলারের একক এক্সচেঞ্জ রেট প্রায় বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেই দরে ডলার বিক্রি করছে এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক যে দামে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয় সংগ্রহ করছে তার মধ্যে পার্থক্য অলমোস্ট দুই শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী, এই পার্থক্য ২ শতাংশের মধ্যে থাকলেই তাকে সিঙ্গেল এক্সচেঞ্জ রেট বলা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরও বলেন, এখনো তিনটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথমটি কোভিড, দ্বিতীয়টি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং তৃতীয়টি বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি। এ সমস্যার সমাধান কবে হবে সেটা কেউই বলতে পারবে না। সংকট মোকাবিলায় সময়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়াও আগামীতে বেশ কিছু বিষয় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানিসহ পণ্যদ্রব্যে মূল্য বেড়েছে, তাই দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এছাড়া আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ আসছে সামনে। এটা হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সবসময় দেখা যায়, নির্বাচনী বছরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যায়। সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এখন আগামীতে আমাদের পরিস্থিতি কী হবে, তা সময় বলে দেবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জন্য গত জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের শেষ দিকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য আইএমএফের শর্ত কতটুকু বাস্তবায়ন বা অগ্রগতি হয়েছে তা দেখতে সংস্থাটির প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। আইএমএফ দলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছে।