রেজাউল ইসলাম: এই নির্বাচনটি ইতিমধ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুই বছর বাকি থাকতেই প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। উদ্দেশ্য, তার মাইনোরিটি সরকার এই নির্বাচনের মাধ্যমে ম্যাজরিটি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। তাই এই নির্বাচন ট্রুডোর জন্য এক ধরনের রেফারেন্ডাম বলা চলে। ট্রুডোর মাইনোরিটি সরকার এই নির্বাচনের পর আবার মাইনোরিটি আসনে জয়ী হলে ট্রুডো নিঃসন্দেহে ব্যাপক সমালোচনার সম্মূখীন হবেন। কারণ, পুনরায় মাইনোরিটি মানে একটি ব্যয় বহুল অর্থহীন নির্বাচনের দায় বহন করা। ইতিমধ্যে প্রায় সবগুলি জনমত জরিপ আভাস দিচ্ছে দুটি বড় দলের মধ্যে কোনটিই ম্যাজরিটি পাবে না। তবে এই সব জনমত জরিপ র্যান্ডাম স্যাম্পলিংয়ের মাধ্যমে করায় অনেক সময়ই বাস্তবে এর প্রতিফলন হয় না। অতীতে অনেক ক্ষেত্রেই জনমত জরিপের বিপরীত ফলাফল দেখা গেছে।
ট্রুডো মূলতঃ প্যান্ডামিকের সময় তার অর্জিত সাফল্যকে পুজি করে ম্যাজরিটি পাবার প্রত্যাশা করছেন। এর স্বপক্ষেই তিনি এই ৩৬ দিন তার ক্যাম্পেইনে বলার চেষ্টা করেছেন যে, এই প্যান্ডামিক থেকে কানাডাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য লিবারেল সরকার ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। এই বিষয়টির উপরেই তিনি বেশ জোর দিয়েছেন। অপর দিকে, কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতা এরিন ও’টুল এই প্যান্ডামিকের সময় নির্বাচন দেওয়ার জন্য ট্রুডোকে স্বার্থপর বলে অবিহিত করছেন। তিনি মূলতঃ এই বিষয়টকেই তার ক্যাম্পেইনে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, কানাডা এখনো মহামারী কাটিয়ে উঠে অর্থনীতির স্থবিরতা থেকে বের হতে পারে নি। এই অবস্থায় ব্যয় বহুল নির্বাচন একটি হটকারী সিদ্ধান্ত। এই দুই দলের এমন প্রচারণার পর আজ ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ হতে যাচ্ছে ভোটাররা আসলে কোন দিকের পাল্লা ভারি করবেন। তবে আনডিসাইডেড ভোটাররা ফলাফলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এরা মূলত দলের চেয়ে হেলথ কেয়ার, প্যান্ডামিক, Affordability and cost of living এর উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
যে পার্টির কর্মসূচি বা পলেসিতে তূলনামূলকভাবে এই সব বিষয়ে ভালো অংগিকার থাকে সেই পার্টিকেই এই আনডিসাইডেড ভোটাররা শেষ মূহুর্তে ভোট দিতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবার আনডিসাইডেড ভোটার মোট ভোটারের ১৩ শতাংশ। উল্লেখ্য যে, আনডিসাইডেড ভোটাররা জনমত জরিপের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই আনডিসাইডেড ভোটারদের মধ্যে একটি বড় অংশ শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে গেলে জনমত জরিপের অনেক হিসাব পাল্টে যেতে পারে। এবার পোস্টাল ভোট দানের ব্যবস্থা থাকায় এটিও নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলবে। এক জনমত জরিপে দেখা যায়, ৪৭% মেইল(Absentee) ভোট লিবারেল পার্টির একাউন্টে , ২৬% এনডিপির একাউন্টে এবং ১২% কনজার্ভেটিভ পার্টির একাউন্টে পড়তে পারে।
এছাড়া আরো কয়েকটি ফ্যাক্টর এই নির্বাচনে প্রভাবক হিসাবে দেখা দিচ্ছে। লিবারেল পার্টি এবং এনডিপি ideologically কাছাকাছি হওয়ায় এনডিপি লিবারেলের ভোট কর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে। আবার পিপলস পার্টির জনপ্রিয়তা সম্প্রতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পার্টি কনজার্ভেটিভ পার্টির কাছাকাছি আইডিওলজির হওয়ায় কনজার্ভেটিভ পার্টির ভোট কাটতে পারে। কুইবেকে গত নির্বাচনে লিবারেল পার্টি পেয়েছিল ৩৫ টি সিট,Bloc Québécois পেয়েছিল ৩২ টি সিট আর কনজার্ভেটিভ পার্টি পেয়েছিল ১০ টি সিট। এবারের নির্বাচনের আগে কুইবেকের প্রিমিয়ার François Legault কনজার্ভেটিভ পার্টিকে ভার্চুয়ালি সমর্থন দেওয়ায় এখানে লিবারেলের ভোট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই নির্বাচন লিবারেল মাইনোরিটি সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ট্রুডোর জন্য ম্যাজরিটি ছাড়া আরেকটি মাইনোরিটি পাওয়া মানে পরাজয়ের সামিল। দেখা যাক, নির্বাচনের ফলাফল কার মুখে শেষ পর্যন্ত হাসি ফুটায়।
( সংযুক্ত জনমত জরিপটি গতকাল প্রকাশিত নানোস পোল থেকে নেওয়া)