১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মধ্যম বিনাজুরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া। তার ছড়াগুলো বুদ্ধিদীপ্ত, তীক্ষ্ণ ও শানিত, কিন্তু কোমল শব্দে লেখা। আজ এই ছড়াকারের ৮৪তম জন্মদিন।
বাবা সর্বানন্দ বড়ুয়া। মা কিরণ বালা বড়ুয়া। বাবা-মায়ের তিনি ১৩তম সন্তান। চট্টগ্রামের গহিরা গ্রামের শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র বড়ুয়ার মেয়ে ননী বালার সাথে ১৯৬৪ সালের ২১ এপ্রিল তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিন মেয়ে এবং এক ছেলের জনক।
যেমন-
‘শাখা’ শিরোনামের ছড়াটি এই রকম:
ক-শাখা, খ-শাখা/গ-শাখা, ঘ-শাখা/দুপুরের ছুটিতে/নুন দিয়ে শশা খা/পরীক্ষায় ফেল হলে/হাঁ করে মশা খা।
‘ডাটা সংবাদ’ শিরোনামের আরেকটি ছড়া:
পুঁইয়ের ডাঁটা লাউয়ের ডাঁটা/বায়োডাটার ঝোল,/ডাটা প্রসেস করতে হলে/কম্পিউটার খোল। /ডাঁটার পাগল বুড়োবুড়ি/ক্যালসিয়ামে ভরা,/শজনে ডাঁটায় গুণ বেশি তাই/বাজার ভীষণ চড়া। /উচ্চতর ডিগ্রি নিতে/ডাটাই পরম ধন,/সারা বছর খেটে করেন/ডাটা কালেকশন। /ডালের সাথে মাছের সাথে/যেমন ডাঁটা চলে,/গবেষকের ডাটা আবার/অন্য কথা বলে।
সুকুমার বড়ুয়ার বাংলা ছড়া সাহিত্যে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন নিজের বৈচিত্র্য, সরস উপস্থাপনা, ছন্দ ও অন্তমিলের অপূর্ব সমন্বয়ে। তার ছড়া একেবারেই স্বতন্ত্র। বাংলার ছড়াসাহিত্যে তিনি যে অন্যতম একজন- একথা নির্দ্বিধায়ই বলে দেওয়া যায়।
অথচ সুকুমার বড়ুয়া একজন স্বশিক্ষিত মানুষ। পড়াশোনার হাতেখড়ি মামাবাড়ির স্কুলে। এরপর বড়দিদির বাড়িতে এসে পড়েন দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। আর এগোয়নি। পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় অর্থনৈতিক সংকটে।
অল্প বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন সময় মেসে কাজ করেছেন। জীবন চালিয়ে নেওয়ার জন্য ফলমূল, আইসক্রিম, বুট ও বাদাম ইত্যাদি ফেরি করে বিক্রি করেছেন। ১৯৬২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে চাকুরি জীবন শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে তিনি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হন। ১৯৯৯ সালে স্টোর কিপার হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন।
সুকুমার বড়ুয়া তার সৃষ্টিশীল জীবনে ২৪টি পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও একুশে পদক অন্যতম।
তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- পাগলা ঘোড়া (১৯৭০, বাংলা একাডেমি), ভিজে বেড়াল (১৯৭৬, মুক্তধারা), চন্দনা রঞ্জনার ছড়া (১৯৭৯, মুক্তধারা), এলোপাতাড়ি (১৯৮০, বাংলা একাডেমি), নানা রঙের দিন (১৯৮১, শিশু একাডেমি), সুকুমার বড়ুয়ার ১০১টি ছড়া (১৯৯১, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র), চিচিং ফাঁক (১৯৯২, ওলট পালট প্রকাশনী), কিছু না কিছু (১৯৯৫, বিশাখা প্রকাশনী), প্রিয় ছড়া শতক (১৯৯৭, মিডিয়া), বুদ্ধ চর্চা বিষয়ক ছড়া (১৯৯৭, সৌগতঃ ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়), ঠুস্ঠাস্ (১৯৯৮, প্রজাপতি প্রকাশন), নদীর খেলা (১৯৯৯, শিশু একাডেমি), আরো আছে (২০০৩, আরো প্রকাশন), ছড়া সমগ্র (২০০৩, সাহিত্যিকা), ঠিক আছে ঠিক আছে (২০০৬, প্রবাস প্রকাশনী, লন্ডন), কোয়াল খাইয়ে (২০০৬, বলাকা, চট্টগ্রাম), ছোটদের হাট (২০০৯, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি), লেজ আবিষ্কার (২০১০, প্রথমা প্রকাশন)।