বাংলাদেশের কালজয়ী অমর একুশের সংগীত ’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’-এর রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী ৮৭ বছরে পা দিলেন।
তিনি বরিশালের উলানিয়ার সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথিতযশা এই লেখক ও সাংবাদিকের জন্ম।
বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত তার রাজনীতি, সমসাময়িক ঘটনা ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে লেখা কলাম অত্যন্ত জনপ্রিয়। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন সরকারের (মুজিবনগর সরকার) মুখপত্র ‘জয় বাংলা’ পত্রিকা তার সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যোগাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই নন্দিত সাংবাদিক যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবিতে ছিলেন দেশ-বিদেশে সোচ্চার।
মা জোহরা খাতুন। বাবা ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী ভূস্বামী হলেও ছিলেন ব্রিটিশশাসিত ভারতের একজন মুক্তিসৈনিক। তিনি বরিশাল জেলা কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সদস্য ছিলেন অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির। ১৯৪২ সালের আগস্ট আন্দোলনের সময় তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। তদানীন্তন কংগ্রেসনেতা মতিলাল নেহেরুর সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেছেন ওয়াহেদ চৌধুরী।
গাফফার চৌধুরী ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। এরপর ঢাকার বিভিন্ন কাগজে সাংবাদিকতা করেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটিই তাকে খ্যাতি এনে দেয়। বিবিসি বাংলা বিভাগের দর্শকদের জরিপে এই গান বাংলা গানের ইতিহাসে তৃতীয় সেরা গানের মর্যাদা পেয়েছে।
স্বাধীনতার পর, ১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি সপরিবারে লন্ডনে চলে যান। সেখানে ‘নতুন দিন’ নামে একটি পত্রিকা বের করেন। প্রায় ৩৫টি বই লিখেছেন তিনি। নিয়মিত কলাম লিখছেন ঢাকা ও কোলকাতার বিভিন্ন দৈনিক ও অনলাইনে; বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের ওপর গাফফার চৌধুরী একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন, ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’। বঙ্গবন্ধুর ওপরেই আরেকটি চলচ্চিত্র, ‘দ্য পোয়েট অব পলিটিকস’ প্রয়োজনা করছেন তিনি।
কাজের স্বীকৃতির জন্য জীবনে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। উল্লেখযোগ্য হল, বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৭), একুশে পদক, ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার এবং স্বাধীনতা পদক (২০০৯)।
এই জীবন্ত কিংবদন্তির ৮৭তম জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।