প্লাস্টিকের বোতলের ঢাকনা দিয়ে তৈরি প্রতিকৃতি, রঙিন কাগজের টুকরো বা অসংখ্য তার৷ তুরস্কের শিল্পী ডেনিস সাগডিচ আবর্জনা থেকে শিল্প সৃষ্টি করে নিজের লক্ষ্য পূরণ করেন৷ দৈনন্দিন জীবনের নানা বস্তুকে শিল্পকর্মে রূপান্তরিত করে তিনি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেন তিনি৷
ইস্তানবুলে নিজের স্টুডিওতে প্রতিকৃতি সৃষ্টি করেন তিনি৷ ইন্টারনেটে উপযুক্ত মুখচ্ছবির সন্ধান করেন৷ সবার আগে এক দশমিক ৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের এক খসড়া তৈরি হয়৷ তারপর মূল কাজ শুরু করেন ডেনিস৷ নিজের কাজের প্রক্রিয়ার বর্ণনা করে ডেনিস বলেন, ‘‘সবার আগে আমার মস্তিষ্ক ফটো নিয়ে খেলা করে৷ তারপর আমি সেই খেলা বিশ্লেষণ করি৷ প্রতিকৃতি ডিজাইন করার আগে আমি সাদা-কালো ফটোগ্রাফি থেকে প্রেরণা নেই৷ প্রথমে কোনো রঙিন অংশ ব্যবহার করি না৷ আসলে কাজ অনেকটা পাজলের মতো হয়৷”
ডেনিসের স্টুডিওর পাশেই উপকরণের গুদাম৷ সেখানে কেবেল, তার, চামড়া বা অ্যালুমিনিয়ামের টিনের মতো নানা ধরনের বস্তুর স্তূপ চোখে পড়ে৷ শহরের জঞ্জাল নিকাশি সংস্থা বা বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে তিনি উপকরণ সংগ্রহ করেন৷ ডেনিস সাগডিচ বলেন, ‘‘আমি টেক্সটাইল বর্জ্যের মতো নানা রকম উপাদান নিয়ে কাজ করি৷ এখানে প্লাস্টিকের তৈরি বোতলের ছিপি রয়েছে, গোটা বছর ধরে আমরা সেগুলি সংগ্রহ করেছি৷ এগুলি ইলেকট্রনিক বর্জ্য, গোটা অবস্থায় এখানে আসে৷ আমরা সেগুলির ছোট টুকরো করি৷ এমন সব উপাদানই শিল্পকর্ম হয়ে ওঠে৷”
তার শিল্পকর্মগুলি ইস্তানবুল বিমানবন্দরের মতো জায়গায় প্রদর্শিত হয়, যেখানে সবার প্রবেশের সুযোগ রয়েছে৷ শিল্পী এখানে বিশাল সংখ্যায় আন্তর্জাতিক দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের মনে প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে চান৷ অনেক যাত্রী বিশাল শিল্পকর্মের সামনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে যান৷ তাদের প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করে ডেনিস বলেন, ‘‘মানুষ সাধারণত দূর থেকে আমার সৃষ্টি দেখলে অয়েল পেইন্টিং মনে করেন৷ কাছে এলে তারা বুঝতে পারেন, যে দৈনন্দিন জীবনের বস্তু দিয়ে সেটি তৈরি করা হয়েছে৷ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে না পেরে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিল্পকর্ম স্পর্শ করতে চান৷ তাতেও অনেকের আশ মেটে না৷ একটা অংশ উপড়ে নিয়ে স্মৃতি হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যাবার ইচ্ছা হয়৷”
ডেনিস বর্তমানে অসংখ্য প্লাস্টিকের রঙিন ব্যাগ দিয়ে প্রতিকৃতির একটি সিরিজ সৃষ্টির কাজ করছেন৷ একটি গ্লু গান দিয়ে তিনি সেগুলি জোড়া দেন৷ এমন একটি প্রতিকৃতি তৈরি করতে তার গড়ে তিন থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে৷ ডেনিস সাগডিচ বলেন, ‘‘শিল্প যে শুধু ক্লাসিকাল প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করা যায় না, আমি সেটা দেখাতে চাই৷ আমি এমন এক আর্ট স্কুল শুরু করতে চাই, যা প্রমাণ করবে যে রান্নাও শিল্প, ক্যামেরা ধরাও শিল্প – এমনকি আমাদের আচরণও শিল্প হতে পারে৷ শুধু পুঁথিগত বিদ্যাই গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ আমি এমন এক স্কুল খুলতে চাই, যেখানে বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শিক্ষা নেওয়া যায়৷”
ডেনিস সাগডিচের চমকপ্রদ শিল্পকর্মগুলির একটা প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রয়েছে৷ শুধু দেখতেই আকর্ষণীয় নয়, পৃথিবীটাকে সামান্য হলেও আরও ভালো করে তুলতে অবদান রাখতে পারে৷