নভেল করোনা ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার আর সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কেমন?এই প্রশ্নটাই এখন সময়োপযোগী। কথায় আছে না, রোম যখন পুড়ছিলো,নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলো।” আমাদের অবস্থা অনেকটা সেরকম।চীনে যখন করোনা ভাইরাসে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছিলো আমরা তখনও নির্বিকার, নির্ভয়!কারন চীনের করোনা ভাইরাস আসলে গজব,এদেশ পীর আউলিয়ার দোয়া আছে তাই ভাইরাসটি তেমন কোনো গতি করতে পারবে না। কিছুদিনের মধ্যেই চীনের বাইরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে লাগলো।ইউরোপ, আমেরিকা,ইতালি,স্পেন ফ্রান্সকে কার্যত সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে, অর্থনিতীতে ধস নামিয়ে ভাইরাসটি আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে।যেহেতু নভেল করোনার উৎপত্তি আমাদের এখানে নয় এবং আমরা পর্যটন নির্ভর দেশও নই,তাই কেবল মাত্র এয়ার পোর্টে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে হয়তো করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো যেতো!কিন্তু এয়ার পোর্টে সেরকম কোনো ব্যবস্থা ছিলো না বরং নীরিক্ষা করার যন্ত্রটিও বিকল হয়ে পড়ে আছে। অগ্যতা কয়েকটি নীল রঙের কাগজে নাম ঠিকানা লিখে বিদেশ ফেরত সবাইকে “হোম কোয়ারেন্টাইনে” পাঠিয়ে দেয়া হলো।নির্দেশ দেয়া হলো,জ্বর, সর্দি কাশি হলে হট নম্বরে ফোন করে জানাতে এবং চৌদ্দ দিন বাড়িতেই অবস্থান করতে। এই ধরনের ব্যবস্হা কতটা কার্যকরী? চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী!আমাদের দেশের মানুষ সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ভাবেই আত্মীয় স্বজন নিয়ে জড়াজড়ি করে থাকতে ভালোবাসে।এদেশে ভাই বোন বন্ধুর পোষাক, ব্যবহৃত জিনিসপত্র অদল বদল করাও সহজাত বৈশিষ্ট্য।কেবল তাই নয়,অর্থনৈতিক কারনেও ভিন্ন ভিন্ন শোবার ঘর,তৈজসপত্র বা নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য ব্যক্তিগত করা সম্ভব নয়।সাবান থেকে শুরু করে অনেক কিছুই পরিবারের সবাই মিলেই ব্যবহার করে।কোনো কোনো পরিবারে একই কাঁথার নিজে পাঁচ/ছয় জনকেও রাত কাটাতে হয়।এটাই বাস্তব চিত্র।এরকম অবস্হায় নিজ বাড়িতে অন্তরীন হওয়ার ব্যাপারটা কতটা সহজ? এইদেশে এখনো লক্ষ লক্ষ মানুষ নানা রোগের কারনে হুজুরের ফুঁ নিতে বোতল হাতে রোদ বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকে,সেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞান,ভাইরাস ত্বত্ত সম্পর্কে তাদের ধারনা কতটুকু?তাদের পক্ষে কি করে অনুজীব,সংক্রমণ, বিস্তার এবং করনীয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া সম্ভব?এরকম অবস্থায় ইতালি থেকে ফেরত আসা নাগরিকদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য চেকাপের পর নিজ গৃহে বন্দী থাকার পরামর্শ অকার্যকর বলেই প্রতীয়মান হয়। খবরে প্রকাশ একজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী নিজ দেহে নভেল করোনার অস্তিত্ব আছে জেনে হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন।এর পর কি বলার থাকে? সাধারন নাগরিকের সচেতনতা বোধ নিয়ে প্রশ্ন করা অবান্তর। কিন্তু রাষ্ট্র তার দায়িত্ব অবহেলা করতে পারে না।করোনা আক্রান্ত মানুষদের আলাদা চিকিৎসা দেবার মতন পরিস্হিতি এখানে নেই।কিন্তু আগে থেকেই এই প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারতো! প্রফেশনাল কারনেই প্রতিদিন চিকিৎসক বন্ধুদের সাথে কথা হয়,আলাপ হয় করোনা আতঙ্ক নিয়ে। জানতে পারি,করোনা টেস্ট করার জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রতিদিনই অনেক স্যম্পেল আইইডিসিআরে পাঠানো হয়,কিন্তু অপর্যাপ্ত ব্যবস্হার কারনে তার বেশির ভাগই ফেরত আসে। ঠিক বলা যাচ্ছে না যে রোগী পালিয়েছে বা যারা এখনো হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তারা কতটা ক্ষতি করতে পারেন?কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছে প্রিয় স্বদেশ! আর সপ্তাহ খানেক পরে আসল চিত্র বোঝা যাবে।অনেকেই ভাবছেন বয়স্ক ব্যক্তিরা ঝু্ঁকির মধ্যে আছেন।কিন্তু কয়েক মাসের বিশ্ব করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়,যাদের ডায়বেটিস, হৃদরোগ বা অন্যান্য জটিল রোগ আছে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।সেই অর্থে আমাদের মতন দেশে
মৃত্যুর হার অনেক বেশি হবার কথা।কারন আজকাল ত্রিশ পেরোতেই অনেকেই বহুমুত্র, হৃদরোগ, হাই কোলেস্ট্ররল,থাইরয়েড, স্হুলতা সহ নানা রোগে জর্জরিত,আবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম অনেক শিশুর ক্ষেত্রেও।তাই সেদিক থেকে বিচার করলে আশাজনক কিছু আপাতত দেখছি না। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ জনক হলো অর্থনিতীতে যে ধস নেমেছে তার প্রভাব ভিষন রকম হতাশাজনক হবার ঝুঁকি রয়েছে।ইতিমধ্যে পোষাক শিল্প বেশ বড় রকম ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে,সামনের দিনগুলোতে আপাতত ভালো কিছু দেখা যাচ্ছে না।মানুষের চাহিদার যোগান দেয়া সম্ভব না হলে অপরাধ বেড়ে যাবে।মানসিক
স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখিন হবে।সব কিছু মিলিয়ে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। তবু আমরা জানি,রাত্রি যত গভীর হয়,দিনের আলো তত নিকটে আসে।আমরা আশাবাদী, সবাই মিলে এক সাথেই এই অন্ধকার পথ পার হয়ে যাবো। সচেতন হই,নিরাপদ থাকি। লেখক: উম্মে শায়লা রুমকী, ফিজিক্যাল থেরাপিষ্ট ও উদ্যোক্তা পিটিআরসি, ঢাকা
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.