রেজাউল ইসলাম
আমাদের কমিউনিটি সহ অন্যান্য কমিউনিটিতে কোরোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই আক্রান্তের বেশির ভাগই হচ্ছে আমাদের উদাসীনতা এবং সেফটি গাইডলাইন অনুসরন না করার কারনে। অনেকেই কোরোনা আক্রান্ত হয়ে তাকে আমলে না নিয়ে বাইরে যাচ্ছে এবং কোরোনা asymptomatic অবস্থায় অবাধে মেলামেশা করার ফলে দ্রুত কোরোনা ছড়িয়ে পড়ছে চতুর্দিক। নিচে দুটি ঘটনা দেওয়া হলো যার থেকে কিছুটা ধারনা পাওয়া যায় কিভাবে কোরোনা ছড়াচ্ছে। এমন আরো অনেক ঘটনাই আমরা হয়ত জানি। আমরা যদি সেগুলিকে address করে সামনে নিয়ে আসি তাহলে এর মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি সম্ভব। আমরা হয়ত অনেকেই বুঝতে পাছি না কতটুকু ক্ষতি করে ফেলছি। আমার আচরনের কারনে কারো মৃত্যুও হতে পারে। আসুন আমরা সবাই এর থেকে বিরত থাকি। এবার আসুন দুটি ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করি এবং বুঝার চেষ্টা করি এক্ষেত্রে করনীয় কি ছিল।
১)সাবরিনা তার ডিটেচজড বাড়ীর বেজমেন্ট দুজন ছাত্রকে ভাড়া দিয়েছে। বেজমেন্টের দুটি রুমে তারা আলাদা আলাদা থাকে। একদিন তার বেজমেন্টে ভাড়া থাকা রাকিব নামের ছাত্রটি সাবরিনাকে ফোনে বলে তার কোরোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। সাবরিনা রাকিবকে বাইরে যেতে মানা করে। এই অবস্থায় সাবরিনা খুব ঘাবড়ে যায়, কি করবে সে বুঝতে পারে না। সে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে।কখন না আবার এই কোরোনা বাসার সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বাসায় সাবরিনার ছেলেও থাকে। আজিম নামের বেজমেন্টে ভাড়া থাকা অন্য ছাত্রটিও ভয়ে থাকে। কখন না আবার তারও কোরোনা হয়ে যায়। এদিকে রাকিব নিয়ম অনুযায়ী নিজের রুমে আইসোলেটেড না থেকে প্রতিদিন বাইরে যেতে থাকে। সাবরিনা তাকে বার বার নিষেধ করে, ‘ রাকিব, তুমি যে বাইরে যাচ্ছো ঠিক হচ্ছে না, তুমি আরো অনেককে ছড়াচ্ছো, তোমার কারনে অনেকের লাইফ রিস্ক হয়ে যাচ্ছে। এটা তুমি খুবই অন্যায় করছো। তুমি বাসায় থাকো, তোমার যাযা প্রয়োজন আমি এনে দিবো।” কিন্তু রাকিব সাবরিনার কথায় কর্নপাত করে না। সে নিয়মিত বাইরে যেতে থাকে। সে কোরোনা পজেটিভ নিয়েই গ্রোসারী করে, বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা করে। এদিকে আজিম অন্য এক জায়গায় রেন্ট পেয়ে সাবরিনাকে জানিয়ে দেয় সে খুব শীঘ্রই সেখান চলে যাচ্ছে। সে আর একদিনও থাকতে রাজি না। সাবরিনা এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয় বিষয়টি সে হেলথ কানাডাকে জানাবে। সেই অনুযায়ী সাবরিনা হেলথ কানাডায় ফোন দেয়। হেলথ কানাডা সাবরিনার ঠিকানা বিস্তারিত জানতে চায়। কিন্তু সাবরিনা কি ভেবে ঠিকানা, নাম দিতে বিরত থাকে। হেলথ কানাডা তাকে বলে,’ তুমি এইসব তথ্য না দিলে আমরা তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারবো না।” সাবরিনা আর হেলথ কানাডার মধ্যে আলোচনা এর পর আর অগ্রসর হতে পারে নি। এদিকে রাকিবও সাবরিনাকে জানায়, সেও অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে। দুদিনের মধ্যে রাকিব আর আজিম সাবরিনার বেজমেন্ট খালি করে চলে যায়। সাবরিনা মোটামুটি হাফ ছেড়ে বাচে তবে পুরো বাসা disinfectant করার সিদ্ধান্ত নেয়।
২) রওশান দীর্ঘ দিন ধরে টরন্টোর পাবলিক হেলথে কাজ করেন। প্রতিদিন মাস্ক পরে কাজে যায়, নিয়মিত হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে। যথাসম্ভব কো-ওয়ার্কারদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করে। কিন্তু হঠাৎ করে সে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। গায়ে সামান্য জ্বর আর সর্দি হয় তার। রওশন দেরি না করে কোরোনা এসেসমেন্ট সেন্টারে গিয়ে কোরোনা টেস্ট করান। তার রেজাল্ট আসে পজেটিভ। সে নিজেকে সম্পূর্ণ কোয়ারেন্টিন করে ফেলে। নিয়ম অনুযায়ী পরিবারের সবাই কোয়ারেন্টিন থাকার কথা কিন্তু রওশনের স্বামী ইউনুস সে সবের তোয়াক্কা না করে বাইরে যেতে থাকে। ফোনে সে তার বন্ধু মনিরকে বলে তার স্ত্রীর কোরোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। মনির তাকে বলে, ‘তোমরা কেউ বাইরে যেও না, বাসায় থাকো। যা যা দরকার আমাকে বলো, আমি পৌঁছে দিবো। ” এর মধ্যে ল্যাপটপ নষ্ট হওয়ায় ইউনুস ড্যানফোর্থে সিরাজের দোকানে সেটা সারাতে নিয়ে যায়। সিরাজ ল্যাপটপ ঠিক করে ইউনুসকে ফেরত দেয়। বিকেলের দিকে কোন একটা কাজে মনির ড্যানফোর্থে সিরাজের দোকানে যায়। সিরাজের সাথে কথা প্রসংগে সে বলে,”ইউনুস ভাবির কোরোনা হয়েছে।” সিরাজ মনিরের কথা শুনে হতবাক হয়ে যায়। সে আতংকিত হয়ে মনিরকে বলে, “কি বলেন আপনি, আজ সকালেই তো ইউনুস আমার দোকান থেকে তার ল্যাপটপ সারিয়ে নিয়ে গেলো। উনি তো আমাকে কিছুই বলেন নি।” মনির সিরাজের কথা শুনে হতবম্ব, কি বলবে বুঝতে পারে না। শুধু বলে, ‘তুমি ভাই আমার থেকে দূরে থাকো।’ উপরের দুটি ঘটনা সত্য কিন্তু পাত্র-পাত্রির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ঘটনা দুটি বলার কারন, এভাবেই কোরোনা ছড়াচ্ছে। আমার,আপনার অসর্তকতা অন্যের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ভেবে দেখুন, এমনটি কি আপনি, আমি করতে পারি?