এক রিসার্চ মতে গ্রেটার টরন্টো এরিয়ায় দু বছরে ১৩ জন তরুণ বাঙালি আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছেন । সম্ভবত কেবল ১৩ জন তরুণ আত্মহত্যা করেছেন কিন্তু আমরা জানি না সত্যিকার অর্থেই কত তরুণ/ তরুনী ভুগছে মানসিক অসুস্থথায়। কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কানাডায় 10-14 বছর বয়সী অভিবাসীর সংখ্যা অনেক বেশী ,যারা মানসিক স্বাস্থ্যের উদ্বেগের কারণে তাদের প্রথম অ্যাক্সেস পয়েন্ট হিসেবে জরুরি কক্ষে (ER) যেয়ে থাকে ।
0-29 বছর বয়সী 28% এরও বেশি লোক কানাডায় মানসিক অসুস্থথাতে ভুগে আর এর সংখ্যা ইমিগ্র্যান্ট পরিবারের মধ্যে আরো অনেক বেশী। কিন্তু আমরা কি যথেষ্ট সচেতন এই ব্যাপারে ? যখনি কোনো আত্মহত্যার কথা শুনি , কিছুদিন আমরা খুব নড়েচড়ে বসি কিন্তু আবার আমরা আমাদের পূর্বের জায়গায় ফিরে যাই, আমি জানি আমাদের এতদিনের পুরানো ধ্যান ধারণা , যেখানে মানসিক অসুস্স্থকে একধরনের লজ্জা/অপরাধ বলে ভাবা হয় তা ঝেড়ে ফেলা এতো সহজ নয় , কিন্তু আমাদের বাচ্চাদের জন্য আমাদের তা করতে হবে , এনিয়ে লেখাপড়া করতে হবে।
কেন আমাদের বাচ্চারা আমাদের কাছে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারে না , কেন এতো সংখ্যায় আমাদের ছেলেমেয়েরা মানুষিক অসুস্থতার শিকার : এর মুল কারণগুলি হলো হচ্ছে ; ইম্মিগ্রান্ট গিল্ট : আমরা অনেকেই জেনে বা না জেনে আমাদের বাচ্চাদের প্রায় বলে থাকি ” তোমাদের জন্য আমরা কত ভালো জীবন ছেড়ে এখানে এসেছি , কত কিছু করছি ” যা অনেকাংশেই সত্য নয় , তারা আমাদেরকে এখানে আসতে বলেনি । এই ইমিগ্র্যান্ট গিল্ট এমনভাবে বাচ্চাদের দেয়া হয় যে তারা আর নুতন করে তাদের সমস্যার কথা বলে বাবা মা কে বিরক্ত করতে চায় না।
অভিবাসীদের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার এবং সন্তানের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা :যেহেতু আমাদের বাচ্চার এখানকার সংস্কৃতি, ভাষা এবং সামাজিক কাঠামোতে অভ্যস্ত, তাইঅনেক বাচ্চাকেই অনেক অল্প বয়সেই পরিবারে নথি, বিল এবং এমনকি আইন অনুবাদ করতে শিখতে হয়। যা পিতা-মাতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে ,আমাদের বাচ্চাগুলিকে অনেক ছোট বয়সেই দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয় যা তাদের মানসিক স্বাস্থের উপর প্রভাব ফেলে । ভাষাগত সমস্যা : অনেক সময় বাচ্চা চাইলেও তার পরিবারের সাথে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে কথোপকথন করতে সক্ষম হয় না। কারণ বাবা মা হিসেবে আমরাও জানিনা কিভাবে এই বিষয়ে কথা বলা উচিত, কোথা থেকে শুরু করা উচিত ,তেমনি বাচ্চার বুঝতে পারে না কোথা থেকে শুরু করবে কারণ বেশির ভাগ সময় তাদের বলা হয় ” তুমি দুঃখী এই সামান্য কারণে , আমরা তো ছোটবেলায় কত কষ্ট করেছি অথবা তোমার কাজিনদের দেখো তোমার ব্যাক হোম এ কত কষ্ট করছে. তোমার ডিপ্রেসেড হবার কোনো অধিকার নেই “ কিনতু ডিপ্রেশন এভাবে কাজ করে না ।
বাবা মা বুঝতেই পারেন না বাচ্চার হতাশাগ্রস্থতা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে আপনার বড়ো হয়ে উঠা বা তার চাচাত ভাইরা কি করছে তার সাথে সম্পর্কিত নয়।অভিবাসীদের শিশুরা চাপের মুখোমুখি হয় বেশি অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তাও পেয়ে থাকে অনেক কম।আমাদের বাচ্চাদের আমরা যে অভিবাসনের ট্রমাগুলি সহ্য করেছি তা হয়তো করতে হয় না , কিন্তু তাঁরাও একধরনের ,সাংস্কৃতিক ,অর্থনৈতিক এবং মানসিক টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে যায় যা মানষিক সুস্থতার জন্য এক বিরাট ক্ষতি। আমাদের বাচ্চারা অনেকেই লেখাপড়ার চাপে থাকে,অনেকেরই আর্থিক অসংগতি থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়,আমাদের সন্তানদের সাথে আমাদের মতের অমিল হয়। তারউপর রয়েছে বুলিং ,এখন সামনাসামনি বুলিং ছাড়াও ‘সাইবার বুলিং’ চালু হয়েছে। এতে আমাদের বাচ্চাদের মনের মধ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ে।
এঁদের অনেকে নিজেকে নিজে মানতে পারে না। অর্থাৎ নিজের আচরণ ও অনুভূতি নিয়ে লজ্জিত থাকে। কিন্তু বদলাতেও পারে না। এঁরা অনেকেই নানাধরনের বুলিংয়ের শিকার হন, পরিবারের মধ্যে এবং পরিবারের বাইরে ।যারা আমাদের মতো নয়, যারা ব্যতিক্রমী, তাদের আমাদের অনেকের কাছে অস্বস্তিকর লাগলেও তাদেরকে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে । দরকার পড়লে মা বাবার কাউন্সিলের সাহায্য নিতে হবে । বদ্ধমূল সামাজিক ধারণার কারণে এখনও অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে পেশাদার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চান না. আমাদের সমাজে মেন্টাল হেলথ লিটেরেসির অনেক প্রয়োজন রয়েছে । কানাডায় প্রচুর মানসিক স্বাস্থ্য উদ্যোগ রয়েছে যা সচেতনতা বাড়ায় এবং Stigma ভাঙতে কাজ করে, কিন্তু পারিবারিক সেটিংগুলিতে মানসিক স্বাস্থ্য কথোপকথন শুরু করা বিশেষ জরুরি আমাদের জন্য এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ।
Photo Credit: Getty Images/iStockphoto