অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে মানবতা দেখানোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, খালেদা জিয়ার সময়ে কী হয়েছে?
এ সময় বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, তার ওপর গ্রেনেড হামলা; ১৫ আগস্টে ভুয়া জন্মদিন পালনসহ বিভিন্ন বিষয় সামনে আনেন তিনি।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে তিনি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (কেআইবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে কী অবস্থা ছিলো? আজকে তার চিকিৎসার জন্য এতো চেঁচামেচি করে বেড়াচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান যখন অসুস্থ, তাকে সিএমএইচে পর্যন্ত চিকিৎসা করতে দেয়নি। এমনকি যে যখন আইসিইউতে ভর্তি তাকে স্ট্রেচারে করে আদালতে হাজির করছে। তার জেনারেল পদ বাতিল করে দেয়া হয়েছিলো, তার প্রমোশনও বাতিল করেছিলো।
‘এমনকি আমি সেনাবাহিনীতে যখন নারীদের ভর্তি নিশ্চিত করি। কারণ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে আগে মেয়েরা ছিলো না। মুস্তাফিজের ছোট মেয়ে প্রথম ব্যাচে জয়েন করে। তার প্যারেড যখন হয় খালেদা জিয়া ক্ষমতায়… আমি একটা নিয়ম করেছিলাম সেটি এখনও চলমান আছে যে; বাবা-মা উপস্থিত থেকে তাদের সন্তানকে ব্যাচ পরাবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো খালেদা জিয়া জেনারেল মুস্তাফিজ ও তার স্ত্রীকে আসতে দেয়নি। তার মেয়ের ব্যাচটা তারা পরাতে পারেনি। এই হলো খালেদা জিয়া।’
তিনি বলেন, আর এরশাদকে (জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ) তো জেলে বন্দি করে রেখেছে, তাকে কোনো চিকিৎসার সুযোগ দেয়নি। রওশন এরশাদকেও দেয়নি। আবার জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় সাজ্জাদ চৌধুরীর অপারেশন হয়েছিলো, ঘা শুকায়নি; সেই অবস্থায় তাকে জেলে ঢুকিয়েছিলো। একই অবস্থা মতিয়া চৌধুরীর। তাকেও জেলে ঢুকিয়ে ছিলো, তখন তার টিবি হয়েছিল।
‘যারা এই বহু অন্যায়-অবিচারের কথা…এমনকি আমাদের পার্টির অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে, অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন করেছে। সেই অত্যাচারের ভিডিও দেখে তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়া উৎফুল্ল হয়েছে। এই ধরনের হিংস্র একটা চরিত্র আমরা দেখেছি।’
এ সময় খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ দেশে আসলে সন্তান হারা মাকে সান্ত্বনা দিতে গেলেও বাড়িতে ঢুকতে না দেয়ার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চাই; তারা যে সহানুভূতি দেখাতে বলেন, সহযোগিতা চায়- খালেদা জিয়া কী আচরণ করেছে। ২১ আগস্টে যে গ্রেনেড হামলা, তার আগে খালেদা জিয়ার কী বক্তব্য ছিলো; শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা জীবনে বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারবে না। এমনটাও বলেছিলো, আওয়ামী লীগ ১ শ’ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। বরং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেনি বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারেনি। তার কথা তার ওপরই ফলে গেছে।’
তিনি বলেন, খালেদার ওপর যে দুর্নীতির মামলা, গ্যাটকোর মামলা, নাইকোর মামলা; এটা কিন্তু আমাদের করা নয়। সিঙ্গাপুরে তার ছেলের দুর্নীতির চিত্র বেড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এতিমের জন্য টাকা এসেছিলো, সেই টাকা এতিমের কাছে পৌঁছায়নি। সেই টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়েছে, নিজেই খেয়েছে। সেই সাজা সে পেয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলো; তার বড় বোন-ভাই আমার কাছে এসেছিলো। রেহানা বাসায় ছিলো। তখন মানবিকভাবেই তাকে তার বাড়িতে থাকার আমার নির্বাহী ক্ষমতায় আমি তার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার অনুমতি ও চিকিৎসার অনুমতি দিই।
‘আজকে বাংলাদেশে সবচেয়ে দামি যে হাসপাতাল, সবচেয়ে ব্যয়বহুল সেই হাসপাতালে কিন্তু তার চিকিৎসা হচ্ছে। তার ছেলের বউ তো ডাক্তার। শুনছি সে নাকি অনলাইনে শাশুড়িকে দেখে। তারা একটা সুযোগ পেয়েছে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে…তারা আন্দোলন করছে। আমার যতটুকু করার ছিলো করেছি।’