ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির মধ্যে দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দুবাই থেকে বাংলাদেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি দল কাজ শুরু করছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় আসামি ১০ জন। তাদের মধ্যে দুজন তরুণী। রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ধনী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। মামুন হত্যার ঘটনায় লাশ গোপন করতে সহায়তা করেছেন রবিউল। খুনে সরাসরি জড়িতরাও রবিউলের সহযোগী।
রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলাটিতে জামিন নিয়ে পলাতক আছেন রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়া। কারাগারে আছেন—আসামি রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দীদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১) ও সারোয়ার হোসেন (২৩)।
মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য গত বছরের ২০ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। যদিও সে মামলা এখনো ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও গত এক বছরে দুই বার দেশে এসেছিলেন আরাভ খান। কিন্তু, রহস্যজনক কারণে একবারও তিনি গ্রেপ্তার হননি। দেশে এসে ঘুরেফিরে আর ফেসবুকে লাইভ করে আবার নিরাপদে দুবাই ফিরে যান। সম্প্রতি স্বর্ণের দোকান চালু করে আলোচনায় আসা রবিউল দুবাইয়ে আটক হয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠলেও তা নাকচ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দুবাইয়ে পালিয়ে থাকা রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান এখনো সেখানে আটক হননি।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, দুবাইয়ে আরাভ খান নামে আশ্রয় নেওয়া রবিউলকে বাংলাদেশে ফেরত আনা কঠিন ও জটিল প্রক্রিয়া। বাংলাদেশি রবিউলই যে আরাভ খান, তা আগে ইন্ডিয়াকে জানাতে হবে বাংলাদেশকে। এর পর ইন্ডিয়া সেখানে মামলা করবে। আরাভ অপরাধী, পাসপোর্ট জালিয়াতকারী নিশ্চিত হয়ে দুবাইকে জানাবে ইন্ডিয়া। যদি ইন্ডিয়ান অ্যাম্বাসি দুবাইকে জানায় যে আরাভ খানকে বাংলাদেশে পাঠাতে তাদের কোনো অসুবিধে নেই, তাহলে সম্ভব। এক্ষেত্রে চুক্তি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সদিচ্ছা থাকলে চুক্তিও লাগে না। যেমন: সৌদি আরবের সঙ্গে তো আমাদের চুক্তি নেই। কিন্তু, আমরা রাজন হত্যা মামলার আসামিকে সৌদি থেকে ফিরিয়ে এনেছি। সদিচ্ছা ও পারস্পারিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক। কিন্তু, তিনি রবিউল ইসলাম নাম বদলে আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট করে দুবাইয়ে যান। চাইলেও ইন্টারপোল আরাভকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারবে না। কারণ, সেখানে তার অবস্থান ভারতীয় হিসেবে। দুবাইতে দাগী আসামি বা অপরাধীও নন আরাভ। আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহিঃসমর্পণ চুক্তিও নেই। তাছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল হলেও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নন তিনি। মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া এখনো চলমান। তাকে ফেরানো নির্ভর করছে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘দুবাইয়ের সঙ্গে আমাদের যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি আছে, সে অনুযায়ী তিনি যদি সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হতেন, তাহলে বিষয়টা সহজ হতো। কিন্তু, তিনি তো বন্দি নন। সেজন্য জটিলতা আছে। আরাভ খানের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করতে ইন্টারপোলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং সেটা তারা গ্রহণ করেছে। এখন দেখা যাক, কী হয়। তিনি আমাদের পাসপোর্ট দিয়ে দুবাই যাননি। এখানেও জটিলতা আছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান খুনের মামলার আসামি দুবাইয়ে থাকা রবিউল ইসলাম। ইন্সপেক্টর মামুন খুন হন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তার দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে এ ঘটনায় বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।