তখন ১৯৮৬ সাল। আমি ভর্তি হয়েছি বুয়েটে, আর্কিটেকচার পড়ি আর ‘সাংবাদিক’ এর চরিত্রে মাঝে মাঝে অভিনয় করি।
এক পাক্ষিকে কাজ করি। পাক্ষিকটি নতুন। তাঁদের ওখানে বড় লেখকেরা লিখেন না বলে পাতা ভরানোর জন্য আমাকে দিয়ে নানা রকমের লেখা লিখিয়ে নিতেন। আমিও অত্যন্ত মনযোগের সঙ্গে এ কাজটি করতাম, আমি লেখা দিয়ে দেবার সঙ্গেই আমাকে যা দেবার দিয়ে দিতেন। লেখা ছাপা হবার জন্য আমার অপেক্ষা করতে হতো না।
এই কাগজে তেমন বিজ্ঞাপন আসে না। কারণ যারা বিজ্ঞাপন দেন, তাঁরা এই কাগজটি চেনেন না । এ কারণেই কী-না, একদিন সম্পাদিকা আমাকে কয়েকটি বিজ্ঞাপন কোম্পানীর বড় কর্তার নাম ঠিকানা ও ফোন নম্বর দিয়ে বলেন, এঁদের ইন্টারভিউ নিয়ে আসেন।
আমি যাই এশিয়াটিকে, একসময় যা ছিলো ইস্ট এশিয়াটিক । গিয়ে দেখা পাই আলী যাকেরের। তখন স্টারডম খুব বিশাল ছিলো না। আমি কোন এপোয়েন্টমেন্ট ছাড়াই গিয়ে কথা বলা শুরু করি। এবং কথা বলতে বলতে বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন শিল্পের ইতিহাসটা জেনে যাই। তাঁর কাছ থেকে খবর নিয়ে আমি যাই ইন্টারস্পীড, বিটপী, এডকম। কথা বলি এনায়েত করিম, ইমরুল চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার, গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী চম্পা, এঁদের সঙ্গে।
আমি সবার সঙ্গে কথা বলি আর তাঁদের একটা পোর্ট্রেট নিয়ে আসি। কারণ আমি প্রথম পোর্ট্রেট তুলতে গিয়েছিলাম আলী যাকেরের। আমার হাতে ইয়াশিকা এমএফ-টু অটোফোকাস ক্যামেরা। এ ক্যামেরা দিয়ে কারো শুধু মুখের ছবি তুলতে হলে খুব কাছে যেতে হয়। আমি তাঁর মুখের কাছে ক্যামেরা নিয়ে যেতে উদ্যত হতেই তিনি হাসি মুখে বলেন- এই ক্যামেরাতে আমার মুখের ছবি আউট অব ফোকাস হবে। আমি আপনাকে ভালো ছবি দিচ্ছি। তিনি আমাকে একটা খুব সুন্দর পোর্ট্রেট দেন।
আমি বলি- আমি যে আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছি এমন একটা ছবি আমার দরকার, সেটা কি আমার এই ক্যামেরায় নিতে পারি ?
আলী যাকের তখন একজনকে ডকেন। তাঁর হাতে আমার ক্যামেরা দেই।
আমি আমার খাতায় লেখার ভঙি নিয়ে তাঁর দিকে তাকাই। তিনিও জবাব দেবার মতো অভিনয় করেন এবং সেই লোক আমাদের ছবিটা তুলে দেন। এটা ‘বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনশিল্প – একাল ও সেকাল’ শীর্ষক প্রচ্ছদকাহিনীর ভেতরের পাতায় ব্যবহার হয়।
এরপর আলী যাকের বা ছটলু ভাইর সঙ্গে আমার অনেক দেখা, অনেক আলাপ, ইনবক্সে চ্যাট, অনেক কিছু হয়েছে। তাঁর অনেক ছবিও আমি তুলেছি, কিন্তু তাঁর সঙ্গে ১৯৮৬ সালের তোলা এই ছবিটাই আমাদের একমাত্র ছবি।