সরকার চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মতো আরেকটি গতানুগতিক বাজেট করতে যাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তারা মনে করছে, নতুন সরকার ও তার মন্ত্রীদের মধ্যে উৎসাহের ঘাটতি আছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫, সিপিডির সুপারিশমালা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ অভিমত তুলে ধরে সিপিডি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, নতুন সরকার এসেছে। এই সরকার তার প্রথম ১০০ দিনের ভেতরে রয়েছে। কিন্তু, এর মধ্যে আমরা নতুন সরকারের যে কর্মচাঞ্চল্য ও লক্ষ্যভিত্তিক বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি, দুই-একটা মন্ত্রণালয় বাদ দিলে অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের সে ধরনের লক্ষ্যভিত্তিক কার্যক্রম আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এমনকি মন্ত্রীদের ভেতরে খুব বেশি উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি না। যদিও অনেক মন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় এসেছেন। দুই-একজন মন্ত্রী বাদ দিলে অধিকাংশ মন্ত্রীর কার্যক্রম গতানুগতিক।
তিনি বলেন, অর্থনীতিতে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা থেকে উত্তরণে সরকারি প্রতিষ্ঠানে যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, সেই ধরনের দুই-একটি উদ্যোগ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ দেখছি না। নতুন সরকার অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বা মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারবে, পাশাপাশি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিকে বেগবান করতে পারবে, তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, এনবিআর, বিডা, সিটি করপোরেশন, বিইআরসি প্রত্যেকটি বিভাগে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগকে জবাবদিহির মধ্যে আনা দরকার।
ব্রিফিং সিপিডি জানায়, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বড় ধরনের চাপের মধ্যে আছে। মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের জীবনযাত্রা সংকটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করাই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজস্ব খাতে দুর্লতার কারণে ঋণনির্ভরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার জায়গা আমরা অনেক সময় দেখেছি। সেই জায়গায় আমাদের হাত দিতে হবে। ভোক্তা অধিকারসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকেও শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি দুটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার ঘটনা ইতিবাচক। ব্যাংকগুলো দুর্বল হওয়ার পেছনে বাস্তব কারণ ছিল। দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চতুর্থ প্রজন্মের এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল কি না, সেটা একটা প্রশ্ন। এছাড়া ব্যাংকগুলোয় সুশাসনের অভাব ছিল দৃশ্যমান। যেসব কারণে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়েছে, সেসব কারণ আমলে নিতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, লক্ষ্য অর্জন ও বাস্তবায়নে আর্থিক শৃঙ্খলা প্রয়োজন। কয়েকটি বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতেই হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে এ পদক্ষেপ নিতে হবে। সংস্কার করতে গেলেই বাধা আসবে। সেই কঠোর পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে। এই সরকার তার মেয়াদ শুরু করেছে। পাঁচ বছরের জন্য তারা থাকবে, প্রথম বছর গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন কি না কঠোর পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে। সেই পদক্ষেপ নেবে কি না সেটা সরকারের বিষয়।