পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ নিরসনে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের জন্য দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রয়োজন। এছাড়া পবিত্র জেরুজালেম নগরীর জন্য বিশেষ মর্যাদা (স্পেশাল স্ট্যাটাস) দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বুধবার ইতালির টিজি১ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকরে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘ওই দুই জনগণকে একত্রে থাকতে হবে। এর জন্য ভালো সমাধান হতে পারে, আলাদা দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। অসলো চুক্তি, দুটি সুসংজ্ঞায়িত রাষ্ট্র এবং জেরুজালেমের জন্য একটি বিশেষ মর্যাদা।’
এর মাধ্যমে গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর সৃষ্ট এই সংঘাত আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নেওয়া এড়াতো যেতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যকার সমস্যা নিরসনে ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’-এর প্রসঙ্গটিও নতুন নয়, এর আগেও বহুবার আলোচনায় এসেছে।
‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’-এর বিষয়টি প্রথমবার আলোচনায় আসে ১৯৯০-এর দশকে। সে সময় নরওয়ের অসলোতে অনুষ্ঠিত এক শান্তি আলোচনায় ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিরা নিজস্ব অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে বলে আশা তৈরি হয়েছিল। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মধ্যস্থতায় ওই শান্তি আলোচনায় ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত ও ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন তারা।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সবচেয়ে বড় বাধা হল- ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সীমানা কী হবে তা নির্ধারণ করা। ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীর দখল করে নেয়। তারপর থেকে এসব অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক ইসরায়েলি বসতি স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৮০ সালে পূর্ব জেরুজালেম শহরটিকে ইসরায়েলের ‘একক ও চিরন্তন রাজধানী’ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে ফিলিস্তিনিরা ঐতিহাসিক এই শহরের পূর্ব অংশকে নিজেদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখে থাকে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় পক্ষই প্রাচীন এই শহরটিকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে। এই শহরটিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষেরই ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে। ইহুদি ও ইসলাম ছাড়াও খ্রিষ্টান ধর্মেরও বেশ কয়েকটি পবিত্র স্থানের আবাসস্থল জেরুজালেম।
তবে জেরুজালেম নগরীর বিশেষ বা আন্তর্জাতিক কোনও মর্যাদা থাকার বিষয়টি ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করে এসেছে ইসরায়েল।
পোপ বলেন, ‘পবিত্র ভূমিতে এই যুদ্ধ আমাকে ভীত করে। এই লোকেরা কীভাবে এই সংঘাতের অবসান করবে? সংঘাত ও উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হচ্ছে, বহু মানুষের জীবনসহ অনেক কিছুর সমাপ্তি হওয়া।’
পোপ ফ্রান্সিস ইতিমধ্যে গাজাবাসীদের সাহায্য করার জন্য মানবিক করিডোর খোলা এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছেন।
টিজি১ টেলিভিশনকে পোপ জানিয়েছেন যে, তিনি গাজায় একটি গির্জার পুরোহিত ও নানদের সঙ্গে প্রতিদিন টেলিফোনে কথা বলেন। ওই গির্জা প্রায় ৫৬০ জনকে আশ্রয় দিয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগ খ্রিষ্ট্রান, তবে কিছু মুসলমানও রয়েছে। পোপ বলেন, ‘আপাতত, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, ইসরায়েলি বাহিনী ওই গির্জাকে সম্মান করছে।’
পোপ ফ্রান্সিস আরও বলেছেন, ইসরায়েল ও হামাসের চলমান যুদ্ধে বিশ্ব যেন ইউক্রেন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং মিয়ানমারসহ অন্যান্য সংঘাতকে ভুলে না যায়।