অভূতপূর্ব উন্নয়ন পরিক্রমায় দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন হঠাৎ ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে’র অজুহাত তুলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাওয়া দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত জনগণের ভোট পাবে না, জেনে নির্বাচন বানচাল করতে এই মাতামাতি করছে বলেও মনে করেন তিনি।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) গণভবনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় আমাদের দেশে ছিল গভর্নমেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দি জেনারেল। আওয়ামী লীগই গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল প্রতিষ্ঠা করেছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং—যত প্রকার অপকর্ম ছিল, সেসব থেকে আমরাই মুক্তি দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে দেশকে এনেছি।
‘দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন হঠাৎ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে এত মাতামাতি কেন?…সন্দেহ হয় রে। এটাই বলতে হয়, সন্দেহ হয় রে। আসল কথা, নির্বাচনটাকে বানচাল করে দেওয়া। যারা জানে, নির্বাচন করে জনগেণের ভোট পাবে না; তারা সব জায়গায় গিয়ে ধর্না দিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ, তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থেকে এত বেশি মানিলন্ডারিং এবং এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে যে, তারা সেই টাকা অবাধে খরচ করে যাচ্ছে।’
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রক্ত দিয়েছে, দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সেটা বলেছি তাদের, আমাকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন শেখাতে হবে না। কারণ, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচন হয়েছে বলেই জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে এবং একটানা ক্ষমতায় আছি বলেই আজকে অর্থনৈতিক উন্নয়নটা হয়েছে।’
এ সময় প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৮—এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, দেশের কী উন্নয়ন হয়েছে? দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত। মানুষ এক বেলা খেয়ে থাকত। ছেঁড়া কাপড় বিদেশ থেকে এনে পরানো হতো। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টিহীনতা তো প্রতিনিয়ত ছিল, নারীর ক্ষমতায়তনও ছিল না।
‘আজকে যতটুকু বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই উন্নয়নটা হচ্ছে। এখন এত প্রশ্ন আসে কেন, সেটাই আমার কথা। তাহলে কি একটা দেশ এত দ্রুত উন্নতি করে ফেলছে, এটাই সবার মাথাব্যথার কারণ হয়ে গেল কি না, যে এটাকে এখণ কিভাবে নষ্ট করা যায়। হঠাৎ এত তৎপরতা কেন?’
কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী প্রচারণার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সব জায়গায় প্রচার আর সেই সাথে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে…।তারা বাস্তব অবস্থাটা বোঝে কি না, আমি জানি না। তারা একই ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছে।’
‘আমাকে অবাধ নির্বাচন শিখাতে হবে না। আমরা আইয়ুব খানের আমল থেকে আন্দোলন করে আসছি। স্কুলজীবন থেকেই রাজপথে আন্দোলন করেছি। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবাই তো ভোট চোর। এক আওয়ামী লীগকে জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়। কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হয়।’
নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, নৌকায় ভোট দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছে, জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে, দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন কার সময়ে হয়েছে। ৪১ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র ৫ ভাগ, সেটাও থাকবে না। তবে কিছু লোক আছে, চোখ থাকতেও অন্ধ, তাদের কিছু বলার নেই।
যারা নির্বাচন বয়কট করেছে, নির্বাচনকে কলুষিত করেছে অথবা ভোট চুরি করেছে, তাদের কাছ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শোনা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য, মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে জনগণের ভোট চুরি করে দেশ পরিচালনা করেছে, সেই সময় এত নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে তাদের উদ্বেগ দেখিনি। অথচ, ২০০৮ সালের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি ২৯টি আসন পেয়েছিল। সেটা আবার বিএনপি-জামায়াত ঐক্যজোটও ছিল। সেই ঐক্যজোটের প্রাপ্তি হচ্ছে এই। পরে আরও একটি আসন পায়।
নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনে ঢাকায় তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করেছে। এমন কোনো অপকর্ম নেই, করেনি। জনগণের সম্পদ পোড়ানো—সবই করেছে। এরপর আবারও অবরোধ, মানুষ হত্যা আমরা দেখলাম। ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে নিজেরা মারামারি করে সরে গেলো। সরে গিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইল। তাদের মুখেই এখন নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা শুনি এবং সব জায়গায় এটা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। অন্যান্য দেশ আমাদের দেশের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিয়ে প্রশ্ন তোলে!’
‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যখন মিলিটারি ডিক্টেটর ছিল, তখন আমরা সংগ্রাম করেছি জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য। নির্বাচনের যে সংস্কারগুলো—ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন পাস করা, নির্বাচন কমিশন যেটা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেটাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দিয়ে বাজেট আলাদা করে সেটাকে শক্তিশালী করা এবং জনগণের ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, জনগণের যে ভোটের অধিকার ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই ভোটের অধিকার জনগণের কাছে আওয়ামী লীগই ফিরিয়ে দিয়েছিল’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।