নরেশ মধু
উমা
আমার প্রিয় সহধর্মিনী
তোমার সাথে আমার পূর্ব জন্ম বা জন্মান্তরে
কোন পরিচয় ছিল কিনা জানি না
প্রথম দেখা ছাঁদনা তলায়
পান পাতার আড়াল থেকে
তোমার চোখে চোখ রেখে
চোখের পাতায় ভর করে
ঘুরে এসেছি পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত
খুজে পেয়েছিলাম
অভয়ারণ্য
যেখানে নিবিড় করে নিজেকে হারিয়ে
আবার খুঁজে পাওয়ার বাতি ঘর
সেদিন প্রজাপতি ব্রহ্মা আমাদের আর্শীবাদ করেছিলেন কি না জানি না
পবিত্র বেদ মন্ত্রে অগ্নিকে স্বাক্ষী রেখে হাতে হাতে রেখে
উচ্চারণ করেছিলাম
“যদেতত্ হৃদয়ং তব তদ¯তু হৃদং মম
যদিদং হৃদয়ং মম, তদ¯তু হৃদয়ং তব।।
তোমার এই হৃদয় আমার হোক আমার এই হৃদয় তোমার হোক-
তোমাকে দেয়া প্রতিশ্রæতি আমি রাখতে পারিনি
আজ আমি মহাশ্মশানের অগ্নি গোলকে
পৃথিবীর সমস্ত বন্ধন ছেড়ে
মহাশুন্যের পথে-
নিঃসঙ্গতার মোড়কে আমার শরীরে আবৃত
পাখির সাদা পালক
একে একে খসে পড়ে মহাকাশ থেকে
লাল শালুক-শাপলার ডগায়
আমার অস্তিত্ব তোমার অন্তরীণ অবস্থানে
আজ আর কোন পাখির পালক নেই
নিসঃঙ্গ চোখ খোঁজে বাবুই পাখির বাসা
আমার শব দেহ
তুমি একাকী নগ্ন পদে
হেটে হেটে এসেছো মহাশ্মশানে
কেউ কোথাও নেই
যেখানেই তাকাও আজ আর খুজে পাবেনা
সাত্বনা ! সমবেদনা-
কোথায় হারিয়ে গেছে
শুধু কা কা রবে পাখিরা ঘুরে বেড়ায় শুণ্যে
হাতে তোমার নেই মেহেদীর রং
লাল পাড়ের শাড়ী নিমিষে ছুড়ে ফেলে দিলে
গঙ্গা জলে
সিঁথির সিঁদুরে আমার দীর্ঘায়ু কামনা করে
রাঙাবেনা তোমার প্রশস্ত ললাট
যে দিকে তাকাই কোথায়ও কেউ নেই
মড়কের মিছিল
জনমানবহীন প্রান্তর
শুধুই হা-হা-কার
এতদিন যারা আমার একান্ত আপন
আজ তারা নেই কোথাও
উমা
আজ উল্টো
পার্বতী রয়ে গেল পৃথিবীতে
শিব চলে গেল মর্ত্য থেকে
মহালোকে-
স্থির রইল পৃথিবী
আর তুমি আজ মহাশ্মশানের মহাযাত্রী
তোমার হাতে নেই মহাতান্ডবের
প্রয়লয়ঙ্কারী ডঙ্কা
সেখানে মৃত স্বামীকে
মহা নির্বানের পথে অগ্নি গোলক হাতে
তুমি একা
নিশব্দ চোখের জল
তোমার সাথী
আমার অন্তোষ্টী ক্রিয়া শেষে
পড়শিহীন তৃমি
আমার বেঁচে থাকার স্মৃতি চিহ্ন
মুছে ফেলে
ডুব দিয়ে সব অস্তিত্বকে ভাসিয়ে দিলে গঙ্গা জলে
লাল শাড়ীকে ফেলে দিয়ে
উঠে এলে সাদা শাড়ীর আঁচলে মাথা ঢেকে
মর্তলোকের তাবৎ সভ্যতাকে মেনে
নত শিরে ।
আমি শুধু অপলক তোমাকে দেখে
বিষন্নতায় , আধৃুনিক পৃথিবীর
আদম সন্তানকে প্রণতি জানাই
আমিহীন আমার
বেদনা বিদুর
মহা শ্মশানের উর্ধমূখী গোলকুন্ডলীকে প্রণাম জানাই।
উমা
বিশ্ব সংসারে
তুমি- তুমিই
একাকী নও
চারিদিকে অনন্ত নিঃশ^সের বাতাস
বইছে
বদলে গেছে পৃথিবী
এখন সন্তানের লাশ বইছে মা
নির্মমতার স্বাক্ষর আর কত পৃথিবী বইবে