মিলি সুলতানা, নিউ ইয়র্ক।
এবার দেখলাম আমার মেয়েটির মধ্যে সুন্দর একটা পরিবর্তন এসেছে। করোনা পেনডামিকে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত, তার মা দুশ্চিন্তায় যখন অস্থির, তখন মেয়েটি আমাকে মায়ের মত সান্ত্বনার বানী শুনিয়েছে।
একদিনের কথা বলি…… “মা তুমি এত আপসেট কেন? করোনা নিয়ে এত স্যাড হওয়ার কিছু নাই। মাস্ক গ্লাভস ছাড়া বাইরে যাবেনা। ডেইলি হ্যান্ড ওয়াশ করবে। মোবাইল চাবি স্যানিটাইজ করবে। গরম পানিতে শাওয়ার নেবে। গরম পানি এই ভাইরাসটিকে বাড়তে দেয়না। ডোন্ট ওরি মা। ইয়ু হ্যাভ অলরেডি হাই ব্লাডপ্রেশার”……. আমি মেয়ের মুখে শক্ত মানসিকতার সুর শুনে কিছুটা চমকালাম। মনে হল আমার মা বেঁচে থাকলে যে কথাগুলো বলতেন, আজ আল্লাহ মেয়ের মুখ দিয়েই আমার মায়ের কথাগুলো প্রকাশ করালেন। মায়েরা এভাবেই আজীবন বেঁচে থাকে সন্তানের হৃদয়ে।
করোনার তান্ডব আমার মত মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য ( অবশ্য এটা মানুষের কথা, আমার নয়) থামিয়ে দিয়েছে। কি অদ্ভুত নীরব ঘাতক। চোখে দেখা যাচ্ছেনা কিন্তু নির্বিচারে মানুষের প্রাণসংহার করে চলেছে। তবে আগে শুরুতে যতটা আতঙ্কিত ছিলাম, এখন সেই আতঙ্ক ফিল করিনা। পরিস্থিতিই মানুষকে এমন করে দেয়।
আর একদিন পর ঈদুল ফিতর। লেখার শুরুতে বলেছিলাম আমার মেয়ের কিছু পরিবর্তন নিয়ে। যেমন, এবার ঈদ নিয়ে তার বেশ প্ল্যান ছিল। প্রতি ঈদে একটা এক্সক্লুসিভ ড্রেস কিনতে হয় তার জন্য। তবে এবার সে ড্রেস নেয়নি। এবার একটু অন্যদিকে ঘুরেছে। কলংক ছবিতে মাধুরী দীক্ষিত খুব সুন্দর কয়েকটি লেহেঙ্গা পরেছিলেন। তার দৃষ্টি পড়েছিল মাধুরীর লেহেঙ্গার উপর। অনলাইনে খুঁজে বের করলো সেসব এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের লেহেঙ্গা। কিনে নিলো দুটো। একটা তার জন্য, আরেকটা আমার জন্য। আসলে মেয়েদের এসব আহলাদ দেখতে ভালোই লাগে।
করোনাভাইরাসে পৃথিবী লকডাউন। তবুও জীবন চলছে, এভাবে চালিয়ে নিতে হবে। মেয়েকে বললাম, এবার নাহয় আমরা একটু অন্যরকম ঈদ করব আমাদের জীবনের স্বার্থে। আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা নাহয় হবেনা। আমাদের বাসায় কেউ আসবেনা। আমরাও কারো বাসায় যাবনা। আমরা এবার নাহয় ঘরে বসে আনন্দ করতে চেষ্টা করব। রান্না করব, খাবো, গান শুনবো, নেটফ্লিক্সে মুভি দেখব। আগে সুস্থ থাকতে চেষ্টা করি। বেঁচে থাকতে চেষ্টা করি। এই যাত্রায় বেঁচে গেলে আগামী বছর মনের মত করে ঈদের আনন্দে অংশ নেব।
আমাদের প্রিয় পৃথিবীটা নিরাপদ হোক। সবাই নিরাপদে বাঁচুক। ইনশাআল্লাহ একদিন পৃথিবী ঠিকই হাসবে। তার ছন্দ ফিরে পাবে।