– দেলওয়ার এলাহী।
আলাউদ্দিন আলী। এক মহান সুরকার। আজ তাঁর এরকম শারীরিক অবস্থা। কর্কটক্রান্তি তাঁকে প্রতিদিন নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
একজন আলাউদ্দিন আলী কি দিয়েছেন জাতিকে? যারা গত ৪৫ বছর ধরে বাংলাদেশের গান শুনেছেন -উত্তরটা তাদের কাছে পরিস্কার। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বা আধুনিক গানে সুর সংযোজনা করে আলাউদ্দিন আলী কি এই দুই মাধ্যমে বাংলাদেশের গানকে সমৃদ্ধ করেন নি? এই উত্তরটাও তাদের কাছে আছে।
এইসব গানের শ্রোতার সংখ্যা কত যে, এগুলো আমলে নিতে হবে? সংখ্যায় যদি অন্তত দশকোটি শ্রোতা হয়, তবে কি আমলে নিবেন? জেনে রাখো ভালো যে, আলাউদ্দিন আলীর সুর করা অসংখ্য গানের শ্রোতাসংখ্যা দশ পনেরো বিশ কোটিরও বেশী।
এই মহান সুরকার আজ মৃত্যু শয্যায় জেনেও সরকার তাঁকে কোন রাষ্ট্রীয় পদক-সম্মান দেওয়ার প্রয়োজন বা দায় অনুভব করেন নি! একটি একুশে পদক বা স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার মতো কাজ কি আলাউদ্দিন আলী এই জাতিকে উপহার দেননি?
এবারের একুশে পদক বা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় কতিপয় ব্যক্তির নাম থাকায় সারা জাতি যেভাবে এই রাষ্ট্রীয় পদক-পুরস্কার নিয়ে সরকারকে চরম উদাসীনতা, অজ্ঞানতা ও অবজ্ঞার অভিযোগে অভিযুক্ত করছেন – এখনো সময় আছে আলাউদ্দিন আলী ও সুরকার আলী হোসেনকে বিশেষ বিবেচনায় দুই পদক-পুরস্কারের যে কোন একটি প্রদানের ঘোষণা দিয়ে সরকার বা সংশ্লিষ্ট মহল তাদের স্বীয় সম্মান পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
একজন আলাউদ্দিন আলী শত বছরেও একটি জাতিতে জন্মগ্রহণ করেন না। ব্যক্তি আমি যে গান শোনে দেশের জন্য এখনও উদ্বেলিত হয়ে উঠি, একটি মুহূর্তের প্রেমের জন্য হৃদয় আকুল হয়ে থাকে; আলাউদ্দিন আলীর সুর করা গানের সংখ্যা সেখানে অনেক। যে মমতামাখা স্মৃতি এসে এখনো বাংলাদেশের মাটি আর স্রোতস্বিনী নদীর কথা মনে করিয়ে আমার হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে; আলাউদ্দিন আলীর সুর করা গান, সেখানে প্রধান সেতুবন্ধনের মতো কাজ করে। এখনো আমার চোখ ভিজে উঠে, যখন শুনি-
ও আমার বাংলা মা তোর আকুল করা রূপের সুধায়
হৃদয় আমার যায় জুড়িয়ে, ও আমার বাংলা মা গো।।
বাংলাদেশের অগণিত শহিদদের প্রতি আমার অবিশ্রান্ত শ্রদ্ধার ঋণ প্রকাশ মূর্ত হয়ে উঠে, যখন শুনি আলাউদ্দিন আলীর সুর করা সেই অবিস্মরণীয় গান-
আমায় গেঁথে দাওনা মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা…
আলাউদ্দিন আলী ও সুরকার আলী হোসেনকে এখনো রাষ্ট্রীয় পদক-পুরস্কার প্রদানে সরকারের অমার্জনীয় অবজ্ঞা ও উদাসীনতাকে ধিক্কার জানাই। এই অমার্জনীয় উদাসীনতার জন্য সরকারকে চরম মূল্য দিতেই হবে। দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ দুর্বৃত্তদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকার জন্য আমার পূর্বপুরুষ মুক্তিযুদ্ধ করেন নি! রাষ্ট্রের পদক পুরস্কার তাদের পৈতৃকসম্পত্তি সম্পত্তি নয় যে, ইচ্ছামতো যাকে ইচ্ছা তা বিলিয়ে দেবেন; আর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা অবহেলা, অবজ্ঞায় তাঁদের প্রাপ্য সম্মান থেকে বাদ পড়ে যাবেন।
হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক লুটপাটে যোগসাজশকারীদের মতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদক-পুরস্কারও আজ দুর্নীতিবাজদের হাতে পুরোপুরিভাবে জিম্মি। এর মানে দাঁড়ালো – সরকার দেশের এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যথাযথভাবে পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। সরকারের উচিৎ শক্ত হাতে এখনোই এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদক-পুরস্কারের সম্মান পুনরুদ্ধার করা এবং এখনই আলাউদ্দিন আলীকে তার প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় সম্মান দেখিয়ে জাতিকে তাঁর প্রতি ঋণের দায় স্বীকার করা।
আলাউদ্দিন আলীর দ্রুত আরোগ্যলাভ প্রার্থনা করি।