আসাদ চৌধুরী
ষাটের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় কবি আসাদ চৌধুরী। জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী বরিশালের উলানিয়া গ্রামের এক অভিজাত পরিবারে। তার পদচারণা শুধু কবিতায় থেমে থাকেনি। বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির এমন কোনো ধারা নেই যে যেখানে তার বিচরণ নেই। শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা, উপস্থাপনা, অনুবাদ, গল্প, কবিতায় কোথায় নেই তার দক্ষতা। শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষৎ আর সেই ভাবনাকে শ্রদ্ধা রেখে লিখেছেন প্রচুর বই শিশুদের জন্য। লেখার স্বীকৃতি সুরোপ পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরষ্কার, একুশে পদকসহ নানান রকম পদক। আমাদের আজকের আড্ডা সেই মহীয়ান পুরুষের সাথে।
সম্পর্ক- রোহিঙ্গা বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি?
আসাদ চৌধুরী- এটা অনেক সাংঘাতিক একটা বিষয়। এটার অনেকগুলো দিক আছে। এর একটা দিক হচ্ছে আলাউল দৌলত কাজিরা যেখানে সাহিত্য চর্চা করেছেন, এরা সেখানকার মানুষ কিন্তু আজকে অসহায় এর মতো চলে আসছে। ধর্মের দিক থেকে এরা মুসলমান আর ভাষার দিক থেকে এরা মোটামুটি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে ১৯৭৭ থেকে এরা বাংলাদেশের অংশ হতে চেয়েছিলো এবং পাকিস্তানের অংশ হতে চেয়েছিলো কিন্তু তখনকার মুসলিম লীগ এটা কে গুরুত্ব দেননি। তারপর ৭৭ থেকেই এরা বাংলাদেশে আশা শুরু করেছে। তখন বাধা দেয়া হয়নি আর এখন এতোগুলো লোক চলে আসছে। এদের কে সরকার খাওয়াচ্ছে, পড়াচ্ছে। আমাদের জাস্টিন ট্রুডোর মতো অবস্থা রেফুজিদেরকে পাঁচ হাজার করে দিচ্ছে আর যারা পেনশন এ আছে তাদের কে তিন হাজার এর বেশি দিচ্ছে না। তো বাংলাদেশের মানুষ নিজেরাই হিমশিম খাচ্ছে সেক্ষেত্রে এদেরকে ঢুকতে দেয়া উচিত হয়নাই। তার মানে কি ওখানে বসে মরবে। তাদের কে প্রতিহত করার ব্যাপারটা ছিল। সব চেয়ে বড় কথা আশা টাকে বাধা দিতে পারেনি সরকার। এখন গোটা পৃথিবী অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। এদের জন্য স্বাভাবিক ভাবেই মানবঅধিকার নষ্ট হচ্ছে এতে কোনো সন্ধেও নাই। এটা মায়ানমার এর ব্যাপার, এখানে মায়ানমারের নিজস্ব একটা ভূমিকা আছে এবং আমরা জানি যে সেখানে সূচি কি করছে না করছে। আর্মি ক্ষমতা চালাচ্ছে যেভাবেই হোক না কেন। স্বাভাবিক গণত্রান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলছে না দেশটা। কাজেই সব মিলিয়ে সত্যি সত্যি খুব কষ্টকর ব্যাপার গোটা পৃথিবীর জন্য। আজকে ইসরাইল অথবা সিরিয়া গোটা পৃথিবীতে
যেভাবে আলোচিত অথবা আলোড়িত তারচাইতে ও অনেক বেশি রূঢ় হচ্ছে এই রোগিঙ্গা ইস্যু। গোটা পৃথিবী ইদানিং সচেতন হচ্ছে এটাও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটা সাফল্য বলে আমি মনে করি। এটলিস্ট গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে।
সম্পর্ক- আপনি যেটা বললেন যে ঢুকতে দেয়া উচিত হয়নি? বাংলাদেশ যদি ঢুকতে না দিত সেই ক্ষেত্রে এই মানুষগুলোর কি হতো? অন্য কোনো দেশ তো এগিয়ে এলো না।
আসাদ চৌধুরী- বাকি সব দেশগুলোর এগিয়ে আশা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার উপরে। বাংলাদেশের আশপাশে কে আছে? এক আছে ভারত, আর ভারতের সাথে মায়ানমারের সম্পর্ক খুব ভালো, ওরা তো ব্যবসা করছে এক সাথে। মানবিক একটা সম্পর্ক আছে যে মানুষ নির্যাতিত হলে মানুষের তার জন্য করুণা, মায়া, মমতা এগুলো থাকে সেটা করছেনা, সুষমা গেলো মোদী গেছেন কি হলো? এখন জাতিসংঘের লোকও যাবেন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়াও গেছে বরংচ প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার নিউজ টা একটু বেশি ছাপা হয়েছে। এছাড়া কোনো লাভ নেইতো। ঢুকতে দেয়ার অর্থ হচ্ছে কি সামরিক বাহিনী সোজা কথা। ঢুকেছে কি করে যে কিচ্ছু হবে না। ’৭৭ সাল থেকে যদি ওরা পাঁচটা গুলি মারলে আমরা যদি একটা গুলি মারতাম তাহলে আজকে এমনটা হতোনা। আমি এটা এভাবে সরাসরি বলতে চাইনি কিন্তু বলতে হলো। এটা গায়ের জোরের ব্যাপার ওরা মারছে আমরা দেখলাম আর বললাম আয়। ৭ থেকে ৮ লক্ষর মতো মানুষ এসেছে। আমরা চিন্তা করলাম না যে এতোগুলো মানুষ আমাদের রাখার মতো সামর্থ আছে কিনা আর তাছাড়া সবাই যে এখানে নির্যাতিত হয়ে আসছে তা কিন্তু নয়। এখানে কিন্তু প্রচুর ক্রিমিনালরাও আসছে। অনেকেই ইয়াবা ব্যবসা থেকে শুরু করে কিনা করছে। তাছাড়া কক্সবাজারের পরিবেশ বিপন্ন করছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে কি হয়েছে। মানে জামাত সরাসরি নাই কিন্তু দেখা যাবে যে সৌদি আরব থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় যারা বাঙালী গেছেন অধিকাংশই রোগিঙ্গা। বিন লাদেনের যে ব্যবসা সেইখানে যারা ম্যানুয়াল লেবার দেয় আমার মনে হয় তারা অধিকাংশই চট্টগ্রামের রোহিঙ্গা।
সম্পর্ক- সরকারের কি করা উচিত বলে মনে করেন ?
আসাদ চৌধুরী- যা করছে তাই করবে। এছাড়া আর কি করবে ধৈর্য ধরতে হবে। যদি ক্লাসে না যেতে চায়। আজকে চায়না চুপচাপ বসে আছে। রাশিয়া একটা ধমক দিলে কবে ঠিক হয়ে যায়। রাশিয়া, চীন, ভারত এরা কিছু বলছেনা। আমেরিকা লোক দেখানো একটু ভঙ্গি করছে কিন্তু লোডটা বাংলাদেশ নিয়ে যাচ্ছে।
সম্পর্ক- আগামী প্রজন্মর জন্য মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যদি কিছু বলতে বলি কি বলবেন?
আসাদ চৌধুরী- অসম্ভব কি বলবো। প্রথমত ওরা নিজের ভাষা থেকে বঞ্চিত, দেশ থেকে বঞ্চিত। এই গাছগুলো পরিচিত, পরিবেশটা পরিচিত, আকাশটা পরিচিত। বাংলাদেশের সবকিছুই মোটামুটি অপরিচিত ওদের কাছে এবং বাংলাদেশ কে একটু অবজ্ঞার চোখে দেখার অভ্যেসটা কিছুটা আছে, দেখেছে ইংরেজি ভালো বললে সবাই খুশি হয়। একদম ছোট্ট একটা বাচ্চা যে এখনো ইংরেজি আলফাবেট পড়তে পারেনা কিন্তু সেও ফ্লুয়েন্টলি ইংরেজি বলে যাচ্ছে। স্কুলে তো যায় চার পাঁচ বছর থেকে। যা ও কিছু বাচ্চা ঘরে দু’একটা বাংলা বলছে তারা বাংলা ক্রিয়াপদটাকে ব্যবহার করছে ইংরেজির মতো করে। শুধু তাই নয়, আমি তো গভীরভাবে লক্ষ্য করছি। মোর ওভার এদের ফুড হ্যাবিট ও নাই। এখানে প্রচুর মানুষ এসেছে রিফ্যুজি হয়ে যেমন সিরিয়া, মেক্সিকানদের মতো। রিফ্যুজি আর সেটেলারদের মধ্যে যে পার্থক্য, এগুলো বলে লাভ নাই। এগুলো তর্ক করার বিষয় না। ফিউশন বলা যায়। অনেক কিছু বলা যায়। কিন্তু সমস্যা অনেক, এটা আমার মতো লোক এতো সহজে এই সমস্যার সমাধান বলতে পারবে না। কারো পক্ষে বলা সম্ভব না। যদি ভিতরে না যায়। এটা অনেক গভীর ব্যাপার তবু ভালো যে বাঙালীরা এখন মূলধারার রাজনীতিতে এগিয়ে আসছে। এবার যেমন ডলি বেগম এমপিপি হলেন। এটা একটা শুভ লক্ষণ। যে মূল রাজনীতির সঙ্গে আসছে। এখানের মূল রাজনীতির সঙ্গে থাকতে হবে, মূল ভাষার সাথে থাকতে হবে। এমন কি এখানে যদি ভালো সাইন করতে চায় তাকে ভালো ফরাসিও জানতে হবে। এটা আমার ধারণা। হয়তো আমার ধারণা ভুল ও হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে হবে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের অত্যাচারের কথা এখনো ভোলেনি। রক্ষীবাহিনী থেকে আরম্ভ করে নানা রকম অত্যাচারের কথা মানুষ এখনো মনে রেখেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী পক্ষ মনে হয় যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেলো। দীর্ঘদিন রাজনীতি প্রশয় পেয়েছে এখনো পাচ্ছে। এখনো আওয়ামী লীগের সময় নির্বাচন সামনে মৌলবীদের দাম বেশি। ওদের কাছে প্রগতিশীলদের চাইতে মৌলভীদের দাম অনেক বেশি। তালেবানদের দাম অনেক বেশি।
সম্পর্ক- কোন দৃষ্টি কোন থেকে?
আসাদ চৌধুরী- ওদের মধ্যে দু’একজনকে মন্ত্রী করে রেখেদিছে আর ভাবছে প্রগতিশীলরা ওদের সাথে আছে। প্রগতিশীলরা আলাদা চিন্তা করতে পারছে না। এটা হচ্ছে দুর্ভাগ্য। আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত একটা তৃতীয় ফ্রন্ট হতে পারলো না। যেখানে কামাল হোসেন এবং বদরুদ্দোজার মতো লোক আছে। এরা কি করছে। এরা অত্তান্ত সুশীল একটা গণতন্ত্র চাচ্ছে, সব কিছু ধোয়া পরিপাটি একটা গণতন্ত্র। এতো সোজা। কামাল হোসেন দশ দিন জনগণের সাথে রাজনীতি করেছে নিজের পেশা ছেড়ে দিয়ে, বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তো করেছেন। এতো সোজা রাজনীতি কি হয়েছে? শুধু খবরের কাগজে নিউজ ছাড়া। এই যে সুশীল ভাব। গণতন্ত্রের সাথে সুশীল ভাবের কোনো সম্পর্ক নাইতো। তৃতীয় ধারা এরা জিন্দিগিতে পারবে না, তৃতীয় ধারা বলতে আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি বিরোধী বড়োজোর একটা মোর্চা হতে পারে এর বেশি কিছু হবে না। শুনতে খুব খারাপ লাগছে কিন্তু কিছু করার উপায় নাই। টিআইবি রিপোর্ট থেকে একটা কথা বলি। এই যে ঋণখেলাপির ব্যাপারটা, বিএনপি’র আমলে কত ঋণখেলাপি ছিল আর এখন ঋণখেলাপির পরিমাণটা কত। স্টেট ব্যাংকার টাকাটা কিন্তু বিএনপির আমলে চুরি যায়নি। আজকে দেশের কি অবস্থা যে থানার ওসির কাছে গিয়ে ছাত্র লীগের নেতারা চাঁদা চাইছে। এই যে বেপরোয়া, এই যে লুটতরাজ করার প্রবণতা সহ্য করতে পারছে। গোটা জাতি সহ্য করছে। কত দিন করবে জানি না।
সম্পর্ক- কেন হচ্ছে এরকম ?
আসাদ চৌধুরী- কারণ কোনো সুস্থ রাজনীতি হচ্ছে না। সত্যিকারের কোনো বিরোধী দল নেই। সাজানো পাতানো বিরোধী দল দিয়েতো রাজনীতি হয় না। বিরোধী দল বলতে যদি বিএনপিকে ধরা হয়Ñ বিএনপি এখনো পাকিস্তানী পতাকা বহন করতে পারলে খুশি হয়। সেই ক্ষেত্রে গোটা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে কি আছে আওয়ামী লীগ ছাড়া। আওয়ামী লীগ যত খারাপ করবে বিএনপি ততো জনপ্রিয় হবে এবং আওয়ামী লীগ খারাপ করবেই।
সম্পর্ক- এই রকম করে ভাবছেন কেনো যে আওয়ামী লীগ খারাপ করবেই ?
আসাদ চৌধুরী- আর উপায় নাইতোরে। একক একটা পার্টি যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে ঘুরে ফিরে একনায়কত্ব হবেই। একটা দারোয়ানকে অ্যাপয়েন্ট করতে গেলে সেখানেও যদি হাসিনার মতামত নিতে হয়, তাহলে কি করে হবে। আমি হাসিনাকে বে]ম
দিচ্ছিনা সোসাইটির কথা বলছি, বরং আমি বলবো যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মর্যাদা কিছুটা হলেও এই ওর্ড সিচুয়েশন এর মধ্যে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে সেটা আমার ধারণা মে বি আই এম রং। এই যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, রাজাকার আল বদর, যুদ্ধপরাধীর নাম দিয়ে যাই হোকনা কেন একটা বিচার হচ্ছে, এগুলো করছে ইটস নোঁ এ মেটার অফ জোক। এটা এত সোজা না, যেখানে গোটা পৃথিবী এগুলো চায় না, সেখানে এগুলো করতে পারছে, করেছে, এগুলো কম কথা নয়। এই কানাডাতে বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামি চৌধুরী আছেন। এইখানকার স্থানীয় সংবাদপত্র থেকে যা জানলাম, রিসেন্টলি প্রধানমন্ত্রী যখন এলেন তিনি কানাডার প্রাইম মিনিস্টারের কাছে তদবির করেছেন তাকে ফিরিয়ে নেবার জন্য।
সম্পর্ক- আপনার কি মনে হয় কানাডিয়ান সরকার তাকে ফেরত দেবে ?
আসাদ চৌধুরী- আমি এই ব্যাপারে বলতে পারবো না। তবে আমার মনে হয় কানাডা যখন টের পাবে যে লোকটা দেশে গেলে তার ফাঁসি হবে তখন কানাডা সরকার তাকে কিছুতেই যেতে দেবে না। কারণ সে কানাডার নাগরিক। সে বাংলাদেশের নাগরিক না। যেমন তারেক বাংলাদেশের নাগরিক না কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি, চাই-বা না-চাই। যাই হোক একদম সরাসরি বলি কানাডা হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে সত্যি সত্যি গণতন্ত্র প্রাকটিস হচ্ছে। যেখানে বিদেশিরা এসে কয়েক বছরের মধ্যে নিজেকে আইডেন্টিফাই করতে পারে এবং অন্যান্য দেশে গণতন্ত্রের কথা বলছে ঠিকই তাদের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আছে। কানাডায় সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রাকটিস হয়। এখানে প্রায় ১৬০টির মতো ভাষা আছে এবং সরকার কিন্তু প্রশয় দেয়, প্রত্যেকটা কমিউনিটিকে আলাদাভাবে রেস্পেক্ট দেয়। এই যে ধর্মীয় সম্প্রীতি এটা মৌখিক নয়, গণতন্ত্র মার্কা নয় এটা জেনুইন এটা ভোটাভোটির জন্য না। এখানে চরমসহিংসতা আছে। তার ফলেই একুশে ফেব্রুয়ারিকে যে মাতৃভাষা দিবস পালন করতে হবে সেটা এখান থেকেই কেন হলো? এটা কিন্তু আমেরিকা কিংবা ইংল্যান্ড থেকে হয়নি, যেখানে অনেক বছর ধরে বাঙালীরা আছে বরং এখানকার বাঙালীদের চাইতে সেখানকার বাঙালীরা অনেক বেশি সর্মভ্রত। এখানে হবার কারণ হচ্ছে এখানকার সোসাইটি, এখানকার সরকার জনগণের ইচ্ছাটাকে ও তাদের ধর্মটাকে সম্মান করে। তো এটা যখন হয় স্বাভাবিকভাবেই আজকে ভাষা আন্দোলন নিয়ে হচ্ছে এবং আগামীতে এখানে বাংলাদেশের শহীদ মিনার হতে যাচ্ছে। এখানকার যে লিবারেল পার্টির যে এপিপি ছিলেন, আমি যদি ভুল না করে থাকি তিনি কথা দিয়েছিলেন শহীদ মিনার করবেন কিন্তু তিনি এবার হতে পারলেন না। তারপরেও কিন্তু শহীদ মিনার হবে, যারাই আসছে ক্ষমতায় তারা করবে এটা, তার কারণ গণতন্ত্র আছে এখানে আর গণতন্ত্র থাকলে এটা হয়। এইযে আজকে আমি যেই কথাগুলো বলছি হাসিনা সম্পর্কে, বাংলাদেশের সরকার সম্পর্কে, বিএনপি সম্পর্কে দেশে থাকলে সেটা বলতামনা। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও এভাবে খোলামেলা কথা বলতামনা।
সম্পর্ক- সেটা কি আপনার নিরাপত্তাহীনতার কারণে?
আসাদ চৌধুরী- ডেফিনেটলি, বাংলাদেশে কি সিকিউরিটি আছে? বাংলাদেশে কতগুলো লোক এই মাদকবিরোধী করে মেরে ফেললো, আর মাদক স¤্রাটরা সব দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতিই তো একমাত্র গণতন্ত্র নয়। গণতান্ত্রিক মনভাবটাই বাংলাদেশে নাই এবং এটা খুব দুঃখজনক। এখানে সেটা আছে। এইতো সেদিন পহেলা বৈশাখের একটা প্রোগ্রামে গেছি। এখানকার একটা স্কুলে হয়েছে। সেখানে স্কুল প্রাঙ্গনে ঢুকেই মনে হচ্ছিলো একটা মিনি বাংলাদেশ। আমি সেখানে বাংলায় কথা বলেছি, দু’একটা কথা ইংরেজিতে ছাড়া এবং ওরা এটা খুব এনজয় করেছে। স্কুল এর প্রিন্সিপাল পায়জামা পাঞ্জাবি পরে আসছেন এবং অন্যরা শাড়ি পরে আসছে। ডানফোর্থ থেকেও প্রচুর গেস্ট এসেছেন এবং সব মেয়েরা শাড়ি পরে আসছে। এখানে এমন করে পহেলা বৈশাখ পালিত হয়, বাংলাদেশের কোন স্কুলে এমন করে পহেলা বৈশাখ হয়? মানুষ যখন মাইনোরিটি হয় তখন সে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস এ ভোগে তার ফলে সে আইডিন্টিটিটাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। এখানে তবু হচ্ছে বাংলাদেশে সেটা হচ্ছে না। এটাই হচ্ছে আমার বক্তব্য। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম, যখন সালাম, রফিক এরা আন্দোলন করে একুশে ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস পালন করতে পারলো তখন বাংলা একাডেমি একটা বই বের করার চেষ্টা করলো ভাষা আন্দোলনের উপর কিন্তু পারলোনা। ক’বছর হয়ে গেছে, আজ পর্যন্ত বের হয়নি। একজন লেখক চাইলেন, আমি তার নাম বলবো না তিনি বোধ হয় তিরিশ কি চলি]শ হাজার টাকা চাইলেন, বাংলা একাডেমির এত বাজেট নাই যে ৩০/৪০ হাজার টাকা দেবে। বাংলা একাডেমি না হয় পারলো না কিন্তু মিনিস্ট্রি অফ ফরেন এ্যাফেয়ার্স কি করলো, কালচারাল এফেয়ার্স কি করলো, এডুকেশন মিনিস্ট্রি কি করলো, ইনফরমেশন কি করলো? এতগুলো বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনো আটকে আছে। মুক্তিযুদ্ধের উপর যতগুলো বই বের হয়েছে সবগুলো বক্তিগত উদ্যোগে হয়েছে। তবে হ্যাঁ শেখ মুজিবের উপরে বই হচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপরে তো বই আমি প্রথম লিখি বাচ্চাদের জন্য। সেই বইটা বাংলাদেশ সরকার আজ পর্যন্ত একটা কপি করেন নাই। ইয়েস আই মিন ইট। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেও একটা কপি নাই। সেটাতো গভার্নমেন্ট চালায় না। এগুলো বলতে হলে হাজার কথা বলতে হয়। এগুলো হচ্ছে আমাদের মিননেস, অসততা, নিচুতা, লেগ পুলিং, কুনওয়ের ব্যবহার এগুলোর জন্য হচ্ছে। মানুষ এখন খুব নীচু হয়ে গেছে রে। এটা সত্য কথা যে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে এক ধরনের সেটা আমি চাইবা না চাই। বাংলাদেশে, পরিষ্কার করে বলি – সাখাওয়াত হোসেন খান যার হাতে ঢাকা ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ডিপার্টমেন্টটা নতুন করে গড়ে উঠলো। বাংলাদেশ হবার পরে তো তিনি তার নাতিকে যঁঃ মানে কুঁড়েঘর দেখতে
৬৭ কিলোমিটার ড্রাইভ করেছে কিন্তু একটি কুঁড়েঘর খুঁজে পায়নি। আরো একটু পরিষ্কার করে বলিÑ আন্দোলন কেন সেভাবে হচ্ছে না কারণ মানুষ এখন দু’বেলা খেতে পারছে। এতসোজা আন্দোলন করা, ইস্যু ছাড়া আন্দোলন করবে কে? হাসিনার জায়গায় খালেদা বসবে কেউ রাজি না, মনে করে আছে থাকুকনা ক্ষতিকি! এখন মদ্ধবিত্ত সাধারণ শিক্ষিত আদর্শের দিক থেকে গণতন্ত্র এগুলো অন্য ব্যাপার, সেগুলো প্যাকেট করে রেখে দেয়া ভালো। বেটার কেউ প্যাকেট করে রেখে দিক। এখন মানুষ দু’বেলা খেতে পারছে, চিকিৎসা পাচ্ছে তাহলে আন্দোলন কে করবে, কেনো করবে? আই টেল ইউ ফ্রাঙ্কলি ঢাকায় ভিক্ষা করছে এমন অনেক ভিক্ষুকের ঢাকায় ফ্লাট আছে, তাদের ছেলেমেয়েরা ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। এগুলো গল্পের মতো শোনাবে আমি গল্প শোনাতে চাইনা। ইটস এ ফ্যাক্ট আজকে মুক্তিযুদ্ধকে যে আমরা বড় করে দেখছি দ্যাটস ভেরি ইম্পরট্যান্ট থিঙ্কস কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে বড় করে দেখার পরে কি হয়েছে, বিনপি এখনো রাজনীতি করছে জামাতকে সাথে নিয়ে এবং এখনো সরকারকে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে ক্ষমতায় থাকতে হচ্ছে। কারণ ইলেকশন যদি ফেয়ার হয় তাহলে বিনপি চলে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নাই।
সম্পর্ক- এতো নিশ্চিন্ত করে কিভাবে বলছেন?
আসাদ চৌধুরী- জনগণ আওয়ামী লীগ বিরোধী বলে আর কিচ্ছু না। আওয়ামী লীগ বিরোধী হবার কারণ হচ্ছে এই যে বাস্তবতাগুলো। বিএনপি রাজনীতি করছে এবং বিএনপিকে সাপোর্ট করবে ইজ ইট নট এনাফ যে বাংলাদেশে এটাই হওয়া উচিত যে আওয়ামী লীগের মতো লোকের থাকা উচিত। জামাতের সমর্থ নিয়ে একটা সরকার হবে তার চাইতে জামাত কেনো আর্মি থাকুক না আবার আরো ১৫ বছর, আমি কি বোঝাতে পেরেছি। দিস ইজ কমন সেন্স শুনতে খুব খারাপ লাগছে কিন্তু উপায় নাই আর এগুলো বলা ছাড়া। আজকে এখানে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কানাডাতে মাঝে মাঝে পন্ডিতরা আসেন বাংলাদেশ থেকে আমিতো পন্ডিত নোই আমি সাধারণ মানুষ একটু লেখালেখি করি। সাধারণ মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করি। প্রকৃতির সাথে কথা বলি গাছের সাথে কথা বলি। আমার বাসায় কয়েকটা হার্ব আছে যেগুলো বাঙালী না ওগুলোর সাথে আলাপ করার চেষ্টা করি। এই যে ধরো এখানে তাকাচ্ছি একটা গাছও কিন্তু পরিচিত না। প্রকৃতির সাথে সেইভাবে সম্পর্ক যদি তৈরী না হয়। এখানে যারা বর্ন এবং যারা বড় হচ্ছে, প্রকৃতি একরকমভাবে তার ভিতর দিয়ে তৈরী হচ্ছে। “আসমান বইয়া কথা কয় জমিন বইয়া শোনে” মনমোহন দত্তের গান। বাঙালী মানেই হচ্ছে আসমান বইয়া কথা কয় জমিন শোনে এখানে আসমান বইয়া কথা বলে আর জমিন শোনে এই রকমটা কিন্তু না। এখানে ওই ছেলেটা বোঝে যার বয়স আট, নয় কি এগারো বছর সে জানে যাকে তার মা জোর করে বাঙালী বানাতে চাইছে। সে হ্যামবার্গার কোক খেতে পছন্দ করবে কিন্তু তাকে তার মা জোর করে ভাত খেতে দিচ্ছে কই মাছের ঝোল দিয়ে। এই যে ভাত খাওয়াটা মায়ের প্রেসারে হচ্ছে। একটা ঘটনা বলি ঈদের দিনের কথা, আমি আমার বিয়াইয়ের বাড়িতে গেছি অনেক মেহমান আসছে। সেখানে খাবারের মেনুতে নানাবিধ রিচ ফুডের পাশাপাশি লতি-কঁাঁঠালের বিচি দিয়ে শুটকিও ছিল, সেটা সবাই চেটেপুটে খেলো কিন্তু তরুণরা একজনেও টাচ করেনি। এই যে ফুড হেবিট এটাও কিন্তু দেশপ্রেমের একটা অংশ। আজকে এখানে বাংলাদেশিদের যেকারো বাড়িতে গিয়ে যদি আমি জিজ্ঞেস করি যে সরকার ফুড, মারহাবা, চক বাজার চেনেন তারা কিন্তু সবাই চেনে। কেনো চেনে? এখন যদি জিজ্ঞেস করি ওখানে বড় লেখকের একটা বাড়ি চেনেন একটা লোক ও কিন্তু বলতে পারবে না সে যত শিক্ষিতই সে হোকনা কেনো। কাম অন বেট উইথ মি। একটা ভালো বই এর দোকানের নাম বলতে পারবে না কিন্তু গ্রোসারির খবর জানে। যার ফলে কি হচ্ছে বাঙালী বই এর দোকানে আস্তে আস্তে ধর্ম পুস্তক, টুপি- জায়নামাজ, তজবি বিক্রি হচ্ছে সব ভারতীয় সিডি বিক্রি হচ্ছে। কয়টা বাংলা বই আছে হুমায়ন আহাম্মেদ এর কয়েকটা বই আরকিছু বই আছে আমিতো ঘুরি এসব দোকানে আমি জানি। কিছু ভালো বই আছে তাই যথেষ্ট যে কিছু আছে। বাকিগুলো ছেলেমেয়েদেরকে শেখাতে হবে। আমি নিজের কথা বলতে পারি বলা উচিৎনা যদিও। আমি রিএন্ডার্সন এর অনুবাদ করেছি। ইসব এর গল্প অনুবাদ করছি এখন। এখন তারপরে ব্রাদার জার্মানি, গ্রিম ব্রাদার্স এর গল্প অনুবাদ করেছি। অ্যান্ডার্সন এর তো প্রচুর গল্প অনুবাদ করেছি আমি এই গল্প গুলো স্লো। তরুণরা এখন ফাস্ট গল্প পড়তে চায়। টেলিভিশনে আমরা দেখতাম টারজান, স্লো যত যাই কিছু বলিনা কেনো এখন বাচ্চারা সেকেন্ড এর ভিতরে তিনটা শট চেঞ্জ হচ্ছে সেসব ছবি দেখতে চায়। এখনকার গ্রুপ হচ্ছে জম্বি গ্রুপ। জম্বি জেনারেশন। এটা নিয়ে গোটা পৃথিবী চিন্তা করছে। আমেরিকা তো খুব সিরিয়াসলি ভাবছে যে কি করা যায়।
সম্পর্ক- টেকনোলজি কি আমাদের গ্রাস করছে?
আসাদ চৌধুরী- এক্সাক্টলি, আরো অনেক বিষয় আছে। এটা আমার মতো লোকের পক্ষে বলা সম্ভব না। আমি অতটা ইন্টিলেকচুয়াল না। আমি সোসালজি অতটা জানিনা। আমি পলিটিক্যাল সাইন্স অতটা বুঝিনা, ফিলোসফির এতোগুলো ধারা আমার জানা নাই। সমস্যাটা একটা জায়গায়না এগুলো শোররোইকিক না। বিজ্ঞান, দর্শন এগুলো যেখানে যে স্তরে থাকার কথা ছিল তার চাইতেও টেকনোলজি অনেক এগিয়ে গেছে। টেকনোলজি সুবিধা দেয়া ছাড়া আর কি করতে পেরেছে।
সম্পর্ক- সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাওতো দিচ্ছে।
আসাদ চৌধুরী- অসুবিধা দিচ্ছে কোথায়। যন্ত্রে রূপান্তর হচ্ছি আমরা ব্যবহার না করলেই হলো। এই কানাডাতেই একদল লোক আছে যাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ নাই। আমরা সেক্সপিয়ারের স্টার্টফোর্ড দেখতে গেলাম। সেখানে চার- পাঁচটা গ্রাম আছে যেখানে বিদ্যুৎ নেই। মানুষ এখনো ঘোড়ার গাড়ি চালায়। টেলিফোন ব্যবহার করেন না। কানাডাতে একটা জাতি এভাবে চলছেতো। আমি খেলাম না তার ফলে সব ঠিক হয়ে গেলো নটনেসেসারিলি আরেকজন তো খাচ্ছে। আমি কি তাকে বাধা দেব এই জন্য তাত্ত্বিক এবং এক্টিভিষ্ট এর মধ্যে তফাৎ আছে। বাংলাদেশে এই তফাৎটা আমরা কেউ মেইনটেইন করছি না, এখানে এটলিস্ট চেষ্টা করে।
সম্পর্ক- আপনার কি মনে হয় দ্বিতীয় প্রজন্মকে আমরা ফেরাতে পারবো?
আসাদ চৌধুরী- এতো সোজা না নেক্সট জেনারেশন মানে কি আমি বলি এসব কথাটা কতখানি বলা উচিত আমি জানি না ইন্ডিয়া থেকে একটা ইঞ্জিনিয়ার আসে সাত দিন বসে থাকে না কিন্তু বাংলাদেশ থেকে একটা ইঞ্জিনিয়ার এলে তার ইঞ্জিনিয়ার্সের জব পেতে কত বছর লাগে তারপরও পায় না, তার কারণ ইন্ডিয়া থেকে একটা ইঞ্জিনিয়ার এলে জায়গা পাচ্ছে না দূর্গা বাড়িতে রাখবে আগে থেকেই সব ঠিকঠাক করা আছে। আসলো চাকরি হয়ে গেলো আর বাংলাদেশ থেকে কেউ আসলো আত্মীয়-স্বজনের মুখ শুকিয়ে গেলো। যে কয়জন আসছে কয়দিন থাকবে কি করবে না করবে। তারপর যদি দেখে যে আসছে তার বয়স পঁয়ষট্টি বছর হয়ে গেছে তখন বলবে যে যাক ওষুধের পয়সাটা লাগবে না এইতো শুরু হয়ে গেলো কোনো পরিকল্পনা নাই। পরিও নাই কল্পনাও নাই বাঙালীর।
সম্পর্ক- এর মানেকি বলতে চাচ্ছেন আমরা কেউ কাউকে সাপোর্ট করিনা ?
আসাদ চৌধুরী- নটনেসেসারিলি। প্রয়োজন হয় নাই। অন্তত ডলির ক্ষেত্রে তো দেখা গেলো প্রয়োজন হয়েছে, যেখানে বাঙ্গালী একটা
প্লাটফর্মে এক হয়েছে। এটা একটা ব্রেক থ্রু। অন্তত এতো বছর পরে হলেও হয়েছে। এখানে ভারত থেকে লোক এসেছে কবে থেকে শিকাগোতে, স্বামী বিবেকানন্দ এসেছেন শতাব্দী আগে, একশো বছরের বেশি হয়েছে। আমরা আসা শুরু করেছি ১৯৭৫,৭৬-এর পরে। ’৭২-এর পরে আসছে হার্ডলি আটটা কি দশটা পরিবার পাওয়া যাবে এখানে। এখন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে এখানে মূলধারাতে যাওয়ার লোক বেড়েছে। ডলিকে দেখে এই জেনারেশন উৎসাহিত হবে। ডলির এই ব্যাপারটা একটা মুভমেন্ট। এখানে বসে আওয়ামী লীগ, বিএনপি করে কি হবে। সে জন্যই আমি বলি না যে, ডলি ইজ ইলেক্টেড আমি বলি ডলি ইজ এ্যা মুভমেন্ট। আমি মিন করি এটা। এখানে বসে খালেদা, হাসিনা করে মারামারি করে কি হবে। এই বিষয়টা বুঝতে আরো অনেক সময় লাগবে, প্রবলেম হচ্ছে এটা।
সম্পর্ক- বাংলাদেশে না এখানে বেটার ফিল করেন ?
আসাদ চৌধুরী- বাংলাদেশে বেটার। আমিতো এখানে কথা বলার লোক পাচ্ছি না। আমি গত দু’দিনে কোনো ফোন রিসিভ করিনি। আমার সাথে কেউ কথা বলতে চাইলে আমার স্ত্রীকে ফোন করেন। তিনি আমাকে দেন, তাহলে আমি কথা বলার সুযোগ পাই। আমার ফোন আমি দিয়ে দিয়েছি খুব বিরক্তিকর, অনেক টেকনোলজি আছে যেগুলো আমি ব্যবহার করতে পারি না। খুব ছোটোখাটো হলে রাজি আছি রিসিভ করবো আর ফোন করবো, দ্যাটস অল। এখানে যাদের স্মার্ট ফোন নাই বাচ্চারাও তাদের মর্যাদা দিতে রাজি না। বাচ্চারা ফোনটা হাতে নিয়ে যখন দেখে স্মার্ট ফোন না তখন সঙ্গে সঙ্গে ফেরত দিয়ে দেয় চেহারাটা খারাপ করে। অবসর নিয়েছি ভাবলাম দেখিনা কেমন লাগে। তাছাড়া আমার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিরা এখানে আছে। আমি জার্মানিতেও থেকেছি তিন বছর। ভয়েস অফ জার্মানিতে ছিলাম। তারপর আমেরিকায় তিন মাস করে দু’বার থেকে গেলাম। অস্ট্রেলিয়াতেও ঘুরে আসলাম কিছু দিন আগে। লন্ডনেও বেশ কয়েকবার গেলাম, এই সব জায়গার চাইতেও বরং কানাডা আমার কাছে ফার ফার বেটার মনে হয়েছে। কারণ এখানে আমি আমার সংস্কৃতি নিয়ে যা কিছু করি কারো কোনো মাথা ব্যথা নাই। এখানে আমার যেটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে অন্য কমিউনিটির চটবে হয়তো, গুজরাটি আর সিলেটিরা নিজেদের ঐতিহ্য সাধ্য মতো টিকিয়ে রাখতে পারে আর বাকিরা পারবে না। চিটাগংয়ের কমিউনিটিরা চেষ্টা করছে এখন। আর নেক্সট জেনারেশন এর কথা যদি বলি ওরা অনেক ভালো করছে এবং করবে। আই এম দা লাস্ট ম্যান টু বিলিভ যে নেক্সট জেনারেশন খারাপ করবে। ইন্ডিভিজুয়ালি অনেক ভালো করবে। এখানে ম্যারিটেড ছেলেমেয়ে অনেক আছে যারা সরকারের স্পেশাল কেয়ার এ পড়াশোনা করছে। কারণ এরা বুঝতে পারে একসাথে বড় হচ্ছে একসাথে পড়াশোনা করছে। এই সোসাইটি তার চেনা ভাষাটা তার জানা। আমরা অনেক কথা বুঝবোনা ওরা যখন নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে এবং আমার সাথে যখন ইমোশনাল কথা বলবে আমি সব কথা বুঝবো না কারণ ওদের উচ্চারণ আলাদা। বাংলাদেশ থেকে একটা পন্ডিত এসে এখানে চাকরি পায় না কেন, কারণ ভাষা। পোলাপান হাসে বলে স্যার কি বলেন বুঝি না। এর কারণ এই না যে সাবজেক্টটা উনি জানেন না। ল্যাঙ্গগুয়েজে ইস দা ফোর্স। কলকাতাতো বাংলাদেশের রাজধানী না। ঢাকা কেনো রাজধানী হয়েছে এই রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য। বাংলা ভাষাটা একটা জাতির জন্ম দেয়।
পৃথিবীতে এই ঘটনাতো একমাত্র বাঙালী দেখালো এবং সেই ভাষা অবজ্ঞা করছে বাঙালী ছাড়া আর কেউ না। বাংলাদেশের সবচাইতে শিক্ষিত লোকজন তাদের ছেলেমেয়েদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ পড়ায় এবং বাংলা জানে না তারা। আমাকে ঢাকার অক্সফোর্ড স্কুল এ প্রায় দু’বার কি তিনবার বক্তিতা দিতে বলা হয়েছে। পোলাপানরা হা করে শুনছে আমার কথা। সেখানে ভাবা যায় ফিজিক্স এ হায়েস্ট মার্ক ওয়ার্ল্ডএ, কেমিস্ট্রিতে হায়েস্ট মার্ক বাংলাদেশ কিন্তু সামগ্রিকভাবে, শুধু এডুকেশনতো না টোটালটিতে বাঙালী স্টাব্লিস্ট হতে সময় নেবে। এখানে একটা জিনিস এখনো আছে এবং থাকবে। পরশ্রীকাতরতা বাঙালীর এই দোষটা কিভাবে যাবে আমি জানিনা। তবে যাবে কিন্তু আরো অনেক সময় নেবে, যখন দেখবে যে একটা ইতালিয়ান
অথবা মেক্সিকানদের সঙ্গে পেরে উঠছে না তখন বাধ্য হয়ে যাবে তখন একজন আর একজনকে টানবে। আমার কথা শুনে অনেক কিছু মনে হতে পারে। যত যাই কিছু বলিনা কেন আমি কিন্তু অনেক আশাবাদী বাংলাদেশকে নিয়ে। আগামী দশ বছরের মধ্যে বাঙালীরা প্রত্যেকে যখন দুবেলা দু’মুঠো খেতে পারবে, প্রত্যেকে যখন সম্মান নিয়ে দাঁড়াতে পারবে তখন আর লাঠি আর বুলেট দিয়ে কাজ
হবে না।
সম্পর্ক- এই লাঠি আর বুলেটটা দিচ্ছে কারা?
আসাদ চৌধুরী- সরকার দেয়। সরকার কি আকাশ থেকে আসে সিন্ডিকেট দেয় পলিটিক্স করে ক’জন। আজকে রাজনীতি করছে এর মধ্যে পলিটিশিয়ান কয়জন ২০% ওতো না ৮০% নন পলিটিশিয়ান যদি পলিটিক্স করে তাহলে কি হবে। বাংলাদেশ যে উন্নয়নে গণতন্ত্র বলে আমি মানি না কেনো কারণ উন্নয়নের গণতন্ত্র¿, গণতন্ত্র না।
সম্পর্ক- তাহলে কোনটা গণতন্ত্র আপনার কাছে?
আসাদ চৌধুরী- গণতন্ত্র হচ্ছে সন্মান, মর্যাদা। ব্রিটিশ আমলে, ইভেন পাকিস্তানী আমলে মানুষের যে মর্যাদা ছিল। একজন স্কুল মাস্টারের, একজন ভালো গায়কের, একজন ভালো শিল্পীর, তার যে সম্মান ছিল, এখন বাংলাদেশের একটা তৃতীয় শ্রেণীর পলিটিশিয়ানের তার চাইতে অনেক বেশি সন্মান, যে পাঁচটা মস্তান রাখতে পারে। যুদ্ধা পরবর্তীতে এসব ডেভলপ করেছে, কথা বলতে দেয়নি, মারতে গেছে মাস্টারদেরকে। হ্যাঁ এখন একটা কথা বলা যায়, যুদ্ধের পর একটা রিড হতে পারতো।
আর্মি ক্ষমতায় আসছিলো ’৭৫-এর পরে। এরা যদি একটু ভালো লোক হতো, একাত্তরের প্রতি যদি একটু শ্রদ্ধাবোধ থাকতো তাহলে কিন্তু এই অবস্থা হয় না, আজকে যেটা হয়েছে। বাংলাদেশের চেহারা একদম পাল্টে যেত যদি এদের দেশপ্রেম থাকতো। মানবিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা যদি থাকতো তাহলে সামরিক ক্ষমতায় বাংলাদেশের চেহারা একদম পাল্টে যেত।
সম্পর্ক- এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই, প্রবাসী বাঙালীরা কিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?
আসাদ চৌধুরী- চিন্তার ক্ষেত্রে। আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে চিন্তা। রাজনীতি হচ্ছে কি সবকিছু নিয়ে। কালচার একটা অর্থ ব্যয়, এগ্রিকালচার একটা অর্থ ব্যয়, আডমিস্ট্রেশন একটা অর্থ ব্যয় কিন্তু রাজনীতি হচ্ছে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। নলেজ তো অনেক প্রকার হয়। এন্সাইক্লোপেডিক নলেজ যেটা, সবরকম নলেজ থাকে যেখানে। বাংলাদেশের এটারই খুব অভাব। সমন্বয়ের অভাব, চিন্তার অভাব, গ্রহণ-বর্জনের অভাব। সব কিছু আটকে রেখে লাভ নাই, যেটার প্রয়োজন নাই সেটা ফেলে দিতে হবে, নাহলে ঘর বোঝাই হয়ে যাবে।
সম্পর্ক- এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে আপনার কি ভাবনা?
আসাদ চৌধুরী- খারাপ করবে না তারা। আই টেল ইউ ফ্রাঙ্কলি, যদি মেজর কিছু না হয় লাইক ককেশাস ভার্সেস রেস্। এই যুদ্ধ শুরু হতে অনেক দেরি আছে কানাডাতে। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা সেখানে এম্বাসি করেছে ভাবা যায়। যে এম্বাসি কেনো- সরকার আমাদের নাগরিক ভাবে না তাই এম্বাসি করলাম যদি এখন একটু কথাবার্তা বলে আমি গিয়েছিলাম ওখানে। ওদের সাথে কথাবার্তা বলেছি। তবুতো আছে, এখানে তো কোন এম্বাসি নাই। কারণ সবাই ইমিগ্র্যান্ট এখানে টুড্ররা আগে আসছে ডলিরা, আমরা একটু পরে আসছি। আমেরিকায় ভালো করছে বাঙালীরা। মূলধারায় রাজনীতি করছে। গরু-ছাগলের মতো আওয়ামী লীগ আর বিএনপি করে লাভ নাই তো এখানে, এখানে থাকলে এখানকার রাজনীতি
করবো।
সম্পর্ক- আপনিতো অনেক পেশায় যুক্ত ছিলেন। লেখালেখি, উপস্থাপনা, সাংবাদিকতায় বিভিন্ন ধারায় কাজ করেছেন কোন সত্তাটা বেশি ভালো লাগে?
আসাদ চৌধুরী- এই যে আড্ডা মারছি, আড্ডা খুব ভালো লাগে। ব্রাদার বলে এক ভদ্রলোক ছিলেন। ঢাকাতে একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন। উনি রবীন্দ্রনাথ, লালনের অনুবাদ করেছেন। তো উনি একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে আসাদ তুমি কি পরিচয় পেতে চাও ? তো আমি ওনাকে বললাম যে আমি মারা যাবার পর প্রতিবেশিরা বলবে যে লোকটা ভালো ছিল এটাই যথেষ্ট আমার জন্য এর বেশি কিছু না। খবরের কাগজে কি বললো আর ওমুকে কি বললো তার চাইতেও পাড়ার মুদি দোকানদার কি বললো সেটা আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে মুদি দোকানদার বলবে যে লোকটা ভালো ছিল এত টুকুই চাওয়া। প্রফেশন হিসেবে শিক্ষকতা আমার পছন্দের কারণ। নিজেও পড়তে অনেক ভালোবাসি। ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকেই জড়িয়ে গেলাম লেখালেখির সাথে। বাংলাদেশ হবার পরে
’৭১ এ যখন দেখলাম সুভাশ মুখোপাধ্যায় আমাকে চেনে বিষ্ণুদি আমাকে নামে চেনে তখন খুব খারাপ লেগেছে মনে হয়েছে
আই সুড রাইট। আমি অনেক সময় লিখেছি ভালোলাগা থেকে। অনেক সময় নিজের গরজে লিখেছি কিন্তু মানুষের অপমান আমি সহ্য করতে পারিনা। সে গণতন্ত্রের নামেই হোক, স্বাধীনতার নামেই হোক, আর ধর্মের নামেই হোক। মনুষত্বের অপমান এই যে বিনাবিচারে মেরে ফেলেছে মাদক ব্যাবসায়ী বলে, মারার পরে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, এ সমস্ত ফাজলামি মানুষের জান নিয়ে, সম্মান নিয়ে
দিস ইস টু মাচ। এগুলো আমার কাছে অসহ্য লাগে সে যেখানেই হোকনা কেন। আজকে ইহুদিরা ইসরাইলে যা খুশি তাই করবে আর সেটা দেখতে হবে বসে বসে। ট্রাম্প যা খুশি তাই করবে দেখতে হবে সেসব চুপ করে এটলিস্ট প্রতিবাদ করতে হবে তো। উই সুড প্রোটেস্ট ইট।
সম্পর্ক- এই যে দেশে যে মাদক এর নাম করে নিরিহ মানুষকেও মেরে ফেলেছে, সেখানে আপনি কি কোনো প্রতিবাদ করেছেন?
আসাদ চৌধুরী- আমি ওখানে বসেতো কিছু করতে পারবো না। আমি এখানে করেছি যেমন কিছুদিন আগে শাজাহান বাচ্চুকে মেরে ফেললো। ব]গার ছিল একজন অভিজিৎ এর মতো, দীপনের মতো তাকেও মেরে ফেলেছে আমি প্রতিবাদ করেছি। সেখানে আমি বলেছি যে আওয়ামী লীগ সরকার তালেবানদেরকে যতটা প্রশ্রয় দিচ্ছে। প্রগতিশীলদেরকে যদি ঐটুকু সম্মান দিতো তাহলে আজকে এই অবস্থাটাতো হয় না। আজকে কিন্তু অভিজিৎ ও দীপন হত্যার বিচার হয়েছে। এগুলো কি আকাশ থেকে আসে নাকি।
সেদিন আমার ওয়াইফ দেখালেন ফেইসবুক যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগালিজ করছে মিডিলিস্ট এর ছেলেপুলে। ওরা ১৮ হাজার টাকা বেতন পায়। খাওয়া দাওয়ার পর ১৫ হাজার টাকা দেশে পাঠায় আর বাংলাদেশে যারা শিক্ষিত শ্রেণী আসছে তারা জমি বিক্রি করা টাকা নিয়ে এদেশে আসছে। এরপর আর আমি কিছু বলবোনা। কার নিন্দা করো তুমি “এ আমার এ তোমার মা” রবীন্দ্রনাথ অনেকদিন আগে বলেগেছেন।
সম্পর্ক- আপনার কোন লেখা বা বইটা আপনার সবচেয়ে প্রিয় ?
আসাদ চৌধুরী- আমার কোনো কবিতাই আমার প্রিয় না, কোনো কবিতায় তৃপ্তি আসেনি এখনো। আমি এখনো অপেক্ষা করছি। যদি বইয়ের কথা বলো তাহলে ছোট্ট রাজপুত্র অনুবাদ এটা আমার খুব প্রিয় বই এবং তবক দেয়া পান ও আমার খুব প্রিয় বই।