তাহমিনা শহীদ, নিউ ইয়র্ক
মানুষের জীবিত কালীন সময়ে ওপারের জীবনটির অজানা এক সময়ের কথা ভেবে জাগতিক সুখ বিসর্জন দিয়ে ভোগবাদকে অস্বীকার করে একধরনের বৈরাগ্য নিয়ে চলার পক্ষপাতী একদল মানুষ।
আরেক দল মনের সুখে, প্রাণের আনন্দে সব কিছুকে উপভোগ করেই জীবনকে পার করবার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়। তারা ভাবেÑ যতক্ষণ জীবন ততক্ষণ স্ফূর্তিতে বাঁচো, পরের কথা পরে। পরের কথা আগে ভেবে লাভালাভের হিসেব করে জগতের আনন্দকে অস্বীকার করা কেন?
কেউ কেউ ভাবে, পর-জীবনের সুখই আসল সুখÑ তাই তার জন্য অপেক্ষা করাটাই কাজের কথা। এক ধরনের অজানা অশংকায় ভুগে, জুজুর ভয় নিয়ে এই দল নিজের এবং অন্যের জীবনকে নিরানন্দ করে তুলতে প্রয়াস পায়!
আমি এই দুই দলের মাঝামাঝি একটি জীবন বেছে নিয়েছি বলেই মনে করি। ‘বেছে নিয়েছি’ বললে হয়ত ভুল বলা হবে , বলতে পারিÑ আমি এমনি জীবনেই স্বাচ্ছন্দ্য অথবা অভ্যস্ত, বা এটাই আমার স্বভাবজাত ‘জীবনবোধ’।
আমার প্রায়শই মনে হয়Ñ বিনা কারণে হিংসা-বিদ্বেষে অন্ধ হয়ে অপরের বিন্দুমাত্র ক্ষতির কারণ হওয়াটার নামই মূলত ‘পাপ’।
প্রত্যেকের জীবনকে যার যার সাধ্যমত আনন্দময় করতে বাধা কোথায়, যদি তা অন্যের জন্য কোন ক্ষতির কারণ না হয়ে থাকে?
একটি মানুষ তাঁর নিজস্ব জীবনে আনন্দময় হয়ে বাঁচবে না কেন? তাঁর আনন্দটুকু আশপাশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়েই বা দিতে আপত্তি কোথায়?
পরের জনমের সুখ আর শান্তি লোভে পার্থিব জগতের সুখ, আনন্দকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিরানন্দ বাঁচবার যে তাড়না মানুষকে কিছুটা প্রাণহীন করে তোলে তারই বা সার্থকতা কোথায়? কিছু মানুষের এই ‘জীবনে থেকেও না থাকার’ প্রভাব তার আশপাশের মানুষগুলোকে যে নিরানন্দ করে দেয়, সেটাইত দ-নীয় অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে, কে জানে?
এসব ভেবে ভেবে মাঝে মাঝে কুল-কিনারা পাই না। আবার এও মনে হয়Ñ ‘¯্রষ্টা’ তো সবচেয়ে মহান, তিনি কেন সৃষ্টির সেরা মানুষকে জাগতিক আনন্দ উল্লাসের জন্য ‘মহা শাস্তির’ ব্যবস্থা করে একজন দ-মু-ের কর্তা হয়ে ভয়ংকর মূর্তি নিয়ে আমাদের জীবনের ওপারে বসে আছেন? মানুষকে সৃষ্টি করবার এই প্রহসনের প্রয়োজনই বা কি ছিল মহান এবং দয়াশীল এই ‘অপার শক্তির’? ¯্রষ্টা কি মানুষের বিবেক কেই তার জাগতিক কর্মকা-ের কাছে দায়ী রেখে বেঁচে থাকাকালীন সময়েই তাদের বিচার বা শাস্তির ব্যবস্থা করেন না?
আমার সমগ্র সত্তা তাই সজোরে বলে উঠেÑ ‘তিনি অবশ্যই মানুষের জীবনের সহজ আনন্দকে সহজভাবেই গ্রহণ করেন আর তাঁর প্রিয় এবং সেরা সৃষ্টির ‘সুখবোধে’ নিজেও সুখ পেয়ে থাকেন।