মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত সরোদবাদক ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) রাতে উত্তরার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খানের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। তিনি জানান, শাহাদাত হোসেনকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী করস্থানে দাফনের কথা ভাবছে তার পরিবার। এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত নয়। যার কারণে কখন দাফন করা হবে সে সময়ও ঠিক করা হয়নি।
১৯৫৮ সালের ৬ জুলাই কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন শাহাদাত হোসেন খান। তার পিতা ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান একজন প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী ও সেতার বাদক। তার দাদা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ এবং ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ছোট ভাই। তার দুই চাচা প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ বাহাদুর হোসেন খান এবং সংগীত গবেষক ও লেখক মোবারক হোসেন খান।
৭ বছর বয়েসে পিতার কাছে শাহাদাত হোসেনের তবলা ও সরোদের হাতেখড়ি। পরে তার চাচা বাহাদুর হোসেন খানের কাছে সরোদের তালিম গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে আলাউদ্দিন সংগীত সম্মেলনে বাহাদুর হোসেনের সঙ্গে যুগলবন্দি হয়ে সরোদ পরিবেশন করেন। ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৮৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার আলী আকবর কলেজ অব মিউজিক থেকে সংগীত বিষয়ে স্নাতক সমমানের ‘বাদ্যলংকার’ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সংগীতের শিক্ষক ও প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শাহাদাত হোসেন খান। সরকারি সংগীত কলেজের ডেমোনেস্ট্রেশন-কাম-লেকচারার, সংগীত বিষয়ক বক্তা ও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উচ্চতর প্রশিক্ষণ কোর্সে সেতার, সরোদ, বেহালা, বাঁশি ও গিটারের প্রশিক্ষক এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগীত একাডেমিতে কণ্ঠ ও যন্ত্রসংগীতের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৪ সালে উচ্চাঙ্গ সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার একুশে পদক প্রদান করেন শাহাদাত হোসেন খানকে। এছাড়া ১৯৯৯ সালে কলকাতার রাজ্য সংগীত একাডেমি, পরের বছর লন্ডনে অবস্থিত উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন তাকে সংবর্ধনা দেন।