ইতিহাস থেকে তখন ২ রানের দূরত্ব। নতুন ওভার শুরু হবে। ফারজানা হক পিঙ্কিকে উইকেটে বসে কি যেন বোঝাচ্ছিলেন নন স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটার সোবহানা মোস্তারি। হয়তো বলছিলেন নার্ভ শক্ত রাখতে, যেন নার্ভাস নাইন্টিনের শিকার না হন। তবুও শেফালি ভার্মার তৃতীয় বলে রান নিতে গিয়ে গড়বড় করে অল্পের জন্য বেঁচে যান ফারজানা।
মাঝে একবার প্রান্ত বদল করে আবার স্ট্রাইকে যান তিনি। এবার আউটসাইড অফে বল পেয়ে কাভারে ড্রাইভ করেন এই ডানহাতি ব্যাটার, এক লাফে ৯৯ থেকে ১০৩। ফারজানা চলে যান ইতিহাসের পাতায়, রেকর্ডের পাতায়। ওয়ানডে সংস্করণে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান, তাও শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে। তবুও উদযাপনে ছিল না বাড়তি উচ্ছ্বাস। ড্রেসিংরুমের দিকে ঘুরে কয়েবকার ব্যাট উঁচু করে ধরার পর সোবহানাকে জড়িয়ে ধরে শেষ করেন উদযাপন।
শনিবার (২২ জুলাই) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরির দেখা পান ফারজানা। আইসিসি ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশীপের অন্তর্ভুক্ত এই সিরিজে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে তার সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ২২৫ রান করে।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। এর আগে ছিল ৯ উইকেটে ২১০। ২০১৩ সালে আহমেদাবাদে এটি হয়েছিল। এ ছাড়া দেশের মাটিতে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এর আগে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ ছিল ৭ উইকেটে ২১০, যা হয়েছিল সাভারে ২০১১ সালে।
ফারজানা তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন ১৫৬ বলে। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৭টি চারে। এর আগে ফিফটি করেন ৯৭ বলে। ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে ফারজানা খরচ করেন মাত্র ৫৯ বল। ধীরে শুরুর পর সময় গড়ানোর সঙ্গে রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করেন তিনি।
শারমিন সুলতানাকে নিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা দারুণ এনে দেন ফারজানা। দুজন ওপেনিং জুটি থেকে যোগ করেন ৯৩ রান। শারমিন ৭৮ বলে ৫২ রানে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। শারমিন আউট হলে এবার অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতিকে নিয়ে এগোতে থাকেন ফারজানা। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে দুজনে যোগ করেন ৭১ রান। জ্যোতি ২৪ রানে আউট হলে ভাঙে এই জুটি।
জ্যোতির পর রিতু মণি ক্রিজে এসে ফেরেন মাত্র ২ রানে। এরপর সোবহানাকে নিয়ে আবার ফিফটির জুটি গড়েন ফারজানা। মাত্র ৪৯ বলে ৫৬ রান যোগ করেন তারা দুজন। শেষ বলে ১০৭ রানে ফারজানা রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। না হলে জুটি অবিচ্ছেদ্য থাকতে পারতো।
ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন স্নেহ রানা। সিরিজজুড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্দশার চিত্র ছিল ধারাবাহিক। শেষ ম্যাচে এসে ব্যাট হাতে ঘুরে দাঁড়ায় লাল সবুজের মেয়েরা। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে এবার বল হাতে সেরাটা দেওয়ার পালা। তাহলেই সেঞ্চুরির সঙ্গে সিরিজ জয়ের ইতিহাসও গড়বে বাংলাদেশের মেয়েরা।