-হমিাদ্রী রয় সঞ্জীব,
ষোল তারিখ দিনটি ছিলো টিম ওয়ার্কের। প্রতিটি পদক্ষেপ অনুশীলনের। সময়ের কোন বারণ ছিলো না কবি দেলওয়ার এলাহীর কাছে। হাতের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে কখনো নিউমার্কেট সুমন রহমান তো কখনো অরোরায় সালমা বাণী আবার কখনো দিলারা হাফিজ তো কখনো নুসরাত জাহান শাঁওলি যে কবি আসাদ চৌধুরীর তথ্য গুলো দিয়ে সমন্বয় করেছে। আবার মিঠে রক্তের উচ্চচাপ সহনীয় রাখতে, সময় সময় তা জানাতে হচ্ছে সংবর্ধনা সভার আহবায়ক কবি ইকবাল হাসানকে। ইথার তরঙ্গে বাক্যকে তাড়া করে দুপুর সন্ধ্যা গড়িয়েছে তখনো তিনি প্রেসে বসা কারণ আহমেদ হোসেনের আইডিয়ায় কবি আসাদ চৌধুরীর পঙক্তি দিয়ে বুক মার্ক ছাপতে। যাতে কবির ভক্তকূল তাঁর কলমের আশীর্বাদ নিতে পারেন। মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রকর তাজুল ইমামের করা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ব্যানার হাতে পেয়েই ফোন। একান্তই আমাদের নিজেদের মাটির সংলাপ ‘হিমাদ্রী কই তুমি? সব পাইলাইছি হাতে, আঃ কি শান্তি! গাড়ির দরজা ঠেলে বসতে বসতে দেলওয়ার এলাহীর হাসির ছ্বটা, নিয়নের আবছা আলো উজ্জ্বল দেখাচ্ছিলো। ভালোবাসার ডুব সাগরের কাঁচা সোনা বুঝি এমনই হয়!
কত কথা আছে আমাদের! কত গান আছে, কবিতা আছে, প্রীতির অঞ্জলি আছে অপেক্ষায়। এলো ১৭ই নভেম্বর রবিবার। ছাড়পত্র হাতে নতুন ভোর। কবি আসাদ চৌধুরীর নাগরিক সংবর্ধনা। আমাদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশ করা হবে তাঁর কাছে।
অনুষ্ঠানকে ঘিরে বিগতদিন গুলোর শ্রম, মেধায়, মননে, আবেগে, আদরে প্রতিটি সমন্বয়, প্রতিটি অনুশিলন, দর্শক হৃদয়ের আগাম ছানবিন করে তাদের চাহিদা ও আয়োজকদের সাধ্যমত আয়োজন তখনি অন্যমাত্রা পায়; যখন দর্শকের সময় সচেতন উপস্থিতি থাকে। যা কবি ও কবিতা অনুরাগী দর্শকরা কাল চিনিয়েছেন আমাদের।
ঠিক চারটায় সুন্দরকে বরণ করেছি যা সুন্দর তাই দিয়ে। ফুলের পাপড়ি বর্ষণের মধ্যদিয়ে,-‘কবি চায় না দান, কবি চায় প্রীতি কবি চায় অঞ্জলি’ পাঁকা চুল মাথায়, অপরাজেয় গোঁফ, জাম আর জামরুলের পাতার ফাঁকে লেগে থাকা লাজুক রোদ্দুরের মত স্মিত হাসি মুখে, রবীন্দ্রনাথের মত দৃপ্ত পায়ে হেঁটে প্রবেশ করেন কবি।
মঞ্চের ওপর পার্শ্বে বরাদ্দ টেবিলে বসে, বুক মার্কে অটোগ্রাফ দেন ভক্তদের মাঝে। ‘মিট এন্ড গ্রীট’ যা ছিলো মঞ্চের নিচে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব।এরপর কবিকে সামনে রেখে সবায় যার-যার আসন গ্রহণ করার মধ্যদিয়ে শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। এই পর্যন্ত সঞ্চালনায় ছিলেন আহমেদ হোসেন। প্রথম শিল্পী ছিলেন মুক্তি প্রসাদ। ঘরোয়ার চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কবি বলেছিলেন একদিন ‘মুক্তি যাই গাক, যেরকম গাক, ও মন থেকে গায়’। গণমানুষের গান করেছেন সুমন সায়ীদ। যথারিতি গুরুদেবের গানে শান্তার শুরু।শান্তা কতটা ভালো গায়, তা মাপার যোগ্যতা আমার নেই। তবে, সে গুরুদেব’কে ভালবেসে গায় যা কবি প্রায়শই বলে থাকেন। গলা বসে গেলেও শুধু কবিকে ভালবেসে গান গেয়েছেন নার্গিস চৌধুরী। সারাহ বিল্লাহর লালনের গান ভাবনালোকে ভাব জমিয়েছে। আর শাহজাহান কামাল ‘শুনি কেবল অবাক হয়ে শুনি, তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী’।
এরপর মূলপর্ব কবিকে নিয়ে কথা, কবির কবিতা, কবির কথা। সুমন রহমানের সঞ্চালনায় কবি ইকবাল হাসানকে সভাপতিত্ব করতে অনুরোধ করলে তিনি কবি আসাদ চৌধুরীকে পাশে বসিয়ে আসন অলংকৃত করেন। কবি দেলওয়ার এলাহীর শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর, সুমন রহমান সঞ্চালনার দায়িত্ব দিলেন দেলওয়ার এলাহীর উপর। তার পর এঁকে এঁকে কবি কে নিয়ে কথা বলেছেন,স্মৃতি চারণ করেছেন, আর মাঝে ছিল বাচিক শিল্পীদের পরিবেশনা। কবিকে নিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে দিলারা নাহার বাবু, আসমা হক, আফিয়া বেগম, হোসনে আরা জেমি, ফারহানা আহমেদ, মেহরাব রহমান, আহমেদ হোসেন ও হিমাদ্রী রয় সঞ্জীব কবি আসাদ চৌধুরীর কবিতা আবৃত্তি করেন। কবিপুত্র আসিফের গান আর কবিকন্যা শাঁওলীর বাবাকে উৎসর্গ করা কবিতা শ্রোতাদর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। অনেকেরই চোখের কোণে দেখা যায় আবেগের অশ্রুবিন্দু। কবিকে নিয়ে কথা বলেন – সর্বজনাব শিল্পী তপন সাইয়েদ, কবি অশোক চক্রবর্তী, নৃত্যশিল্পী মুন্নি সোবহানী, কবি ড. দিলারা হাফিজ, কানাডা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আমিন মিয়া, কথাশিল্পী সালমা বাণী, কবি ফেরদৌস নাহার, কথাশিল্পী ফরিদা রহমান, সাংবাদিক শেখ শাহনেওয়াজ, লেখক সুব্রত কুমার দাস, নাট্যশিল্পী মাহমুদুল ইসলাম সেলিম ও শিল্পপতি এম, এ, মোমেন মুরাদ, দেশে বিদেশে টেলিভিশনের সি,ই,ও জনাব নজরুল মিন্টো। সবার কথা শুনে অবশেষে মাইকের সামনে এসে দাঁড়ালেন স্বয়ং কবি। খুব সম্ভবত ২১ মিনিট স্বপ্নেরা মিছিল করে গেলো। গালাগালিকে গলাগলি করার স্বপ্ন। ৩০ লক্ষ শহিদের উত্তরসূরীদের মর্যাদার জীবনের স্বপ্ন, ধর্ম ও বর্ণের পরিচয়ে যেন কারো মর্যাদা হানি না হয়। অসুস্থ পৃথিবী একদিন নিরাময় হয়ে উঠবে, ভি, সি’ দের দুষ্টচক্র দলিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা ঘরে ফিরে যাবে। আশাবাদ ব্যক্ত করেন- বঙ্গবন্ধু তনয়ার হাত ধরে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। তারুণ্যের প্রতি অগাধ আস্তায় কবি বলেন- ‘সবসময় সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে কালো চুলের মাথারা। তারাই ইতিহাস তৈরি করে’। তরুণরাই একদিন অন্যায়ের বিপুল হিমালয় দেখে এসে ক্রুদ্ধ হবে, সংগঠিত হবে। মানবতা প্রতিষ্ঠা পাবে।
মুগ্ধতার এই আয়োজন সার্থক হয়েছিল তাদেরি জন্য যারা দীর্ঘ সময় বসে বসে ভাবনালোকের স্নিগ্ধতা ছড়িয়েছেন।। উদযাপন কমিটির প্রতিটি মানুষের অভিজ্ঞতা ও উপদেশ ছুঁয়ে ছিল অনুষ্ঠানের পড়তে পড়তে। কবি ইকবাল হাসান সভাপতি ও সমাপনী বক্তব্যে একথাই তুলে ধরেন অনুষ্ঠানের শেষ কথায়!