স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও বেঁচে আছেন বাঙালির সত্তায়। আধুনিক বাংলা কবিতায় নতুন ধারার জন্মদাতা এই কবি সমসময়ে এখনও অসম্ভব জনপ্রিয়।
স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান/ স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ/ সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা- স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা/ স্বাধীনতা তুমি পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল / স্বাধীনতা তুমি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
কিংবা
-না আমি আসিনি
ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রাচীন পাতা ফুঁড়ে,
দুর্বাশাও নই,
তবু আজ এখানে দাঁড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে
অভিশাপ দিচ্ছি।
আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক
কৃষ্ণপক্ষ দিয়েছিলো সেঁটে
মগজের কোষে কোষে যারা
পুঁতেছিল আমাদেরই আপন জনেরই লাশ
দগ্ধ, রক্তাপ্লুত
যারা গণহত্যা করেছে
শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে
আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক পশু
সেই সব পশুদের।
এসব কবিতা চেতনায় আজো নাড়া দিয়ে যায়। দেশের পক্ষে দাঁড়াতে সাহসী করে তোলে।
শামসুর রাহমানকে বলা হয় কবিতার বরপুত্র। তিনি তার সারাজীবনের রচনায় মানুষকে আশার কথা বলেছেন। তার কবিতা হয়ে উঠেছিল গণমানুষের কবিতা। মৌলবাদ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার কবিতা মানুষকে জুগিয়েছে প্রেরণা। সময়ের বহুল পঠিত কবি শামসুর রাহমান। অধিকার আদায়ে তিনি মানুষের পাশে ছিলেন।
শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশের পরপরই তিনি সচেতন পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার ‘আসাদের শার্ট’ কবিতায় ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান যেন সচিত্র রূপ পায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শামসুর রাহমান সপরিবারে তাদের পৈতৃক বাড়ি নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে চলে যান। এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে বেদনামথিত হয়ে লেখেন ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’সহ বেশকিছু কবিতা।
১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরনো ঢাকার মাহুতটুলীর ৪৬ নং বাড়িতে কবি জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের নাম আমেনা খাতুন ও পিতা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী।
১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৫৭-১৯৫৯ রেডিও পাকিস্তানের প্রোগ্রাম প্রডিউসার ছিলেন। ১৯৬০-১৯৬৪ দৈনিক মর্নিং নিউজে সিনিয়র সাব-এডিটর, ১৯৬৪-১৯৭৭ দৈনিক পাকিস্তান ও দৈনিক বাংলায় সহকারী সম্পাদক এবং ১৯৭৭-১৯৮৭ দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৬০টি কাব্যসহ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ শতাধিক।