গেল বছর মহামারি করোনাভাইরাসের বিভিন্ন উপসর্গ সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ভাইরাসটি পরিবর্তন হচ্ছে বলে জটিলতা আরো বাড়ছে, তার সঙ্গে উপসর্গও পরিবর্তন হচ্ছে।
বর্তমানে শুষ্ক কাশি, নাকবদ্ধতা (মাঝে মধ্যে), সাইনাস বন্ধ হওয়া এবং ঘ্রাণের পরিবর্তনকে করোনার উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। চিকিৎসকেরা ধারণা করছেন যে, নাকে জ্বালাপোড়ার অনুভূতিও সংক্রমণটির লক্ষণ বা উপসর্গ হতে পারে। কারণ সম্প্রতি কিছু করোনা রোগীর এই উপসর্গটি ছিল। এখানে করোনা ও নাকের জ্বালাপোড়ার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে বলা হলো।
কোভিড-১৯ শ্বাসতন্ত্রের উপরাংশে উপসর্গ সৃষ্টি করে কেন?
শরীরে করোনাভাইরাস প্রবেশের একটি প্রধান উপায় হলো নাক। নাকের গহ্বরে প্রচুর এসিই-২ রিসেপ্টর রয়েছে। এই এনজাইমের সঙ্গে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন সংযুক্ত হয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কোভিড রোগীদের শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে উপসর্গ সৃষ্টির অন্যতম কারণ হলো, এসিই-২ রিসেপ্টরের ঘনত্ব নাকে সবচেয়ে বেশি। এ কারণে বিজ্ঞানীরা নাসাল কোভিড ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন, যা করোনার বিস্তার ঠেকাতে পারবে।
গবেষণা বলছে যে, শ্বাসতন্ত্রের উপরাংশের সংক্রমণে মৃদু বা মধ্যম মাত্রার অনেক উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে, যেমন- নাক বন্ধ হওয়া, সাইনাসে প্রতিবন্ধকতা, শুষ্ক কাশি ও শ্বাসপ্রশ্বাস কঠিন হওয়া।
নাকের জ্বালাপোড়া কি উদ্বেগজনক?
নাকে জ্বালাপোড়া করলেই আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না, কারণ করোনাভাইরাসের আক্রমণ ছাড়াও অন্য যেকোনো সংক্রমণে উপসর্গটিতে ভুগতে পারেন। এছাড়া সাইনাসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও উপসর্গটি প্রকাশ পেতে পারে। মূলত নাকের পথে প্রদাহ হলে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। করোনাভাইরাসের আক্রমণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে যে প্রদাহ হয় এটা নতুন কোনো বিষয় নয়।
যেসব কোভিড রোগীর সাইনাস বন্ধ ছিল তাদের নাকে জ্বালাপোড়ার হার বেশি ছিল। যারা নাকে জ্বালাপোড়ার অভিযোগ করেছেন তাদের মনে হয়েছে, নাকের ভেতরটা খুব শুকিয়ে গেছে অথবা প্রতিনিয়ত চুলকানি ছিল। কেবল নাক নয়, গলায়ও জ্বালাপোড়া করতে পারে। অর্থাৎ নাকের জ্বালাপোড়া গলায়ও ছড়াতে পারে। এই উপসর্গের পাশাপাশি নাক থেকে গলায় শ্লেষ্মা যেতে, সাইনাস বন্ধ হতে পারে, চোখ থেকে পানি পড়তে পারে এবং চোখে চুলকাতে পারে।
নাকের জ্বালাপোড়া কি কোভিডের উপসর্গ?
এখনো পর্যন্ত নাকের জ্বালাপোড়া কোভিড-১৯ এর স্বীকৃত উপসর্গ নয়, তবে কিছু করোনা রোগী এই অনুভূতি পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ক্লিনিক্যাল স্টাডি অনুসারে, যেসব কোভিড রোগী নাকে জ্বালাপোড়ার অভিযোগ করেছেন তাদের উপরাংশীয় শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য উপসর্গও ছিল, যেমন- সাইনাস ও নাক বন্ধ ছিল। সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ ছাড়াও অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ অথবা ছত্রাক সংক্রমণেও নাকে জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাই এই অনুভূতি পেলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে কোভিড-১৯ হয়েছে, তবে এর সঙ্গে সংক্রমণটির আরো কিছু উপসর্গ থাকলে করোনা টেস্ট করে নিতে পারেন।
কোভিড সম্পৃক্ত নাকের অন্যান্য উপসর্গ
যদিও নাকে জ্বালাপোড়ার অনেক কারণ রয়েছে, তারপরও আমরা সতর্কতার জন্য এটাকে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ মনে করতে পারি। যেহেতু সংক্রমণটির মহামারি চলমান রয়েছে, তাই নাকের জ্বালাপোড়াকে প্রথমেই কোভিড-১৯ এর উপসর্গ ভাবলে সতর্কতা বাড়বে ও জটিলতার ঝুঁকি কমবে। এর সঙ্গে সংক্রমণটির যত উপসর্গ থাকবে, ধারণা তত জোরালো হবে।করোনা রোগীরা নাকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরো যেসব উপসর্গে ভুগেন তা হলো- সর্দি অথবা নাকে প্রতিবন্ধকতা, ঘ্রাণশক্তি হারানো বা ঘ্রাণের বিকৃতি ও নাক থেকে গলায় শ্লেষ্মা ক্ষরণ।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
একইসাথে কোভিড-১৯ ও নাকের জ্বালাপোড়া ছিল এমন কেসের অধিকাংশ রোগীরই সংক্রমণটির অন্যান্য উপসর্গও ছিল।আপনার ক্ষেত্রেও কোভিড-১৯ এর কিছু উপসর্গ থাকলে কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন রয়েছে। নাকের জ্বালাপোড়ার সঙ্গে সংক্রমণটির কোনো প্রচলিত উপসর্গ লক্ষ্য করলেই সতর্ক হয়ে যান। করোনাভাইরাসের প্রভাব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।একই ভাইরাস কারো মৃত্যু ঘটাচ্ছে, আবার কেউ কেউ বুঝে ওঠার আগেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তাই কোভিড-১৯ এর কোনো উপসর্গকে অবহেলা না করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
কোভিড-১৯ এর কিছু প্রচলিত উপসর্গ হলো- জ্বর, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও ঘ্রাণশক্তি হারানো বা ঘ্রাণের বিকৃতি। নাকে জ্বালাপোড়ার সঙ্গে এসব প্রচলিত উপসর্গ থাকলে চিকিৎসককে জানাতে হবে। সচেতন হওয়ার জন্য আরো কিছু উপসর্গ হলো- চোখ থেকে পানি পড়া, মুখের শুষ্কতা, ক্লান্তি, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা ও বমি। ভাইরাসটি পরিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টি হচ্ছে বলে নতুন নতুন উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। তাই সংক্রমণটির প্রচলিত বা সন্দেহজনক উপসর্গ দেখলেই আইসোলেশনের কথা ভাবতে পারেন।