জসিম মল্লিক
লেখক পরিচিতিঃজন্ম বরিশাল শহরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। কলেজ জীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু এবং দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক-এ নিয়মিত লিখছেন। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজের মধ্য দিয়ে তার সাংবাদিকতার শুরু। দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছরের সাংবাদিকতা ও লেখালেখির অভিজ্ঞতা।এ পর্যন্ত তার প্রায় পঁয়ত্রিশটির মতো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
টরন্টো ২ এপ্রিল ২০২০
আমি আশাবাদী মানুষ। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। প্রতিদিনই এই স্বপ্নের কথা লিখি।নেগেটিভ খবরগুলো মনকে বিষন্ন করে তোলে তাই এড়িয়ে যাই। ভাল খবরগুলো খুব মন দিয়ে পড়ি। আনন্দ নিয়ে পড়ি। যে যা বলে তাই মন দিয়ে পড়ি। কিন্তু এড়িয়ে গেলেও অস্বীকার করতে পারি না। বুকের মধ্যে স্বপ বেঁচে আছে বলেই জীবনটাকে আনন্দময় মনে হয়। স্বপ্ন দেখি সবকিছু সুন্দর হয়ে যাবে। আগের জীবনে ফিরে যাব। ঘুম ভেঙে হঠাৎ ভুলে যাই যে আইসোলেশনে আছি। ঘরের বার হতে পারব না। দুজন মানুষ দুই ঘরে থাকি। সকালে এক টেবিলে বসে চা খাই না। সবসময় চা আমি বানাই, এখনও বানাই কিন্তু একা একা খাই।
বাইরের দিকে তাকাই কোথাও কোনো জনমানুষ্যি চোখে পড়ে না।খুউব ভোরে একজজন নিঃসঙ্গ মানুষ শুধু রাস্তা ক্লিন কওে প্রতিদিন। ময়লাও হচ্ছেনা তেমন রাস্তাঘাট। মানুষের জন্যইতো সব। সেই মানুষ নাই কোথাও। শিশুরা খেলতে নামছে না, স্কুল বন্ধ। শিশুদের কোলাহল নাই। নিরব নিথর। হুইল কার এসে থামছে না আর। দূরে কখনো একটা দুটা গাড়ি যায় হুস করে। এক অচেনা পৃথিবী। যেনো অন্য এক গ্রহে ঢুকে পড়েছি। একজন দু’জনের হাতে বাজারের থলে, কেউ কারো দিকে তাকায় না। এলিয়েন পৃথিবী। অচেনা সব, অচেনা আত্মীয়, বন্ধ,ু সন্তান। সবাই সবার কাছ থেকে দূরে। জড়াজড়ি, গাড়গড়ির দিনগুলো থমকে গেছে।
মাঝে মাঝে জেসমিনকে লক্ষ্য করি। কিচেনে কাজ করছে।আমি দূরত্ব বজায় রেখে টিভি দেখছি। দূর থেকে কথা বলি। নিঃশ্বাসের শব্দ শুনিনা অনেকদিন। মনে মনে বলি এই মানুষটাকে কি চিনি! কতবছরের চেনা মানুষটি। ৩১ বছর একসাথে আছি। কাছেই আছি কিন্তু কত দূরে। ফিসিক্যিাল ডিসট্যান্স। সোশ্যাল ডিসট্যান্স, কোয়ারেনটাইন,আইসোলেশন কত টার্ম শিখেছে পৃথিবীর মানুষ। এর মধ্যেও যারা মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারাই মহান মানুষ। শ্রেষ্ঠ মানুষ। এই ছবিটিতেই দেখুন আমেরিকার অন্যান্য ষ্টেট থেকে ডাক্তার, নার্সরা আসছেন নিউইয়র্কে সেবা দিতে, কত আনন্দ নিয়ে আসছেন। এই দুর্যোগে ডাক্তার নার্সরাই ভরসা। বাংলাদেশের অনেক ডাক্তার নাকি ভয়ে পালিয়েছেন। এটা ঠিক কাজ না। আমি প্রতিটি লেখায় তাদের কথা বলেছি। ঘরে থাকুন, কানেক্ট থাকুন।