চীনের পর ইউরোপ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর মধ্যে ইতালির পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে চীনের পর এখন ইতালিতে প্রতিদিন সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, বিশ্বের ১২৩টি দেশের ১ লাখ ৩২ হাজার ৫০০–এর বেশি মানুষ কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।
১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে প্যানডেমিক (বিশ্বের বড় অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি) ঘোষণা করেছে।
আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসাস বলেছেন, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির কেন্দ্র এখন ইউরোপ। তিনি দেশগুলোর সরকারকে মানুষের জীবন বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, সংহতি রাখা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই আগুনকে আর জ্বলতে দেবেন না।’
ড. টেড্রসের মন্তব্য এমন সময়ে এল, যখন ইউরোপের দেশগুলোয় আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইতালিতে এখন প্রতিদিন সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে কোভিড-১৯–এ মারা গেছে ২৫০ জন, আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২৬৬ জন। মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬৬০।
ইতালির পর ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনের পরিস্থিতি খারাপ। সেখানে গতকাল শুক্রবার মৃত মানুষের সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়ে ১২০–এ দাঁড়িয়েছে। মোট আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ২৩১ জন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানচেজ বলেছেন, আজ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য রাষ্ট্রীয় সতর্কতা কার্যকর হবে।
স্পেনের পরের অবস্থানে রয়েছে ফ্রান্স। সেখানে গতকাল ৬১ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯। আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৭৬ জন।
জার্মানিতে মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩ হাজার ৬২। মারা গেছে পাঁচজন।
যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৭৯৮ জন এবং মারা গেছেন ১১ জন।
বিশ্বজুড়ে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছুঁই ছুঁই। এ সংখ্যাকে ‘মর্মান্তিক মাইলফলক’ বলে উল্লেখ করেছেন ড. টেড্রস। তিনি বলেন, ইউরোপ এখন মহামারির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। চীন ছাড়া এখন বিশ্বের বাকি দেশগুলো মিলিয়ে যতসংখ্যক আক্রান্ত হচ্ছে ও মারা যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশিসংখ্যক শুধু ইউরোপেই হচ্ছে। চীনে প্রাদুর্ভাবটির উচ্চ হারের সময়ে দিনে যতসংখ্যক আক্রান্ত হতো, ইউরোপে এখন তার চেয়ে বেশিসংখ্যক আক্রান্ত হচ্ছে।
ডেনমার্ক, চেক রিপাবলিক, অস্ট্রিয়া, ইউক্রেন, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ডসহ ইউরোপের কমপক্ষে ১০টি দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানির কিছু অংশে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বড় সমাগম বাতিল এবং থিয়েটার, রেস্টুরেন্ট ও বার বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চীনের পরিস্থিতির চেয়েও ইউরোপের অবস্থা এখন খারাপ। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর ঘিরেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ কারণে শুধু সেই শহরের দিকেই সব পক্ষের মনোযোগ ছিল। চীন সরকার উহানকে কোয়ারেন্টিন করে রাখে।
করোনা ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ইউরোপের দেশগুলো ভাইরাসটি মোকাবিলায় একেবারেই ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।
শনাক্ত হওয়ার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে এসব পরিসংখ্যান বের করা হয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের শঙ্কা, নজর দেওয়া হচ্ছে না, এমন দেশগুলোয় বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনাভাইরাস।