করোনা-ত্রাসে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। এই মারণ-ভাইরাসের কোনও প্রতিষেধকও আপাতত নেই। এই সময় ভাইরাস থেকে বাঁচতে সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়া আর অন্য কোনও পথ চিকিৎসকদের সামনে খোলা নেই। সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে বার বার হাত ধোওয়ার পরামর্শ তো রয়েইছে, সঙ্গে আরও কিছু বাড়তি সতর্কীকরণের কথা প্রতি দিনই জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’।
সম্প্রতি সেই তালিকায় যোগ হয়েছে কিছু সময় অন্তর অন্তর জল খাওয়ার বিষয়টি। ‘হু’-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, শরীরে জলের ঘাটতি না হলেই দেহ থেকে টক্সিন বেরিয়ে যাবে। জল ডিহাইড্রেশন রুখে দেয় বলেও এটি এই সময় খুব উপকারী।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের মতে, ‘‘হু-এর এই সতর্কতা অবশ্যই মান্য। এমনিতেই ফ্লু হলে জল-সহ নানা ধরনের ফ্লুয়িড খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে শরীরে তরলের ভাগের অভাব হয় না। শরীরের ভিতর যত শুকনো থাকবে ততই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। ডালের জল, ডাব, জল, গ্রিন টি, ফলের রস— সবই এই ফ্লুয়িডের মধ্যে পড়ে। শরীরকে ভিজিয়ে রাখল যে কোনও সংক্রমণেরই থাবা বসাতে অসুবিধা হয়।’’
ইতিমধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে ছড়িয়েছে যে, জল খেলে মুখের ভিতর থাকা ভাইরাস সরাসরি পাকস্থলীতে চলে যাবে ও সেখানকার অ্যাসিড তাকে মেরে দেবে। একে একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
আসল ব্যাখ্যা কী?
বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্তের মতে, ‘‘শরীরে টক্সিন সারানোর জন্য অবশ্যই যে কোনও ভাইরাল অসুখে ঘন ঘন জল খেয়ে শরীরকে ভিজে রখতে হয়। তবে মুখের ভিতর ঢোকা করোনাভাইরাসকে জল দিয়ে পাকস্থলীতে পাঠাব, তার পর সেখানকার অ্যাসি়ড তাকে মেরে ফেলবে, বিষয়টা এত সহজ নয় মোটেই। এ ভাবে ভাইরাস মরে, কিন্তু কত সংখ্যক ভাইরাস মরবে? আর সব ভাইরাসই কি ঢুকে মুখের ভিতর বসে থাকবে! তা হয় না। ভাইরাস তার নিজের পথ খুঁজে শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটিয়ে ফেলতে পারে তার আগেই।’’
অরিন্দমবাবুও সুমিত সেনগুপ্তের সঙ্গে একমত। তাঁর কথায়, “করোনা ভাইরাসকে এত সহজে জব্দ করা গেলে তা অতিমারির আকার নিত না। জল নিঃসন্দেহে খাওয়া প্রয়োজন, তবে তা কেবলমাত্র শরীরের টক্সিন সরাতে। যত বেশি জল খাবেন, ততই বেশি হারে মূত্র আকারে শরীরের বাইরে বর্জ্য বেরিয়ে যাবে। তাই টক দই, গরম জলে লেবু চিপে খাওয়া— এগুলো সবই শরীরের টক্সিন দূর করে দেওয়ার পদ্ধতি। এগুলো ভাইরাস আটকাতেও খানিকটা কার্যকর। করোনা-হানা ঠেকাতে ‘হু’ এই টক্সিন দূর করার ক্ষেত্রেও জোর দিচ্ছে। কিন্তু এর নেপথ্যে হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়া ব্যখ্যাটি বড় বেশি সরল। আদতে কার্যকরী নয়।’’
তথ্য সুত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা