মহামারি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানে এটা নয় যে এ যুদ্ধে পুরোপুরি জিতেছেন, হয়তো অর্ধেক জিতেছেন। যারা ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিরাময় পেয়েছেন তাদের অনেকেরই করোনা পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব স্বাস্থ্য সমস্যাকে লং কোভিড অথবা পোস্ট-কোভিড সিন্ড্রোম বলা হয়। এখানে করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে তার একটি তালিকা দেওয়া হলো।
কোভিড পরবর্তী কাশি
করোনাভাইরাস সংক্রমণের একটি প্রধান লক্ষণ হলো প্রতিনিয়ত কাশি। কিন্তু কিছু কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে সুস্থতার পরও সপ্তাহের পর সপ্তাহ কাশি লেগে থাকে। কোভিড টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ আসার পর দীর্ঘস্থায়ী কাশির মানে হলো শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে প্রদাহ হয়েছে। কাশির ওষুধ সেবন করে অথবা হার্বাল পানীয়/চা পান করে কোভিড পরবর্তী কাশির চিকিৎসা করা যায়।
ঘুমের সমস্যা
করোনা নিরাময়ের পর অনেকেই অভিযোগ করেন যে, ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। কারো ঘুমের মান কমে গেছে, আবার কারো চোখে ঘুমই আসতে চায় না। চিকিৎসকদের মতে, সংক্রমণের সময় রোগীরা মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তায় ভুগে। এটা পরবর্তীতে ঘুমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সংক্রমণ থেকে সুস্থতার পর ইমিউন সিস্টেমকে পুনরায় শক্তিশালী করতে ঘুমের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই কোনো ধরনের ঘুমের সমস্যা হলে চিকিৎসককে জানান।
দুর্বলতা, জয়েন্ট ব্যথা ও পেশী ব্যথা
শরীর থেকে করোনাভাইরাস নির্মূল হওয়ার পরও দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। এ কারণে করোনা থেকে সুস্থতার পরও কাজেকর্মে অনীহা থেকে যায়। এছাড়া করোনা টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ হওয়ার পর কয়েক মাস পর্যন্ত জয়েন্ট ব্যথা, পেশী ব্যথা ও মাথাব্যথা লেগে থাকতে পারে। যারা তীব্র সংক্রমণে ভুগেছেন তাদের কম মাত্রায় জ্বর ও প্রদাহ থাকতে পারে। কিন্তু কম মাত্রার জ্বরের সঙ্গে শীত শীত লাগলে অথবা শরীর ব্যথা করলে পুনরায় সংক্রমণ হয়েছে কিনা যাচাই করা উচিত।
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট
করোনাভাইরাস থেকে নিরাময়ের পর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট (এমনকি বিশ্রামকালেও) পালমোনারি এম্বোলিজম বা ফুসফুসে রক্ত জমাটের লক্ষণ হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের আক্রমণে ফুসফুস ও শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত জমাট বেধে যায়। এটা করোনা থেকে সুস্থতার পরও ভোগাতে পারে। এছাড়া মাথাঘোরানো, হৃদস্পন্দনে অস্বাভাবিকতা ও বুক ধড়ফড়ও করতে পারে। এসময় বুকে ব্যথা অনুভূত হলেও দেরি না করে জরুরি সেবা পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
স্মৃতিশক্তির ক্ষয়
যখন কেউ করোনাভাইরাস সংক্রমণে ভুগেন তখন মস্তিষ্কে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, যার ফলে পরবর্তীতে মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় অংশে সমস্যা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। এছাড়া মনোযোগ ও চিন্তাভাবনায়ও সমস্যা হতে পারে। অনেকের মধ্যে এসব সমস্যার মাত্রা এত বেশি হয় যে, নিত্যদিনের কাজকর্ম সম্পাদনে ব্যর্থ হন। কেউ কেউ মানসিক সমস্যায়ও ভুগতে পারেন।
পায়ে ব্যথা বা ফোলা
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত অনেকেই নিরাময় পাওয়ার পর পায়ে ব্যথা বা ফোলার অভিযোগ করেছেন। চিকিৎসকেরা এর জন্য পায়ে রক্ত জমাট বেধে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। এটাকে অবহেলা করা যাবে না। করোনা থেকে সুস্থতার পর পা ফুলে গেলে বা ব্যথা করলে, হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে গেলে এবং হাত-পা অসাড় হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসা পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
কিডনির ক্ষতি
গবেষণা বলছে যে, করোনাভাইরাস কিডনিকেও আক্রান্ত করতে পারে। অনেক করোনা রোগীর নিরাময়ের পর কিডনিতে অসুস্থতা ধরা পড়েছে, এমনকি তাদের এ সংক্রমণের পূর্বে কিডনিতে সমস্যা ছিল না। যেহেতু সুস্থ কিডনির ক্ষতি হচ্ছে, তাই যাদের সংক্রমণের আগে থেকে কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তাদের অবস্থা যে আরো খারাপ হতে পারে এটা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই এসময় বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন আছে। এছাড়া ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করুন।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.