সারা পৃথিবী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারিতে আক্রান্ত যা সার্স কোভ২ ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। সোমবার বিকালে জেনেভায় সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বের ১৫৩টি দেশ বা অঞ্চলে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার ১২৭ জন মানুষ এ ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মোট মৃত মানুষের সংখ্যা ৬৫২৬।
বাংলাদেশে মোট আট জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেছে সরকার, যাদের মধ্যে প্রথম দফায় আক্রান্ত তিন জনই তোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ জন শিশুসহ ৫ জন।
করোনা ভাইরাসের শিকার যে কোন মানুষই হতে পারেন। তবে ডায়াবেটিসের মত দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা লোকদের এ ঝুঁকি অনেক গুন বেশি। হার্ট ফেইলার, কিডনি ফেইলার, হাঁপানি ইত্যাদিতে যারা ভোগছেন তারাও অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে চলছেন।
ডায়াবেটিসের রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, রোগ হলে তার সাথে লডাই করার সক্ষতা হ্রাস পায়। ফলশ্রুতিতে, একই সাথে বসবাস করা অন্যান্য মানুষের তুলনায় ডায়াবেটিস থাকলে আপনি চট করেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন। যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি তারা করোনা ভাইরেসের সহজ শিকার। ভাবতে চেষ্টা করা হচ্ছিল শিশু-কিশোররা মনে হয় করোনায় খুব একটা আক্রান্ত হবে না; কিন্তু তাও আর বলা যাচ্ছে না। অন্য দেশে তো বটেই, বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে ২ জনই শিশু।
ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা (এইচ বি এ ওয়ান সি) সঠিক ভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বোঝাতে সহায়তা করতে পারে। অর্থাৎ যার ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ যত খারাপ (এইচ বি এ ওয়ান সি যত বেশি) তার রোগে ভোগার সম্ভাবনা তত বেশি। বাংলাদেশের প্রায় ৮০% ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি (তাদের সবাই ভাইরাস সংক্রমনের বাড়তি ঝুঁকিতে)। আবার যারা অনেক বছর ধরে ডায়াবেটিস নিয়েই বেঁচে আছেন, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ওপর্যুদস্ত। সবচে’নাজুক অবস্থায় আছেন যে সকল ডায়াবেটিসের রোগীর কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, একই সাথে হৃদযন্ত্রও যথেষ্ট রক্ত পরিসঞ্চালনে ব্যর্থ এবং রক্তের গ্লুকোজ বেশি।
বরাবরের মতই, সকল ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের গ্লুকোজের মাত্রায় নিয়ে আসা অতীব জরুরী এবং যারা মুখে সেবনের ওষুধ নিরভরতা কমিয়ে ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করতে থাকবেন, তার বেশি সুবিধা প্রাপ্ত হবেন।
করোনা ভাইরাস (কোভিড১৯)মহামারিতে ডায়াবেটিস রোগীর আশুকরনীয়ঃ
* করোনা ভাইরাস সংক্রমনের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেও সরকার নির্দেশিত কেন্দ্র গুলোতে রোগ শনাক্ত করণ ও পরবর্তী সেবার জন্যে দ্রুত চলে যাওয়া।
* কালক্ষেপন না করে অতি সত্তর রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্য মাত্রায় নিয়ে (এইচ বি এ ওয়ান সি<৭%) যাবার উদ্যোগ নেয়া।
* যদি সিম্পটম হয়ে থাকে (জ্বর, কাসি) তাহলে নিজেকে নিজে আলাদা করাই শ্রেষ্ট। শরীর বেশি খারাপ না হলে হাস্পাতালে না যাওয়াই ভাল। ৮০% মানুষ কোন হাস্পাতালভ র্তি ছাড়াই ভাল হয়ে যাবে। ১৪ দিন নিজেকে আইসোলেট করে থাকবেন।
* বয়স্ক লোকজন এর মধ্যে মৃত্যুর হার সব চেয়ে বেশি। বয়স্ক কেউ অসুস্থ হলে হাস্পাতালে ভর্তি করার কারন আছে, কারন তাদের অনেকেরই আই-সি-ইউ সাপোর্ট লাগবে
* এবারের সব চেয়ে সমস্যা হল লক্ষণহীন রোগীরা। জার্মানিতে অনেকে আছে যাদের পাওয়া গেছে কোন কাসি নেই, কোন জ্বর নেই, কিন্তু পরিক্ষা করে দেখা যায় তাদের করোনা ভাইরাসের সংক্রমন হয়েছে। ইতালিতেও এমন অনেক পাওয়া গিয়েছে, এমন কি যুক্তরাজ্যেও। এ নিয়ে সব চেয়ে বড় ভয় এটাই যে একদম নর্মাল, ফিট মানুষ জন করোনা ভাইরাস নিয়ে ঘুরছে। এখন বলা যাচ্ছে না তাদের থেকে অন্যদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু।
* স্যানিটাইজার ভাল হলেও, মার্কেটের অধিকাংশ স্যানিটাইজারে পর্যাপ্ত পরিমান এল্কোহল নাই (যেটা পান করে ওই এল্কোহল না)। সাবান দিয়ে হাত ধোন, বেশি বেশি ধোন। অতিরিক্ত করতে চাইলে বরং হেক্সাসল টাইপের কিছু ব্যবহার করুন। ঘরের বাইরে স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও মুখে হাত দিবেন না যতক্ষন না কথাও গিয়ে হাত ধুতে পারবেন।
* বিদেশ ফেরত বন্ধু বা আত্মীয় কে এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টিন করে দিন। ভাল হলে ভাল। কোনকাটি বা জ্বর হলে আরও এক সপ্তাহ আইসোলেট করবেন
* বড় সমাবেশ/ লোক সমাগম থেকে দুরে থাকাই ভাল। কোন কনফারেন্স বা পার্টিতে যাবেন না।
* সব কিছু এত তাড়া তাড়ি হচ্ছে যে আমরা সব এখনো জানি না। নতুন তথ্য অনেক আসছে। বিশেষজ্ঞদের যাচাই করতে দেন
ডাঃশাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
এন্ডক্রাইনলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা