চারপাশে শুধু একটাই নাম শোনা যাচ্ছে ” করোনা ভাইরাস”।এক সাক্ষাত আতংকের নাম।বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত কয়েকজন শনাক্ত হবার পর এই আতংকের মাত্রা আরো বেড়েছে।সবাই মাস্ক,স্যনিটাইজার, এমন কি কয়েক মাসের খাবার পর্যন্ত ঘরে মজুদ করে রেখেছেন।কিন্তু কি আসলে এই নভেল করোনা ?
নভেল করোনা ভাইরাস:করোনা ভাইরাস হলো অন্যসব সাধারন জ্বর, কাশির জন্য দায়ী ভাইরাসের দলের বা একই পরিবারের। সার্স(SARS) বা মার্স(MERS) ভাইরাসের মতন করোনা ভাইরাস শ্বাসকষ্ট বা ঠান্ডা জ্বরের জন্য দায়ী।কিন্তু এতোদিন মানবদেহে করোনা আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া যায়নি।এই ভাইরাস প্রানী বাহিত অর্থাৎ মানবদেহে পশু পাখির মাধ্যমে ছড়ায়।
কি লক্ষন থাকতে পারে?
প্রাথমিক অবস্হায়
♦ সাধারন জ্বর ১০০ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে।♦ কাশি, কফ, হাঁচি ♦গলা ব্যথা, শরীরের মাংশপেশিতে ব্যথা ♦শ্বাস কষ্ট বা ঘন ঘন শ্বাস নেয়া,শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
তীব্র হলে
♦ নিমোনিয়া ♦কিডনি ফেইলর ♦ মৃত্যু
মুশকিল হলো এগুলো সাধারন সর্দি কাশি বা অন্যান্য ভাইরাসের কারনেও হতে পারে।তাই বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হার মতে লক্ষন দেখা গেলে আপাতত দ্রুত পরিক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া উচিত এবং নিজেকে একঘরে বা গৃহবন্দী করা প্রয়োজন।যেহেতু করোনা ভাইরাস দ্রুত সংক্রামিত হতে পারে।
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম:
যে কোনো সংক্রামিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই।করোনা ভাইরাস প্রতিহত করতে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে।
♦ বার বার সাবান জল দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন এবং পরিবারের অন্যদের হাত ধুতে উৎসাহিত করুন।
♦বাইরে থেকে বিশেষ করে বাজার,ট্রেন বা বাস স্টেশন যেখানে লোক সমাগম বেশি সেখান থেকে এসে কাপড় খুলে ধুয়ে ফেলুন, নিজেও গরম জলে স্নান করে নিন।
♦ খাবার আগে,রান্নার আগে এবং মল মুত্র ত্যাগের পরে ভালো করে বিশ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন।
♦ যেসব জায়গায় সাবান জলের সুযোগ নেই সেসব ক্ষেত্র স্যানিটাইজার ব্যাবহার করুন।
♦ হাঁচি,কাশি দেবার জন্য টিস্যু বা কাপড় ব্যবহার করুন।ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনা আছে এমন বিনে ফেলুন।ব্যাবহৃত রুমাল বা কাপড় ধুয়ে ফেলুন।
♦কাঁচা মাছ, মাংশ বা ডিম বা সবজি না খেয়ে ভালো করে সিদ্ধ করে রান্না করুন।ফলমূল সব্জি ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে।
♦অসুস্হ পশুপাখি বা করোনা আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে অন্তত তিন ফুট বা এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন।সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করুন।
♦ করোনা ভাইরাসের লক্ষণ মনে হলে নিজেকে আলাদা করুন,মাস্ক ব্যবহার করুন,পরিবারের বয়স্ক লোকদের অন্যত্র সরিয়ে দিন।
♦আপাতত প্রয়োজন না হলে করোনা আক্রান্ত দেশ ভ্রমন থেকে বিরত থাকুন।অতিরিক্ত ভীড় এড়িয়ে চলুন।
আতংক কোনো সমাধান নয়:
আতংকিত হবার দরকার নেই,কারন এটা কোনো সমাধান নয়।সবাইকে সচেতন হতে হবে।বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হা অনুযায়ী মৃত্যুহার বেশ কম।তাছাড়া মৃত্যু আসলে কয়েকটি ফ্যক্টরের উপর নির্ভর করে।গত কয়েকদিনের সারা বিশ্বের করোনা পরিস্হিতি বিবেচনা করে দেখা গেছে বয়স্ক ব্যক্তি, হৃদরোগ,ডায়বেটিস বা অন্যান্য জটিলতা আছে এমন মানুষদের ক্ষেত্র ঝুঁকি বেশি।কিন্তু যাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বেশি তাদের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস তেমন গতি করতে পারছে না।তাই আমাদের খাবারের তালিকায় স্বাস্হ্য সম্মত খাবারের সাথে সাথে প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম রাখা দরকার।
জ্বর হলে পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং বিশ্রাম নিন।নিজেকে আলাদা কক্ষে বন্দী করুন,সার্জিক্যাল মাস্ক পরুন।চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আতংকিত না হয়ে সচেতন হই।
(দুটো পরিসংখ্যান দেয়া হলো।তথ্য সূত্র বিশ্ব স্বাহ্য সংস্হা এবং বিবিসি)
উম্মে শায়লা রুমকী,লেখক ও কনস্যালট্যন্ট ফিজিওথেরাপিপিটিআরসি, ঢাকা