কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকা আরিয়েহ দেরিকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
উচ্চ আদালতের আদেশ মেনে আরিয়েহ দেরিকে বরখাস্ত করেছেন নেতানিয়াহু। গত মাসে তাকে স্বরাষ্ট্র এ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত করেছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আরিয়েহ দেরিকে বরখাস্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।
পরে আরিয়েহ দেরি বলেছেন, তিনি বর্তমান সরকারের এজেন্ডা প্রচার চালিয়ে যাবেন এবং জোটের নেতাদের নিয়মিত বৈঠকে যোগ দেবেন। বিচারিক সিদ্ধান্ত আমাকে ভোটারদের সেবা করতে বাধা দেবে না।
গত শনিবার নেতানিয়াহু সরকারের বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রাজধানী তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে লাখো মানুষ। তারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে। এ ছাড়া, জেরুজালেম এবং অন্যান্য ইসরায়েলি শহরেও হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছে। এর পরদিনই দেরিকে বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর বিচারমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন এ মাসের শুরুতে বিচার বিভাগীয় সংস্কারের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে বিক্ষোভ শুরু হয় ইসরায়েলে। কারণ বিক্ষোভকারীরা মনে করছেন, বিচার বিভাগের সংস্কার করা হলে রাজনীতিবিদেরা বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা পাবেন। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হবে।
এর মধ্যে গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আরিয়েহ দেরির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি যেহেতু ফৌজদারি অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, সুতরাং তিনি আর মন্ত্রিত্বের পদে থাকতে পারেন না। তাকে অবশ্যই বরখাস্ত করতে হবে। আদালতের এই আদেশ বিক্ষোভের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছে। নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভ তৃতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে।
দেরির রাজনৈতিক দলের নাম শাস পার্টি। গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে শাস পার্টি ১১টি আসন জিতেছিল। তারা নেতানিয়াহু জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক ছিল। শাস পার্টি আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘স্বেচ্ছাচারী ও নজিরবিহীন’ বলে অভিহিত করেছে।
শনিবারের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিড ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যাটজসহ বিরোধী নেতারা।
ইয়ার ল্যাপিড এক টুইটার পোস্টে বলেছেন, ‘যারা দেশকে ভালোবাসে এবং দেশের গণতন্ত্র, আদালত ও সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করতে চায়, তারা এখানে বিক্ষোভ করতে এসেছিল। জয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা হাল ছাড়ব না।’
ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিড বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডকে ‘সার্কাস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি এক টুইটে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার মূল্য কেন নাগরিকেরা দেবেন? নেতানিয়াহুকে অবশ্যই একজন পূর্ণকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করতে হবে।’