২০২২ খ্রীষ্টাব্দ, ১১ জুন শনিবার, সন্ধ্যাটি ছিল কবিতা মুখর। গুণীজন আর কবিতাপ্রেমীদের ভিড়ে ঠাসা ছিল টরন্টোর ড্যানফোর্থের গোল্ডেন এজ সেন্টার। আবৃত্তির মুর্ছণায়, শুভ কামনার জোয়ারে, সমবেতদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মাতানো মুহূর্তে কেক কেটে নতুনের যাত্রা শুরুর মাহেন্দ্রক্ষণটি ছিল আলোকের ঝরনা ধারার মতই উজ্জ্বল। ‘আমার শহর কবিতায় জেগে থাকে’-শ্লোগানকে সামনে রেখে অভূতপূর্ব এক উৎসবে মেতে পথ চলা শুরু করল কানাডার টরন্টো শহরের নতুন কবিতার দল ’কণ্ঠচিত্রণ’।
মূল আয়োজনের আগে ঝালমুড়ি, সিঙ্গাড়া, পোয়াপিঠা আর গরুর দুধে তৈরি গরম ধোয়া ওঠা অমৃত স্বাদে ভরা চা আপ্যায়ন করে আর উষ্ণ অর্ভথনায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। নাতিশীতোষ্ণ বিকালে অনেকেই কাজ থেকে ফিরে সরাসরি এসেছিলেন আয়োজনে। শুধু অতিথিরাই নন, আয়োজকদের অনেকের চোখেমুখে ছিল সারাদিনের কর্মব্যস্ততার ক্লান্তির ছাপ। সেই সব আবছায়াও যেনো আলো হয়ে ফুটে উঠছিল আমন্ত্রণকারীদের আন্তরিক অভিবাদনে। এমনই রঙিন বিকালটায় এক চিলতে রঙধনুর মতো প্রভা ছড়ালো ’কণ্ঠচিত্রণ’র শিল্পীদের স্বাগত পরিবেশনায়।
এর পর ’কণ্ঠচিত্রণ’র ভূমিকা পাঠ করে শোনান হিমাদ্রী রয়, সকলকে স্বাগত জানান আসমা হক। সংগঠনের সদস্য ও শুভানুধ্যায়িদের পরিচয় করিয়ে দেন এলিনা মিতা। শুভানুধ্যায়িদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান আসমা হক ও নুসরাত জাহান চৌধুরী শাঁওলী।
‘কণ্ঠচিত্রণ’কে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন শুভানুধ্যায়ী- কবি দেলওয়ার এলাহী, হাফিজুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার নওশের আলী, মোহাম্মদ ফাইজুল করিম, সুশীতল সিংহ চৌধুরী। দলটির আরেকজন শুভানুধ্যায়ী হলেন উজ্জ্বল দাস।
অন্টারিও প্রাদেশিক সাউথ ওয়েস্ট এরিয়ার পুনরায় নির্বাচিত এমপিপি ডলি বেগম অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন এবং উনার মুল্যবান বক্তব্য রাখেন। নব্য কবিতার দলটিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন মোহাম্মদ আমিন মিয়া, ব্যারিস্টার রিজওয়ান রহমান। আসমা হক উনাদের পরিচয় করিয়ে দেন। উপদেষ্টাদের পরিচয় করিয়ে দেন নুসরাত জাহান চৌধুরী শাঁওলি। উপদেষ্টা হিসেবে আছেন দিলারা হাফিজ, সাদী আহমেদ, খশরু চৌধুরী। উপদেষ্টা সাদী আহমেদ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। দলটির অভিভাবক হিসেবে আছেন কবি আসাদ চৌধুরী।
কবি আসাদ চৌধুরী তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘সংস্কৃতি একটি জাতিকে যেভাবে এগিয়ে নিতে পারে তা আর অন্যকিছুর দ্বারা সম্ভব নয়। বাঙালি জাতি এটা বুঝেছিল বঙ্গভঙ্গের সময়। আর একবার তারা এটা বুঝতে পারে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময়। সেই পথ ধরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা পাই।’
কানাডায় বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার বিষয়ে কবি আসাদ চৌধুরি বলেন, ’পৃথিবীতে আমার দেখা একমাত্র দেশ যারা বিভিন্ন ধারার সংস্কৃতিকে উৎসাহ দিতে পৃষ্টপোষকতা দেয় বিনা শর্তে। বহুসংস্কৃতির এই দেশে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকার যুগপতভাবে কাজ করে আসছে। তাই যারা সংস্কৃতি চর্চা করতে চান তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।’
শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে শেখর গোমেজ সাংবাদিক, দর্শকবৃন্দের জন্য ফ্লোর ওপেন করে দেন। সে সময় একজন দর্শক ’কণ্ঠচিত্রণ’র পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখর গোমেজ জানান, সংগঠনটি একটি আবৃত্তি কর্মশালার আয়োজন করবে শীঘ্রই।
শুধু আবৃত্তি কর্মশালায় নয় আরো বিভিন্ন বিষয়ে কর্মশালার আয়োজনের মধ্য দিয়ে ’কণ্ঠচিত্রণ’ বাংলা সংস্কৃতিকে টরন্টোতে এগিয়ে নেবে বলেও জানান তিনি।
নতুন এই আবৃত্তি সংগঠনটির সদস্যরা হলেন শেখর গোমেজ, এলিনা মিতা, আসমা হক , নুসরাত জাহান চৌধুরী শাঁওলী, ববি রব্বানী, হিমাদ্রী রয়।