কারাগারে নয়, জাতীয় পতাকা আর ফুল হাতে দিয়ে ৭০ শিশুকে বাবা-মায়ের কাছে পাঠালেন আদালত। সোমবার (২১ মার্চ) দুপুরে ৯ শর্তে ৫০ মামলায় এ সব শিশুর বাবা-মায়ের জিম্মায় দেয়া হয়।
একসঙ্গে অর্ধশত মামলার রায় দিতে গিয়ে এমন নজির স্থাপন করলেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাকির হোসেন।
জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এমন রায় বলেও জানান আদালত। এই রায়ে শিশুদের সংশোধনের সুযোগ তৈরি হওয়ায় খুশি আইনজীবী ও অভিভাবকরা। দুপুরে আদালত প্রত্যেকের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে বলেন, এই পতাকা বুকে ধারণ করতে হবে। দেশকে সাজাবে তোমরা। দীর্ঘদিন এই মামলা চলে আসায় পড়াশোনাসহ সুন্দর ভবিষ্যতের পথ থেকে ছিটকে যাচ্ছিলো শিশুরা।
এ সব শিশুদের পরিবারের অন্যদের সঙ্গে মামলায় জড়ানো হয়। মারামারি এবং ছোটখাট কিছু চুরির অভিযোগ আনা হয়। ক্ষুদ্র অভিযোগে এ সব শিশুদের আদালতে হাজিরা দিতে হতো। এর ফলে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে। তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়। স্বাভাবিক জীবনে বেড়ে ওঠা হুমকির মুখে পড়ে।
শিশুদের ৯ শর্ত হলো- নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু ভালো কাজ করা এবং ডায়েরিতে তা লিখে রাখা; মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা; সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা; বাবা-মাসহ গুরুজনদের আদেশ মেনে চলা এবং বাবা-মায়ের সেবাযত্ন ও কাজে সাহায্য করা; নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা এবং নামাজ আদায় করা; প্রত্যেককে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা করা; অসৎসঙ্গ ত্যাগ করা ও মাদক থেকে দূরে থাকাসহ ভবিষ্যতে অপরাধের সঙ্গে নিজেকে না জড়ানো।
এ সব শর্ত পালন হচ্ছে কি না তা আগামী এক বছর একজন প্রবেশন কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রতি তিন মাস অন্তর আদালতকে অবহিত করবেন।
সুনামাগঞ্জ জেলার প্রবেশন কর্মকর্তা শফিউর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র অভিযোগে এসব শিশুদের আদালতে হাজিরা দিতে হতো। এখন এ সব মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় শিশুরা পরিবারের সান্নিধ্যে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে এবং সুন্দর জীবন গঠনের সুযোগ পাবে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু আদালতের পিপি হাসান মাহবুব সাদী বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেয়েছে। এর আগেও কয়েকটি মামলায় ১৩৩ শিশুকে প্রবেশনের মাধ্যমে পরিবারের জিম্মায় পাঠান আদালত।