শরীফ হাসান,অটোয়া, কানাডা।
কাল কি ঈদ? নাকি পরশু?
এই প্রশ্নে ফেইসবুক সয়লাব। আমার চার বছর বয়েসী পুত্র অরিক এবারের জন্মদিনে একটি টেলিস্কোপ উপহার পেয়েছে। সন্ধ্যায় সেটি নিয়ে মা-ছেলের ঈদের চাঁদ দেখার সে কী কসরত! দেখে দেশে চাঁদ দেখা কমিটির কথা মনে পড়ে গেল।
ক্যানাডাতে সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটি না থাকায় প্রতিবার ঈদ পালন নিয়ে বিশৃঙ্খলা হয়। মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ইমামদের বেশ কয়েকটি গ্রুপ আছে এবং তারা কখনোই একমত হতে পারেননা। একেক শহরে একেক দিন ঈদ হয় বা একই শহরে দুই দিন ঈদ উদযাপিত হয়।
যাহোক, চাঁদের দেখা না পেয়ে, কাল ঈদ হবেনা জেনে ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে। ছেলের মা একটু আগে ছুটে এসেছে, কালকে নাকি ঈদ। ইমামদের একটি গ্রুপের ঘোষণা সবাই শেয়ার দিয়েছে। খুশির পরিবর্তে তার মেজাজ খারাপ। রান্নার কোন আয়োজন করা হয়নি। আমি বললাম, আয়োজনের কি আছে, বাসায় তো কেউ আসছেনা। এটা ভাবতেই মনটা বিষণ্ণ হলো।
আমাদের প্রজন্ম এমন ঈদ দেখেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঈদ হয়ত এমন ছিল। ঈদের নামাজ, কোলাকুলি, দাওয়াত, খানা-খাদ্য, তুমুল আড্ডা, এর বাড়ি, তার ঘর। এসব ছাড়া ঈদ কিভাবে হয়!
তবে আমার মতে, ঈদের আগে গ্রামের বাড়ি যাবার আনন্দের চেয়ে বড় কিছু নেই। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার বাড়ি ছেড়েছিলাম। এরপর প্রতিবছর দুই ঈদে জীবন বাজি রেখে বাড়ি যেতাম। প্রতিবার নিজেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মনে হত। বিদ্যাসাগর যেমন ভরা দামোদার পাড়ি দিয়ে মায়ের কাছে পৌঁছেছিলেন, তেমন আমিও বাস কাউন্টারের ভিড় মাড়িয়ে, গাবতলী আর ফেরিঘাটের অসীম যানজট পেরিয়ে ৬ ঘণ্টার যাত্রা ২০ ঘণ্টায় শেষ করে প্রায়ই ঈদের আগে মধ্যরাতে বাড়ি পৌঁছতাম। দেখতাম আম্মা জেগে আছেন।
ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, বিরক্ত আমি আম্মাকে দেখে সব ভুলে যেতাম। সে হাসিমুখ যে দেখেছে সে হাজার বার ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবে। রেলগাড়ির ছাদে, লঞ্চের ডেকে, বাসের বাম্পারে ঝুলে সে ঈদের আগে বাড়ি যাবে। পৃথিবীর কোন কিছুই তাকে আটকাতে পারবেনা। আর তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় কোভিড-১৯ বিপর্যয়ের মধ্যেও ঈদ উপলক্ষ্যে লাখো মানুষের গ্রামে ফেরার তাড়া দেখে আমি অবাক হইনি, শঙ্কিত হয়েছি।
ক্ষতি যা হবার হয়েছে। এখন একটাই প্রার্থনা, এই মানুষগুলো যেন একটু নিয়ম মেনে এবারের ঈদটা পালন করেন। গ্রামে রোগটার বিস্তার ঠেকাতে সচেষ্ট থাকেন। ঈদগাহে ঈদের জামাত, কোলাকুলি, খানা-পিনা আর খোশগল্প সামনের ঈদের জন্য তোলা থাক। “মদীনার ঘরে ঘরে আনন্দ” – এই আনন্দ এবারের মত নিজ নিজ গৃহে সীমাবদ্ধ থাক। এটাই এই ঈদের “আসমানি তাগিদ।”
কাল ঈদ হোক বা না হোক, ঈদ মোবারক!