জাহাঙ্গীর নাকির
এই মুহুর্তে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ মহামারী করোনা ভাইরাস। এটি সম্পুর্ণ নতুন একটি উপসর্গ। এ পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে আজকের সর্বশেষ তথ্য মতে, সারা বিশ্বে ১৯৯ দেশে আক্রান্ত ৮,৪৫,৮২৬ এবং মারা গেছে ৪১,৪২৯ জন। বাংলাদেশের সরকারি তথ্যে জানা যায় আক্রান্ত ৫১মারা গেছে ৫ জন।
বাংলাদেশে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষিত হয়েছে তবে এই ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছিন্নমুল মানুষেরা। এদের কঠিন অবস্থা ভাইরাসের চেয়ে ভংকর ক্ষুধা নিবারন। তারচেয়ে বেশি সমস্যাগ্রস্ত আমাদের পথশিশুদের অবস্থা। বিশেষ করে যারা রাজধানী ও তার পাশের বিভিন্ন স্থানে বাইরে অবস্থান করছে।
এপর্যন্ত সরেজমিনে গত একসপ্তাহে নিজে ঘুরে এবং বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত পথশিশু সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক (বেশি হতে পারে)। এই সংখ্যা এলাকাভিত্তিক টংগীর পাশে ২৫-৩০, গাবতলি ১৫-২০, কমলাপুর ৪০, সদরঘাট ২৫-৩০, মহাখালি ১৫, নাট্যমঞ্চে ২০। মুলত এদের বিচরন এসব এলাকায়। ভীষনভাবে স্বাস্থ্য ঝুকিতে আছে এরা। বেশিরভাগই খাদ্য, আশ্রয় আর স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। অনেক অস্থায়ী শেল্টার হোম বন্ধ। যেগুলো চালু আছে তারা বাইরের শিশুদের নিতে চাচ্ছে না নিরাপত্তা বিবেচনায়।
এমূহুর্তে যেসব হোম চালু আছে মায়ের আচল, এসিডি, ডাম, লিডো, সাভারে, একমাত্রা, শিশুর জন্য আমরা, এফএফসি, শিশু পল্লী প্লাস, এস ও এস শিশুপল্লী, চেঞ্জ দ্য লাইভস, আপন ফাউন্ডশন তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালু আছে। সরকারের তত্বাবধানে কাওরান বাজার এবং কমলাপুর ১০ জন মেয়েশিশু সহ ১১৫ জন আছে বলে জানা গেছে।
অধিকাংশ শেল্টার হোম যারা কমিউনিটি সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে তারা পড়েছে বিপাকে। বিশেষজ্ঞ মতামতে বাইরে অবস্থান কারি শিশুরা সবচেয়ে ঝুকিতে আর নিজেরা সংক্রমণের শিকার হয়ে অন্যদেরও স্বাস্থ্য ঝুকিতে ফেলবে। মজার স্কুল, অভিযাত্রীক, কালার অব প্যারাডাইজ, সম্ভাবনা, ছায়াতল, এক রংগা এক ঘুড়ি, লিডো, ব্রাক, ডাম, ফাপা সীমিত খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে আবার কেউ কাজ শুরুর লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু যথেষ্ট নয়।
পথশিশুদের সংগঠনের নেটওয়ার্ক স্ক্যান বাংলাদেশ কিছু সমমনা সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে এদের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসছে।
সবচেয়ে বড় সংকট আর্থিক এবং টেক্নিক্যাল সহায়তা।
স্বেচ্ছাসেবকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম আর পরিবহন।
পথে অবস্থান কারি আর শ্রমজীবী শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য সহায়তা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এই মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরি। এই শিশুরাই এখন বেশি ঝুকিপূর্ণ।
আমাদের বোন Liza Asma Akhter, চেয়ারম্যান কালার অব প্যারাডাইজ, তার মনোবেদনা ভরা লিখা পোস্ট নিম্নে হুবহু তুলে ধরলাম, পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুটা ধারনার জন্য। যিনি মানবতার কাজে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে যান কোন কিছু না ভেবেই।
“যেহানেই যাই পুলিশ খালি দোড়ান মারে,কয় ঘরে যাও,ঘরে যাও, ধরতে পারলে মাইরও দেয়, আমাগো তো ঘর নাই,আমরা কোন ঘরে যামু…!!??
আমার কাছে জবাব নেই….
হুকনা খাওন দিয়া কি করুম,রান্দুম কই, ভাত দেন ভাত খাইয়া যামুগা..! উপহাসের হাসি হেসে শেষ জবাবটা দিলো…
একলগে বইলে কি অইবো,আমরা তো একলগেই থাকি,খাই,ঘুমাই,…ইস্টিশনে,ফুটপাতে… যেইখানেই জায়গা পাই ওইখানেই আমরা ঘুমাইয়া থাকি…!!
দিনের বেলায় ঘুরতে ঘুরতে দিন যায়গা,রাইতে ঘুম আহেনা,পেট মোচড়ায়…আমাগরে রাইতে খাওন দিবেন..?
লিখতে পারছিনা আর, ঘরহীন মানুষের জন্য ঘর আমি দিতে পারবোনা,কারন আমার নিজেরই ঘর নেই!
তবে ওদের জন্য দুই বেলা খাবার আমি রান্না করে দিচ্ছি,সামনের দিন গুলোতেও দেয়ার আশা রাখি, যতদিন পারি….
দোয়া করবেন আমার জন্য…
যেন সুস্থ্য থাকি..
যেন সাহস না হারাই…
এই লড়াইয়ে একা টিকে থাকা বড় কঠিন…!”
স্ক্যান বাংলাদেশ প্রস্তুত। শুধু প্রয়োজন আপনাদের সাহায্যের হাত। তবেই নিরাপদ থাকবে আমাদের শিশুরা সেই সাথে দেশ এবং দেশের মানুষ।