থাকেন জীর্ণ ঘরে। একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করে কিছু টাকা জমাতে থাকেন বছরের পর বছর ধরে। কখনো টিনের কৌটায়, কখনো ব্যাংকের হিসাব নম্বরে টাকা জমাতেন তিনি। এভাবে গত ৪০ বছরে তিনি জমিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা। সেই টাকা তিনি দান করে দিয়েছেন ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায়। মহানুভব এই মানুষটির নাম মোহাম্মদ আলী।
৭০ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলীর জন্ম চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার ফরহাদাবাদে। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর হামজার বাগ এলাকার পৈত্রিক বাড়িতে।
মোহাম্মদ আলী রোববার (১৭ এপ্রিল) বলেন, ‘আমি রেনেটা কোম্পানিতে (সাবেক ফাইজার) বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি শুরু করি ১৯৭৮ সালের দিকে। ১৯৮০ সাল থেকে আমি বেতন থেকে সামান্য কিছু টাকা সাশ্রয় করতে শুরু করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের তখন যৌথ পরিবার। বেতনের পুরো টাকা ব্যয় হতো না। তাই বেতনের টাকা থেকে সঞ্চয় করার পরিকল্পনা করি। শুরুতে আমি টিনের কৌটায় এই টাকা সঞ্চয় করতাম। ২০০০ সাল নাগাদ বেশ কিছু টাকা জমে যাওয়ায় ‘কাজী অ্যান্ড হোসনে ফাউন্ডেশন’ নামে একটি হিসাব খুলে ব্যাংকে টাকা জমা করতে থাকি। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে জমানো টাকা থেকে কিছু টাকা এতিমখানা ও মাদরাসাতেও দান করেছি।’
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি একজন বিক্রয় ব্যবস্থাপক হিসেবে রেনেটা কোম্পানি থেকে অবসর গ্রহণ করি। কিন্তু চাকরিকালীন বিভিন্ন চিকিৎসক এবং হাসপাতাল ভিজিট করার কারণে মানুষের দুর্ভোগ ও অসহায়ত্ব দেখে অনেক খারাপ লাগতো। এই মানুষগুলোর জন্য কিছু করার জন্য মনের মধ্যে ব্যাকুলতা কাজ করতো। কয়েক বছর আগেই আমার নানা, পরে আমার মা এবং আমার এক ভাগ্নি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আমি কাছে থেকে দেখেছি ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষের কষ্ট, বড় অঙকের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে পরিবারগুলোর অবস্থা দেখেছি। এসব দেখেই আমার জমানো টাকা আমি ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।’
গত সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির নামে একটি ওয়াক্ফ হিসাব খুলে এই টাকা জমা করে দেন মোহাম্মদ আলী। টাকা জমার যাবতীয় কাগজপত্র রোগী কল্যাণ সমিতির কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছেন তিনি ইতোমধ্যে। এই টাকা ওয়াকফ হিসাবে জমা থাকবে। তার স্বজন বা সমিতি কেউ মূল টাকা তুলতে পারবে না। শুধুমাত্র এই টাকার মুনাফা দিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতি ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় ব্যয় করতে পারবেন।
রোগী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ সাহা বলেন, ‘আমরা কখনো কল্পনাও করিনি এই ব্যাক্তি তার দীর্ঘদিনের সঞ্চয় করা ৫০ লাখ টাকা আমাদের ফান্ডে দান করবেন। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম ৫০ হাজার টাকা দান করবেন। কিন্তু কাগজপত্র হাতে পেয়ে আমরা রীতিমতো হতভাগ। তার দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে জমানো ৫০ লাখ টাকা ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য দান করে দিয়েছেন।
দুই পুত্র সন্তানের জনক মোহাম্মদ আলী দুই সন্তানকেই বিয়ে করিয়েছেন। দুই ছেলেই ব্যবসা করেন। চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগে মোহাম্মদ আলীর একতলা পৈত্রিক বাড়ি। সেখানেই পুরো পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি।
৫০ লাখ টাকা দান করার বিষয়ে পরিবারের সবাই সম্মতি দিয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়েই তিনি টাকাগুলো ব্যাংকে জমা করেছেন।’