ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্টি খরার কারণে বিশ্বব্যাপী শস্য, রান্নার তেল, জ্বালানি ও সারের দাম বেড়েছে। মৌলিক খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি ইন্দোনেশিয়া থেকে ইরান পর্যন্ত বিক্ষোভকে উস্কে দিচ্ছে।
যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় গমের দাম ৫২ শতাংশ বেড়েছে এবং পাম অয়েলের দাম জানুয়ারি থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, দাম বৃদ্ধি আফ্রিকায় বিদ্যমান খাদ্য সঙ্কট পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করবে এবং শিশুদের ‘বিপর্যয়কর’ অপুষ্টির কারণ হতে পারে। যেসব দেশে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বিক্ষোভ হয়েছে বা হচ্ছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স সেসব দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে।
শ্রীলংকা: স্বাধীনতার পর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। জ্বালানি তেলের জন্য দেশটির বাসিন্দাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেট্রোল স্টেশনগুলোতে অপেক্ষা করতে হয়। রিজার্ভ সঙ্কটের কারণে কাগজ আমদানি করতে না পারায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় সরকার। সরকার বিরোধী ধর্মঘট ও বিক্ষোভ বাড়তে শুরু করলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে সৃষ্ট সরকারবিরোধী বিক্ষোভের কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
সুদান: মার্চ মাসে, সুদানের মাদানী শহরে একজন বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মিছিল করেছিল। ওই অভ্যুত্থানের কারণে চরম অর্থনৈতিক মন্দা পড়তে হয় সুদানকে। গত বছরের অক্টোবরে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সুদানের মুদ্রার মান এক তৃতীয়াংশ কমেছে, যা জ্বালানি, খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্যের দাম দ্রুত বাড়িয়ে দিয়েছে।
গ্রিস: হাজার হাজার গ্রিক শ্রমিক এথেন্সে মে দিবসের সমাবেশে জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। গ্রিসের বার্ষিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি মার্চ মাসে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে, যা ২৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।
আর্জেন্টিনা: প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজের বিরুদ্ধে ২৩ এপ্রিল বুয়েনস আয়ার্সে হাজার হাজার কৃষক প্রতিবাদ করেছিল। ব্যাপক মূল্যস্ফীতি রোধে এবং খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্টের গৃহীত নীতিগুলো কৃষি খাতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
ইরান: মে মাসের প্রথম দিকে সরকারের ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে ইরানে বিভিন্ন ধরনের ময়দাভিত্তিক খাদ্যদ্রব্যের দাম ৩০০ শতাংশ বেড়ে যায়। একই সময় সরকার কিছু মৌলিক পণ্য, যেমন-রান্নার তেল এবং দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বাড়ায়। দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ চলাকালে কর্তৃপক্ষের কাছে আরও চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাঁড়ায় পেনশনভোগীদের বিক্ষোভ। তারা ৬ জুন ইরানে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন।
চিলি: ২৫ মার্চ চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চতর খাদ্য উপবৃত্তির দাবিতে মিছিল করেছে।
সাইপ্রাস: সাইপ্রিয়ট কৃষকরা উচ্চমূল্য এবং উৎপাদন সমস্যার প্রতিবাদে ১৮ মে রাজধানী নিকোসিয়ায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে কয়েক টন দুধ ঢেলে দিয়েছিল। এসময় তারা খড়ও পুড়িয়েছে।
গিনি: গত বছর সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। এরই মধ্যে জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় সহিংসতায় গিনির রাজধানীতে ২ জুন একজন নিহত হন। পেট্রলের দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিবাদে লোকেরা রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় এবং টায়ার জ্বালিয়ে দেয়। এসময় কোনাক্রি শহরে রাতারাতি বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়।
ইন্দোনেশিয়া: পাম অয়েল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার কৃষকরা ১৭ মে জাকার্তায় বিক্ষোভ করেছে। ক্ষুদ্র কৃষকদের একটি গ্রুপ জানায়, নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ২৫ শতাংশ পাম অয়েল মিল ক্ষুদ্র কৃষকদের কাছ থেকে পাম ফল কেনা বন্ধ করে দেয়। আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ভিত্তি মূল্যের চেয়ে ৭০ শতাংম কম দামে মিল মালিকরা পাম ফল কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল।
কেনিয়া: অধিকারকর্মীরা ১৭ মে রাজধানী নাইরোবিতে বিক্ষোভ করে। তারা জীবনযাত্রার খরচ কমাতে এবং খাদ্যদ্রব্যের মূল্য কমানোর দাবি জানিয়েছিল।
লেবানন: লেবাননের ট্রাক ও বাস চালকরা জানুয়ারিতে দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে। বিক্ষোভকারীরা ২০১৯ সাল থেকে চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য রাজনীতিবিদদের অভিযুক্ত করে।
ফিলিস্তিন অঞ্চল: খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ঊর্ধ্বগতির দামের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় ৬ জুন ফিলিস্তিনি পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর খাদ্যের দাম ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।