খোলা বাজারে ডলারের দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে দেশের মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, মানি এক্সচেঞ্জগুলো ১১৫ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনবে। আর বিক্রি করবে সর্বোচ্চ ১১৭ টাকায়। এর চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে খোলা বাজারে ডলারের দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. শেখ হেলাল শিকদার।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার খোলা বাজারে আন-অফিসিয়ালি ডলারের দাম বেড়ে ১২৭ থেকে ১২৮ টাকা হয়, যা রেকর্ড সৃষ্টি করে। ওই দিন ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশ (এবিবি) ডলার সংক্রান্ত নির্দেশনা ঠিকমতো বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনুরোধ করে। এর পরেই মঙ্গলবার মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনকে খোলা বাজারের ডলারের দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই দিন বৈঠক শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কটে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমাদের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক চাইলে রেমিট্যান্সের ডলার ১১৬ টাকায় পর্যন্ত কিনতে পারবে। কিন্তু, ১১৭ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না। তারপরও যারা নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন, তাদের সাথেও কথা হয়েছে। আমরা একত্রে বাজারটাকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসব।
আমদানিকারকরা নির্ধারিত দামে ডলার পাচ্ছে না, এ অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, যদি কোনো আমদানিকারকের এরকম অভিযোগ থাকে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসে জানাতে হবে। তাছাড়া, সব বিষয়ে লাইন বাই লাইন লিখিত নির্দেশনা দেওয়া যায় না।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলো এখনো ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনা অব্যাহত রেখেছে। গত সোমবারও ১২৪ টাকা দরে রেমিট্যান্সের ডলার কিনেছে কিছু বেসরকারি ব্যাংক। যাদের আমদানি ও বিদেশি ঋণের দায় মেটানোর চাহিদা ছিল, তারাই এভাবে ডলার কিনেছে। যদিও আমদানি দায় মেটাতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম এখনো ১১১ টাকা।
ব্যাংকগুলোর ঘোষণা অনুযায়ী, প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে আছে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। পাশাপাশি কোনো কোনো ব্যাংক আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে, ডলারের সর্বোচ্চ দাম দাঁড়ায় ১১৬ টাকা। রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে প্রবাসী আয় কিনছে। আবার বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংক এই প্রণোদনার পাশাপাশি আরও বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত মার্চের পর থেকে দেশে ডলার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সঙ্কট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু, তাতে সঙ্কট আরও প্রকট হয়। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় তারা সভা করে ডলারের রেট নির্ধারণ করে আসছে। এবার খোলা বাজারে ডলারের দর নির্ধারণে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে।