গাজা উপত্যকার দক্ষিণ-পশ্চিমে ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
কিন্তু ইসরায়েল এই মৃত্যুর জন্য সাহায্যকারী ট্রাককে ঘিরে থাকা ভিড়কে দায়ী করেছে এবং বলছে যে নিহতরা পদদলিত হয়ে মারা গেছে।
এ ঘটনায় অন্তত ১০৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং অন্তত ৭০০ জন আহত হয়েছে। কিন্তু গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১২ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৫০ জনেরও বেশি। গাজা শহরের পশ্চিমে আল-নাবুসি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
এ ঘটনায় ফিলিস্তিনি নেতারা এবং প্রতিবেশী দেশগুলো গাজায় সহায়তা সংগ্রহকারী নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যবস্তু করায় ইসরায়েলের নিন্দা করেছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ‘ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনী কুৎসিত গণহত্যা চালাচ্ছে।’
আব্বাসের অফিসের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াফা বার্তা সংস্থা বলেছে, ‘এই বিপুল সংখ্যক নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের যারা হত্যা করেছে তারা গণহত্যামূলক যুদ্ধের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সম্পূর্ণ দায় দখলদার ইসরায়েলের এবং আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেসামরিকদের রক্ষা করার একমাত্র উপায় হিসেবে, যুদ্ধবিরতি জারি করার জন্য জরুরি হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এই হামলাকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধী ইহুদিবাদীদের জঘন্য গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে।
এক বিবৃতিতে এই গোষ্ঠীটি বলেছে, ‘সাহায্য-প্রার্থীদের ওপর মারাত্মক আক্রমণ যুদ্ধাপরাধের ইতিহাসে নজিরবিহীন।’
গাজায় গণহত্যা, জাতিগত নির্মূল এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বন্ধ করতে ইসরাইলকে বাধ্য করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস।
স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী এএফপিকে বলেন, গাজা শহরের পশ্চিম নাবুলসি গোলচত্বরে ত্রাণের ট্রাকের দিকে খাবারের জন্য মরিয়া হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন। সে সময় এই সহিংস হামলা চালানো হয়।
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ত্রাণ বোঝাই ট্রাকগুলো কিছু সেনা ট্যাংকের খুব কাছাকাছি চলে আসে। ওই সময় হাজার হাজার মানুষ ট্রাকের দিকে ছুটে আসেন। তারা ট্রাকগুলোতে হামলে পড়েন। লোকজন ট্যাংকের খুব কাছে চলে আসায় ইসরায়েলি সেনারা ভিড় লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
পরে ইসরায়েলি একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে বলেছে, লোকজন এমনভাবে ইসরায়েলি বাহিনীর কাছাকাছি এসেছিল, যা সেনাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরে গুলি ছুঁড়ে হুমকি মোকাবিলা করা হয়েছে।
তবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, ওই এলাকায় কোনো ধরনের গোলাবর্ষণের কথা তাদের জানা নেই। পরে সেনাবাহিনী বলেছে, উত্তর গাজায় ত্রাণ পরিবাহী ট্রাক এলে ধাক্কাধাক্কি ও পদদলিত হয়ে কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশটির সশস্ত্রবাহিনী ভিড়ের মাঝে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে ‘কয়েকজন ব্যক্তির’ ওপর গুলি চালিয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একাধিক ট্রাকে করে অনেক মৃতদেহ পরিবহন করা হচ্ছে এবং অনেক আহত ব্যক্তিকে দেখা যায়। তবে ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি হাসপাতালের মেঝেতে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।