প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও শেখ রেহানার দেবর মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিককে মাফিয়া বলে আখ্যা দিয়েছেন বর্তমান সেনাপ্রধানের বন্ধু এবং কোর্সমেট কর্নেল (অব:) শহিদ উদ্দিন।
সম্প্রতি সাংবাদিক ড.কনক সরওয়ার এর ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকার প্রদানকালে কর্নেল (অব:) শহিদ উদ্দিন বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, বাংলাদেশের সামরিক চিত্র বিশেষত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থা এবং বাংলাদেশে গুম খুন আর লুটপাটের হোতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারিক সিদ্দিককে নিয়ে নানান মন্তব্য করেছেন। ভিডিওটিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও কর্নেল (অব:) শহিদ উদ্দিনের বিভিন্ন সময়ের ফোনালাপও প্রকাশ করা হয়।
যা থেকে বেরিয়ে এসেছে নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য। এবং সিদ্দিকের সব ধরনের অপকর্মে যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সায় রয়েছে সেটাও সেনাপ্রধানের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভিন্নমত এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল দমন করবার জন্য মানুষ গুম করার মত জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়মিত সংঘটিত হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ পর্যন্ত গুমের ঘটনা ঘটছে অহরহ।
টেলি-কথোপকথনে সেনাপ্রধান আজিজের মুখে প্রকাশ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিটি গুম ও গুপ্ত খুনের সাথে জড়িত শেখ হাসিনার উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক। কথোপকথনে প্রসঙ্গক্রমে জেনারেল আজিজ তাঁর বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলেন -তারিক সিদ্দিক সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে এবং গুম, খুন ও যত কুকীর্তি আছে তা জেনারেল জিয়াউল আহসান ও সাইফুল আবেদিনকে দিয়ে করায়। তারিক সিদ্দিকের খুব শক্ত অবস্থানে আছে এবং তাকে সন্তুষ্ট রেখেই চলতে হয়। কারণ সে বিগড়ে গেলে কেউ থাকতে পারবে না, আজিজ যোগ করেন। অপরপ্রান্তে কর্নেল (অব:) শহিদ খান তখন বলেন, “জিয়াকে দিয়া তো এগুলো আগে থেকেই করছে।” সেনাপ্রধান আজিজ তখন বলেন, “এখনো করায়। দোস্ত এখনো করায়।
সেনাপ্রধান আরো বলেন আমি জিয়াকে চেঞ্জ করার জন্য একদম উপরে প্রস্তাব নিয়ে গেছিলাম কিন্তু কোন লাভ হয় নি। এই কথোপকথন থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে সকল গুম খুনের হোতা তারিক সিদ্দিক এবং জিয়াউল আহসান। এবং তাদের এই মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পূর্ণ সায় রয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জিয়াউল আহসানকে র্যাবের উপ-প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও তারিক সিদ্দিক এবং জিয়াউল আহসান কর্তৃক গুম-খুনের অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেনাপ্রধানের টেলি-কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর এটা নিশ্চিত হওয়া গেল যে, প্রকৃতপক্ষেই জেনারেল জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে দেশে গুম ও গুপ্ত হত্যা গুলোর ঘটনা ঘটেছে। আর এগুলোর মূল নিয়ন্ত্রক হলেন, শেখ হাসিনার আত্মীয় ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক।
শুধু তাই নয়, সেনা প্রধানের কথায় আরো উঠে এসেছে তারিক সিদ্দিককে সন্তুষ্ট না রাখতে পারলে সেনাবাহিনীতে কেউ চাকুরীতে থাকতে পারে না। জেনারেল তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিভাবে বিভিন্ন ব্যবসা হাতিয়ে নিচ্ছেন তার বর্ণনাও এই টেলি-কথোপকথনে এবং ভিডিওটি হতে জানা যায়। ক্ষমতাসীনদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে হাজারো কোটি টাকা কিভাবে ভাগ বাটোয়ারা হয় সে তথ্য উঠে আসে এতে। তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী মূলধন ছাড়াই প্রভাব খাটিয়ে অন্যের ব্যবসায় অর্ধেক মালিকানা নেন। বন্ধু কর্নেল (অবঃ) শহিদ খানের টেলি-কথোপকথনে সেনাপ্রধানকে জানান যে, তিনি কোন পুঁজি ছাড়াই ব্যবসার অর্ধেক মালিকানা তারিক সিদ্দিকের স্ত্রীকে দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর পুরো ব্যবসাই দখলে নিয়ে নেন তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী। বিরোধের জের ধরে এক সময়ে তারিক সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ শহিদ খান ব্যবসা হারিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়।
বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ মহলের মদদে পরিবারসহ কর্নেল শহিদকে ইন্টারপোলের রেড এলার্ট দেয়া হয়েছিল এটাও উঠে আসে তাদের কথোপকথনে। এমনকি শহিদ খান অভিযোগ করছেন, অস্তিত্বহীন জমি দখলের অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। যে জমির কোন অস্তিত্ব বাস্তবে নেই। সেই বানোয়াট মামলায় তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডও দেয়া হয়েছে।
কর্নেল শহিদ আলোচনায় আরো উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে তিনি একবার দেশে গিয়েছিলেন। তখন জেনারেল আজিজ এবং জেনারেল নাজিম উদ্দিন রাতে তাঁর বাসায় দেখা করতে আসেন। তারা দুইজনেই আসেন সিভিল ড্রেসে, ব্যক্তিগত গাড়িতে। তিনি উল্লেখ করেন, তারিক সিদ্দিকের ভয়ে তারা সেনাবাহিনীর গাড়িতে আসেননি। কারণ, তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী শাহিনা সিদ্দিক দুই জেনারেলকে কর্নেল শহীদের সঙ্গে দেখা করতে নিষেধ করেছিলেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জেনারেল তারিক সিদ্দিক এবং তাঁর স্ত্রী সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সেনাপ্রধান আজিজ ও কর্নেল (অব:) শহিদ উদ্দিনের কথোপকথনে আরো উঠে আসে “এনটিএমসি” নামে এক সংস্থার কার্যক্রমের কথা। এনটিএমসি হল, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন সেল। এটা মূলত অনলাইনে সরকারবিরোধী কোন কাজ, সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা করা হলে তা নিয়ন্ত্রণ করে। সেনাপ্রধান বলেন এই সংস্থা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আন্ডারে হলে নিয়ন্ত্রণ করে জেনারেল তারিক সিদ্দিক। বিগত ১২ বছরের এক দলীয় শাসনে শেখ হাসিনা শুধু তাঁর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য এক সময়ের সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি আত্মসম্মানহীন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিগত বাহিনীতে পরিণত করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কোন রকমের পেশাদারিত্ব আর অবশিষ্ট নাই। এই বাহিনীর কর্মকর্তারা সবাই ফ্যাসিবাদী সরকার প্রধানের মন যুগিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে বৈধ এবং অবৈধভাবে কেবল নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করে চলেছেন।