তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে কাবুলের রাস্তায় প্রতিবাদ করেছিলেন তারা, তাই তালেবানদের মারধর ও গ্রেপ্তারের শিকার হতে হয়েছিল তাদের। কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়া দূরের কথা, বরং নারী অধিকারের জন্য গোপনে সংগঠিত হচ্ছেন তারা।
এই কর্মীরা রাজধানীর আশপাশে একটি ছোট ভবনের বেসমেন্টে এডুকেশন ফর এমপ্লয়মেন্টের একটি গ্রুপের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সতর্কতার জন্য তাদের সাংবাদিক হিসাবে চিহ্নিত করতে পারে এমন কিছু সঙ্গে রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তারা।
ওই বেসমেন্টে থাকা সোফাতে এই প্রতিবেদক কয়েকজন নারীকে খুঁজে পাওয়ার আশা করেছিলেন। অবশ্য, কিছুক্ষণ পর একে একে অনেক আসতে শুরু করলেন, শেষ পর্যন্ত তাদের সংখ্যা প্রায় ২০ এ গিয়ে ঠেকলো। নিজেদের মিলিত হওয়ার এই গোপন স্থানটিকে লুকিয়ে বেশ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে নারীদের।
১৫ আগস্ট তালেবান ক্ষমতা দখলের পর অনেক নারী রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। মিছিলের সামনে ছিলেন জাহরা মোহাম্মদি।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা সড়কে বিক্ষোভ করেছি, আমাদের আওয়াজ তুলে ধরেছি, নারী স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগান দিয়েছি, বিচারের আহ্বান জানিয়েছি…কিন্তু আমরা নিপীড়নে শিকার হয়েছি এবং বদরি বাহিনী (তালেবানের বিশেষ বাহিনী) আমাদের ঘিরে রেখেছিল। তারা আমাদের কয়েক জন সহকর্মীকে গ্রেপ্তার করে এবং আমাদের ফোন ভেঙে ফেলে। এরপর আমরা বিক্ষোভের ক্ষেত্রে আমাদের কৌশল বদল করেছি এবং বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির মধ্যে বিক্ষোভ করছি।’
বেজমেন্টে থাকা ২০ নারীর মধ্যে মাত্র এক জন সরকারের নিপীড়নের ভয়ে ক্যামেরার সামনে থেকে মুখ লুকিয়েছিলেন। অন্যরাও ভীত ছিলেন, তবে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে তারা মুখ দেখানোকেই বেছে নিয়েছিলেন।
তাদের দাবিগুলো স্পষ্ট : ২০০১ সালে তালেবান শাসনের পর থেকে গত ২০ বছরে যে অধিকারগুলো তারা অর্জন করেছিলেন সেগুলোর পুনরুদ্ধার চান, যার মধ্যে স্বাধীনভাবে কাজ করার বা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অধিকার রয়েছে।
তালেবানরা অবশ্য সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আবার স্কুল খুলে দিয়েছি। তবে মেয়েদের জন্য শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদি বলেন, ‘আমরা ২০ বছর আগের নারী নই, যাদের ২০ বছর আগে তালেবান শাসনামলে ঘরে বসে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল।’
নারীদের এই আন্দোলনের সম্মুখভাবে রয়েছেন দিবা ফারহামান্দ। স্থানীয় একটি এনজিওর তিনি নির্বাহি পরিচালক।
দিবা ফারহামান্দ জানান, কোনো ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া স্বপ্রণোদিত আন্দোলনের অংশ তারা। আফগান ওমেন’স ইউনিটি অ্যান্ড সলিডারিটি গ্রুপের ব্যানারে তারা ২ সেপ্টেম্বর থেকে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।