দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পণ্যের অবৈধ মজুত এবং চাঁদাবাজি রোধে জনপ্রতিনিধিদেরকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রতিটি জেলা থেকে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বর্ধিত সভায় অংশ নেন। প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হয়েছি বলেই বাংলাদেশের এই উন্নয়নটা হয়েছে। তাছাড়া, এত দ্রুত এত উন্নয়ন হতো না। আরো এগোতে পারতাম, কিন্তু কোভিড-১৯ আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন। আজকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। এই যে বৃদ্ধিটা, এটার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
‘বিশেষ করে, পরিবহনের ক্ষেত্রে অথবা পাইকারি মার্কেটে অথবা মজুতদারি—এসব জায়গায় চাঁদাবাজি ও মজুতদারি বন্ধ করতে হবে। এই মজুত কেউ অহেতুক করতে পারবে না। পণ্য আসলেই যেখানে-সেখানে পাইকারি মার্কেট, চাঁদাবাজি, চলার পথে চাঁদাবাজি এগুলো বন্ধ রাখতে হবে। আপনারা এখানে বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা আছেন। আপনাদের এসব দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আবার অহেতুক চাঁদাবাজি বা মজুতদারির কারণে যেন পণ্যের দাম বৃদ্ধি না পায়, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।’
আন্দোলন করে আওয়ামী লীগই জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে, দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, সরকার যে মানুষের সেবক এবং সরকারের দায়িত্ব যে মানুষের কল্যাণ করা, সেটি একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকারের এসেছে, তখনই এ দেশের মানুষ উপলব্ধি করেছে। কোনো দলের একটানা চারবার জনগণের ভোটের ক্ষমতায় আসা, এটা কিন্তু সহজ কাজ না। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করেছি। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত। সমাজের প্রত্যেকটা স্তরের মানুষ কেউ যেন অবহেলিত না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের পরিকল্পনা নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করেছি। এর ফলে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
‘কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো—পঁচাত্তরে জাতির পিতার হত্যাকারী এবং একাত্তরের যুদ্ধপরাধীরা কিন্তু একই সূত্রে গাঁথা। কারণ, জাতির পিতার হত্যার পর খুনিরাই কিন্তু ক্ষমতায় ছিল। আর খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে তাদের বিচার করা যাবে না, সেই আইন পাস করা হয়েছিল। রাজত্ব চলছিল খুনি আর যুদ্ধপরাধীদের। কিন্তু, জনগণই ছিল আমাদের একমাত্র শক্তি। একমাত্র ভরসারস্থল আমাদের আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের অগণিত নেতাকর্মী। তাদের যে ত্যাগ-তিতিক্ষা, তাদের যে অবদান; তার ফলেই কিন্তু আমরা গণতন্ত্র আনতে সক্ষম হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধারাবাহিকভাবে ১৫-২০ বছর ক্ষমতায় একই সরকার না থাকলে উন্নয়নটা হয় না এবং উন্নয়নটা টেকসই করা যায় না। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যে, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। এজন্য আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
নেতাকর্মীদের প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘ভালো কাজ করতে গেলে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হয়। কিন্তু, হয়ে গেলে সেটার সুবিধা তারাও নেয়। তাই, যে যা-ই বলুক, আমাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি, তারা তৃণমূল পর্যন্ত যে ওয়াদা জনগণের কাছে দিয়ে এসেছেন, তা পূরণ করতে হবে। ক্ষমতায় নিজের আখের গোছানোর জন্য না, নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য না। ক্ষমতায় হচ্ছে মানুষের ভাগ্য গড়া, তাদের জীবনযাত্রা উন্নয়ন করার জন্য, এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। ধন-সম্পদ এগুলো দিয়ে কিছু হবে না, নিয়ে যেতে পারবেন না। মানুষ যাতে বলতে পারে, আপনারা তাদের ভাগ্য গড়ে দিয়েছেন, সেই কাজ করবেন।’
দেশি-বিদেশি যত চক্রান্তই হোক, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না, এ প্রত্যয় ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘সব ষড়যন্ত্র চক্রান্ত রুখে দিয়ে এবার যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, তেমনই অর্থনৈতিক উন্নয়নটাও আমরা করে যাবো। ২০৪১ সালে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলাশে গড়ে তুলব।’
বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগণ, জাতীয় সংসদের দলীয় ও স্বতন্ত্র সদস্যবৃন্দ, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যানগণ, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়রগণ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।