সাবরিনা নিপু
প্রিয় বড় জেঠুমনি
সেই কোন ছোটবেলা থেকে তোমাকে লিখবো লিখবো ভেবেছি কিন্তু লেখা হয়ে ওঠেনি। আজ এই মাঝ বয়সে এসে মনে হলো লিখি! আচ্ছা তুমি আমার চিঠির উত্তর দেবেতো? দিও কিন্তু।
জানি তুমি ওখানে একা নও! তোমার দু-ভাই, এক-বোন, বাবা-মা ও বন্ধুরাও আছে তোমার সাথে। আচ্ছা ওখানে কি তোমাদের একসাথে থাকতে দেয় নাকি জেলখানার মতো আলাদা আলাদা সেলে থাকতে দিয়েছে? তোমরা কি একসাথে বসে গল্প করো? আরো কতো কিছু যে জানতে ইচ্ছে করে তার ইয়ত্তা নেই।
সত্যি কথা বলতে তোমার কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই, কারণ আমি তখন ছোট্ট শিশু যখন আল বদররা তোমাকে ধরে নিয়ে যায়। তবে তোমাদের কথা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটা অঙ্গ হয়েই আছে! তোমার কথা, মেঝ জেঠুমণির কথা ছোট বেলা থেকে এতো শুনেছি যে তোমাদের দু’জনকে না দেখে না ছুঁয়েই বলে দিতে পারবো কোনটা কে। একদিন সবাইকে নিয়ে বেড়িয়ে যেও তোমাদের এই ¯^প্নের দেশ থেকে।
তোমার জন্য অনেকগুলো মন খারাপ করা সংবাদ আছে! আচ্ছা প্রথমে মন খারাপ করা সংবাদ না দেই! একটা ভালো খবর দিয়েই বরং শুরু করি । তোমাদের যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু ঘাড়ের ওপর এখনও নিঃশ্বাস ফেলছে হায়েনারা।
তোমাদের দেখা ¯^প্নগুলোর চারপাশে জমেছে ফাংগাস। কবে যে কুয়াশা কেটে গিয়ে নতুন সূর্য উঠবে আমরাও আছি সে প্রতী¶ায়।
যাহ বাবা! তোমাদের যে আসতে বললাম, বাড়িটা চিনতে পারবেতো? সেই পুরোনো লালবাড়িটা কিন্তু এখন আর নেই। যে বাড়ি থেকে তোমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, যে বাড়িতে বাস করতে বাবা, মা, ভাই, বোনের সাথে, তোমার প্রেমময়ী স্ত্রী ও স্নেহের সন্তানেরা থাকতো সেই বাড়িটি আজ আর নেই। নেই তোমার প্রিয় ঘরটি, বিশাল বারান্দাটিও আজ উধাও। আম, বেল আর নারকেল গাছগুলোর শেকড়ও উপড়ে নেয়া হয়েছে। তার জায়গায় জ্বল জ্বল করছে আলো ঝলমলে বহুতল ভবন।
তোমাদের স্মৃতি সংর¶ণে আমরা, তোমাদের পরবর্তী প্রজন্মরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি। তোমরা একটা মাথা মোটা আর ¯^ার্থপর প্রজন্ম রেখে গিয়েছোÑ যারা তোমাদের ¯^প্ন পূরণতো দূর, ¯^প্নগুলোর সঠিক অর্থই এখনও উদঘাটন করতে পারেনি। ওদের ভেতর আমিও একজন। পারলে ¶মা করে দিও এই অবুঝদের।
ইতি
তোমার নিপি