চীনের একটি খ্যাতনামা ব্যাংকে চাকরি করতেন ২৭ বছর বয়সী লিয়াং। যেদিন তিনি চাকরিটি ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেদিন তার বন্ধুরা ঢাকঢোল বাজিয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এমনকি চাকরি থেকে তার ইস্তফার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানোর জন্য পার্টির আয়োজনও করা হয়েছিল।
লিয়াংয়ের বন্ধু তালিকায় থাকা প্রত্যেকেই চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়া তরুণ। পার্টিতে অভিনন্দন জানিয়ে তারা তাকে বলেছিল, চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় সে এখন থেকে আরও সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারবে।
উচ্চবেতনের একটি স্থায়ী চাকরি ছাড়ার ঘটনায় উদযাপন করার বিষয়টি অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে, বিশেষ করে চীনের বর্তমান নাজুক অর্থনীতি ও বেকারত্বের উচ্চ হারের এ সময়ে। কেননা এ ধরনের উচ্চবেতনের চাকরির বাজার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ।
বর্তমানে একটি ক্যাফের সত্ত্বাধিকারী ২৭ বছর বয়সী লিয়াং গত মাসে মাসে চাকরি ছাড়ার পর বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সফল কনটেন্ট নির্মাতা হয়ে উঠেছেন। আগের চেয়ে এখন আরও ভালো জীবনযাপন করতে পারছেন বলে জানান তিনি।
লিয়াং বলেন, ‘চাকরিজীবনে আমি যান্ত্রিক ও একই ধরনের কাজের মধ্যে পড়েছিলাম। এটি আমার অনেক জীবনীশক্তি নষ্ট করেছে। ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগে সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে দমবন্ধ জীবন অনুভব করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘চাকরিজীবনে আপনার উদ্ভাবনী ধারণাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত সৃজনশীলতা একেবারেই হারিয়ে যাবে।’
চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমানে লিয়াংয়ের মতো শত শত তরুণ তাদের চাকরি ছাড়ার পোস্ট করছে। দেশটি চলতি বছর কোভিড-১৯ এর নিষেধাজ্ঞা থেকে সরে এসেছে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পতনের সাথে লড়াই করছে। চাকরি ছাড়ার এই প্রবণতায় যাদের মধ্যে দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশই ২০ বছর বয়সী। চাকরি ছাড়ার পেছনে তারা কম মজুরি কিংবা অসন্তোষের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মাইক্রোসফটের লিংকডইনের মতো চীনের পেশাদারী সামাজিকযোগামাধ্যম হচ্ছে মাইমাই। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির একটি জরিপে এক হাজার ৫৫৪ জন চাকরিজীবী অংশ নিয়েছিলেন। এদের ২৮ শতাংশ ওই বছর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। যারা ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু এখনো দেননি, তাদের সংখ্যা ইতিমধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে।
তরুণদের মধ্যে একই ধরনের আন্দোলন এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছিল, যা ‘গ্রেট রিজাইনেশন’ হিসেবে পরিচিত। নিজেদের চাকরি নিয়ে খুশি না থাকায় দুই বছরে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিল। পশ্চিমা বিশ্বে তরুণদের এই প্রবণতা এখন চীনে শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
চাকরির বাজার ও বেতন কাঠামো তরুণদের খুব কমই সন্তুষ্ট করতে পারছে। সৃষ্টিশীল কাজ খুঁজে না পাওয়া, অতিরিক্ত কাজের চাপ, কর্মস্থলে অমানুষিক শ্রম এবং চাকরির বাজারের করুণ দশা চীনা তরুণদের মধ্যে ক্রমশ হতাশা বাড়িয়ে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা চীনের অর্থনৈতিক যন্ত্রণা আরও বাড়াতে পারে। কারণ ক্রমহ্রাসমান জন্মহার এবং সঙ্কুচিত কর্মশক্তি চীনের ভবিষ্যতের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।