মো. আলতাব হোসেন হলেন বাংলাদেশি একজন গবেষক। ইউনিভার্সিটি অব ইলেক্ট্রনিক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়নার এই গবেষক তৈরি করেছন ‘স্মার্ট চায়না শিক্ষক’ নামের চায়না ভাষা শিক্ষার ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রোগ্রাম।
তার ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রোগ্রামের জন্য সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত চেংদু-ছংছিং বৈদেশিক শিক্ষার্থী অর্থনৈতিক বৃত্ত (Chengdu-Chongqing Economic Circle Competition for International students) প্রতিযোগিতায় ৬০টি দেশকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এর আগে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক সিস্টার সিটি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ইনোভেশন প্রতিযোগিতায়ও তার নির্মিত ওয়েবনির্ভর চীনা ভাষা শিক্ষার সফটওয়্যার (cnpinyin.com) প্রথম পুরস্কার পেয়েছিল।
সাফল্যের এই যাত্রা খুব সহজ ছিল না। অনেক বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই মানুষটি কখনো ভাবতেও পারেননি তিনি একদিন চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন।
প্রত্যন্ত জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংঠী হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেংঠী গ্রামে আলতাফ হোসেনের বাড়ি। বাবা মাদ্রাসা শিক্ষক মো. আতাউর রহমানের সংসারের চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি।
এইচএসসিতে ভালো ফলাফলের জোরে ঝাড়বাড়ী কলেজ থেকে ২০০৬ সালে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ পান। এরপর ২০০৮ সালে চীনের একটি প্রতিনিধি দল হাবিপ্রবিতে গেলে সেখানে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম থেকে তাকে চীনে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। সুযোগ হাত ছাড়া করেননি, সেই বছরই চীনের শেন ইয়াং ইউনিভার্সিটি অব কেমিক্যাল টেকনোলজি গিয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করেন।
তারপর ইউনিভার্সিটি অব ইলেক্ট্রনিক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়নায় মাস্টার্স শেষ করে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিএইচডি ডিগ্রি করেন। আর এখন তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক। তিনি তার কর্মজীবনে বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটন গ্রুপের গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকৌশলী ও চায়না অফিসের প্রধান প্রতিনিধি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশি সফল গবেষক আলতাব হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি চীন দেশে আছেন।
তিনি বলেন, ‘‘দুঃখ-কষ্ট জীবনের অংশ। খারাপ সময় ব্যতিত ভালো সময় কখনো আসবে না। সবসময় আমাদের নিজের কাজ ভালোভাবে চালিয়ে যাওয়া উচিত। সাফল্যের শেষ নেই, তাই এখনো নিজেকে সফল দাবি করি না। যদিও এখানে আসতে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।
ছয় সদস্যের পরিবারে চার ভাই বোন পড়াশোনা করতো, তাই অভাব-অনটন লেগেই থাকত। পড়াশোনার ফাঁকে খুব কম সময় পেয়েছি খেলাধুলার জন্য। অবসর সময় ক্ষেতের শাক সবজি তুলতাম। আমাদের ওইখানে সন্ধ্যাবেলা বাজার বসত, বিকেলে তোলা শাক-সবজি ও গাভীর দুধ নিয়ে বাজারে বিক্রি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি।
বিদেশে থাকলেও দেশের জন্য মন কাঁদে আর তাই সময় পেলে আমি দেশে চলে যাই। করোনার জন্য অনেক দিন হয়ে গেলো দেশে যেতে পারছি না। পরিস্থিতি ভালো হলে অবশ্যই দেশে গিয়ে ঘুরে আসবো।’’