হোসনে আরা জেমী/টরোন্টো
স্মৃতিগুলো আজও আমায় কোথায় যেন আঁকড়ে ধরেছে বারবার। সকাল ৭:৪৫টা রবিবার ১২ই এপ্রিল ২০২০। মেঘলা আকাশ কেমন যেন চারদিক থমথমে। যখন আমি বেজমেন্ট থেকে গাড়ি বের করে রাস্তায় নামি জনশূন্য রাস্তা, একটা দুটো গাড়ি হুস করে চলে যাচ্ছে, হঠাৎ একটি লালবাস দেখা গেল তাও বহুদূরে।
বাস স্টপেজ যেখানে লোক ভর্তি থাকতো একজন দুজন দেখা যাচ্ছে দেখেই বুঝতে পারছি কেউ স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, পারসোনাল সাপোর্ট ওয়ার্কার, যাকে বলা যায় এই অলিখিত যুদ্ধের সম্মুখ যোদ্ধা।কেউ যাবে হাসপাতালে, লংট্রাম কেয়ারে, সিনিয়র হোমে, গ্রুপ হোমে কিংবা মানসিক চ্যালেঞ্জিং মানুষদের কাছে। তারা অধীর আগ্রহে বসে আছে সেইসব সম্মুখ যোদ্ধাদের অপেক্ষায় কখন আসবে মুখে তুলে দেবে পছন্দের খাবার, ঔষধ।
এই অলিখিত যুদ্ধে আমাদের চিনিয়ে দিচ্ছে আপন পর, বন্ধুজন, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলো। আজ তাই মনে পড়ছে “বরিষ ধারা মাঝে শান্তির বারি” জানিনা কবে কবে আসবে সেই শান্তির বারি।আমাদের অনেক অহংবোধ পারিবারিক প্রথার, রীতিনীতির ও সামাজিক বন্ধনের। আমরা দাবী করি এরকম বন্ধন পৃথিবীর অন্য কোন দেশে বা অন্য কোথাও নেই। কিন্তু কি দেখছি! এই অহংবোধেরর এর কারণে এই যুদ্ধে প্রিয় জন আজ লাশের খাতায়। প্রিয় জনের মৃত লাশ পড়ে আছে সৎকারের অভাবে, নিজে বাঁচার তাগিদে আমরা কেউ কারো পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়াতে পারছি না।দাঁড়িয়ে মাথায় হাত দিয়ে সান্তনা দিয়ে দুফোঁটা চোখের জল ফেলবে, সেই পথ বন্ধ জনসমাগমের জন্য।
যতোটুকু জেনেছি যে এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এবং বিভিন্ন দেশের গবেষনায় উঠে এসেছে মানুষ মারা যাবার পর দেহের কোষেরও মৃত্য ঘটে। কভিড-১৯ অনুবীজ (ভাইরাস) শুধু ফুসফুস আক্রান্ত করে। কোন জীবিত রোগীর নাক মুখ থেকে বেরিয়ে আসা হাঁচি, কাঁশি থেকে এই রোগ ছড়ায। এই জীবানু ছড়ায় ছোঁয়াছুঁয়ি ও কাছাকাছি থাকবে তাদের মধ্যেই সংক্রমিত হবে।এই ভাইরাসটি বায়ুবাহিত নয় বলে এটা বাতাসে ছড়ায় না। তাহলে একজন মৃত মানুষের শরীরে কিভাবে ভাইরাস জীবিত থাকবে। আর মৃত মানুষটিতো আর হাঁচি-কাঁশি দেবে না তাইনা!
এখানে আমি এইটুকু বুঝেছি যে, ভাইরাস শুধু জীবিত প্রাণী দেহে বংশবৃদ্ধি করে করে জীবিত কোষে। মানুষ বা প্রাণী যখন মারা গেল তখন তার সমস্ত কোষ মৃত। সেইসাথে ভাইরাসও মৃত। তবে এখানে বলা যেতে পারে মৃত ব্যক্তির শরীরে মৃত্যুর পরেও কিছুক্ষণ কোষগুলি জীবিত থাকে। সেই সময় পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো ।তাই বলবো মৃত ব্যক্তির লাশ যত্রতত্র ফেলে না রেখে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহের শেষ ক্রিয়া সাবধানতার সাথে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী করা প্রয়োজন।
তাই বলব আমরা অবহেলা না করে গণজমায়েত না করে নিয়মকানুন মেনে আক্রান্ত মৃতের সৎকার করি।তাই করোনার মৃত ব্যক্তির ব্যক্তির লাশ আতঙ্কের নয় শুধু দরকার সাবধানতা আর সচেতনতা।করোনা ভাইরাস আমাদের মাঝে একটি নতুন অণুবীজ গবেষকরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে যাচ্ছেন এর গতিবিধি ও চলাচল। স্মৃতি লিখতে গিয়ে চলে গেলাম আমি কোথায়। আমি স্মৃতি ভুলতে চাই না স্মৃতিগুলো আমার রক্তে গান হয়ে বাজে। আর সামনে এগিয়ে যেতে পথ দেখায়।
আমার জীবনের সত্যি আমাকে এখানে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। সংসারের দায়িত্ব পালন করতে করতে কখনো নিজের কথা ভাবা হয়নি। আর যখনই অখণ্ড অবসর পাই ভাবি অনেক কিছুই। আমার একটা ভালো দিক বলি, আমি কষ্ট পেলাম, কেউ আমাকে কষ্ট দিলো সেটা নিয়ে আমি ভাবী না। কিছু সময় আমাকে ভাবায়, আবার নতুন উদ্দ্যমে উঠে দাঁড়াতে পারি। এই সব দুঃখ কষ্ট নিয়ে বসে না থাকে এগিয়ে যাই সময়ের হাত ধরে সামনে। সেই রকমই করোনাভাইরাস আমাদের মাঝে একটি নতুন অণুবীজ গবেষণকরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে যাচ্ছেন এর গতিপথ। তাই বলবো আসবে সামনে নতুন দিন, নতুন আশা, নতুন কিছু।