সাবরিনা নিপু
১. ল্যাপটপে মুভিটা শেষ হতেই আবার এক অবসন্নতা ঘিরে ধরলো আমাকে । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৫টা বাজে । আজ বিকেলটা ভীষন কূঁড়ে ! ফুরোতেই চাইছে না। তাছাড়া ফাল্গুন বা ভ্যালেন্টাইনস ডে’র মতো ইভেন্টগুলো আমার অসহ্য মনে হয়। একটা কল সেন্টারে সামান্য কাজ করা কোনো ছেলের গার্ল ফ্রেন্ড থাকতে নেই এটা বহু আগেই বুঝিয়ে দিয়ে গ্যাছে একজন !
২. এসব দিনগুলোতে তাই নিজেকে খুব সন্তর্পণে শহরের ভিড় ভাট্টা থেকে সরিয়ে রাখার জন্য এই দুইদিন ছুটি নিয়েছি! কিন্তু মুশকিল হলো ঘরে বসে থেকে এক মুভি দেখা আর মাঝে মাঝে ফেসবুকে উঁকি ঝুঁকি মারা এছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না ! বন্ধুরাও তাদের গার্ল ফ্রেন্ডদের নিয়ে বিজি থাকে এই দুটো দিন। তবে ভালোবাসার জন্য বছরে স্পেশালি দুটো দিন থাকবে কেনো এতে আমার ঘোর আপত্তি আছে! ভালোবাসাটা কি শো অফের জিনিস? ভালোবাসা এক অনুভবের নাম! যা এক জীবনে পুরোপুরি প্রকাশ করা যায় না। গোপনে লালন করতে হয় হৃদয়ে।
৩. নাহ, বিছানায় গড়াগড়ি করতে ভালো লাগছে না আর। বারান্দায় বেরিয়ে আসতেই দেখলাম পাশের বাড়ির শ্যামলা মেয়েটি আজ বাসন্তী রঙের শাড়ি আর কপালে খয়েরী টিপ পরে দোতলার ছাদের রেলিং ধরে এদিকেই তাকিয়ে আছে! ওর খোলা চুল বাতাসে উড়ছে, কানের কাছে গুঁজে দেওয়া হলুদ জারবারা এক সোনালী দ্যুতি ছড়াচ্ছে ওর চোখে মুখে ! ওর সঙ্গে বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে, দুর থেকে হাসি বিনিময় ছাড়া কথা হয়নি কখনও ! নামটাও জানা হয়নি আজো । মেয়েটি মিষ্টি হেসে বললো ‘ ফাগুন শুভেচ্ছা জানবেন ‘। আমি শুধু মাথা নেড়ে বললাম শুভেচ্ছা আপনাকেও । ও আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালোনা ! অদ্ভুত এক ছন্দ তুলে চলে গেলো ! যাবার আগে পিছু ফিরে একবার শুধূ হাত নাড়ালো । প্রতিউত্তরে আমিও নাড়ালাম হাত ।
৪.বিকেলের রোদে তখন হলুদ আভা। বিকেলটা এখন আর একটুও একঘেয়ে লাগছে না । উঠোনের ধূলোও যেনো রঙিন লাগছে এখন । ওদের বাড়ির বাগানের গোলাপী করবী আর গেরুয়া পলাশ , টবে উপচে পড়া গাঁদার হলুদ রঙ মাতোয়ারা হয়ে মিশে গ্যাছে গোধুলীর রঙে । দূরে কোথাও কি ডেকে উঠলো কোকিল ?
পাশের বাড়ির টেলিভিশন থেকে ভেসে আসছে একটি পরিচিত গানের সুর… ‘ জানি ফাগুন আমায় ভালবাসেনা …তারে বলে দিও সে যেনো আসেনা আমার দ্বারে ‘ ! কূঁড়ে আর অসহ্য বিকেলটা আজ ভরে উঠলো গানে ।
ফাগুন শুভেচ্ছা।।
ধন্যবাদ।